মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ – ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে যখন পণ্য এবং যাত্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করা হয়, তখন তাকে পরিবহন বলে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হলে দেশেরও উন্নতি হয়।

সংবাদ, তথ্য বা ভাবের আদান-প্রদানকে এক কথায় যোগাযোগ বলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদি যোগাযোগের মাধ্যম।

কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নির্মিত যেসব সড়কপথ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে, সেই সব সড়কপথকে জাতীয় সড়ক বলে। জাতীয় সড়কগুলি যেমন দৈর্ঘ্যে বেশি হয়, তেমনি এগুলি 2-6 লেন বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

রাজ্য সরকার কর্তৃক নির্মিত এবং রক্ষণাবেক্ষণকৃত সড়কপথকে রাজ্য সড়ক বলে। এইসব রাজ্য সড়কগুলি জাতীয় সড়কের সাথে সংযুক্ত থাকে।

ভারতের চারটি প্রধান শহর যথা কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এবং চেন্নাই-এর মধ্যে সংযুক্ত ছয় লেন বিশিষ্ট সড়কপথকে সোনালি চতুর্ভুজ বলে। এটিও কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্মিত।

নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য জাহাজ সমুদ্রের যে পথ অনুসরণ করে, সেই নির্দিষ্ট পথকেই শিপিং লেন বলে।

যেসব নির্দিষ্ট কোম্পানি বা সংস্থার জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, ওইসব সংস্থা বা কোম্পানিকে শিপিং লাইন বলে।

নদী, সমুদ্র, হ্রদের ওপর দিয়ে যে নির্দিষ্ট পথে জলযান চলাচল করে, তাকে জলপথ বলে। জলপথ এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা পরিবহন মাধ্যম।

স্থলভাগের ওপর দিয়ে নির্মিত পরিবহন পথকে স্থলপথ বলে। স্থলপথ দুটি হতে পারে — সড়কপথ ও রেলপথ।

বায়ুমণ্ডলের যে পথ দিয়ে আকাশযান যাতায়াত করে, সেই পথকে আকাশপথ বলে। বিমানপথ বা আকাশপথ নির্মাণে তেমন কোনো খরচ নেই, তবে এই পথে পরিবহন ব্যয় খুব বেশি।

1. সড়কপথ দেশের সর্বত্র গড়ে তোলা সম্ভব। তাই দুর্গম অঞ্চলেও সড়কপথ গড়ে ওঠে।
2. সড়কপথে পরিবহনে ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম।

1. সড়কপথের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় যথেষ্ট বেশি।
2. যানজট সড়কপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে বাধা তৈরি করে।

1. রেলপথের মাধ্যমে ভারী এবং প্রচুর পণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।
2. রেলপথের মাধ্যমে একসাথে অনেক পণ্য কম দামে পরিবহন করা সম্ভব।

1. রেল পরিবহন ব্যবস্থা সর্বত্র চালু করা সম্ভব নয়। নদীবহুল অঞ্চল অথবা উচ্চ পার্বত্য অংশে রেলপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন।
2. একটি নির্দিষ্ট পথেই রেল চলাচল করে বলে প্রয়োজনে পথ পরিবর্তন করতে পারে না।

1. এটি অতি দ্রুত পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করতে পারে।
2. জরুরি অবস্থায় উদ্ধার কাজ এবং ত্রাণকার্যে আকাশপথ পরিবহন প্রধান ভরসা।

1. আকাশপথ পরিবহন খুব ব্যয়বহুল। তাই সবার পক্ষে এর পরিষেবা নেওয়া সম্ভব নয়।
2. আকাশপথে স্বল্প দূরত্বে পরিবহন করা যায় না।

যে পরিকল্পনার মাধ্যমে চার লেন বিশিষ্ট সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন বন্দরগুলোকে সংযুক্ত করা হয়, তাকে বন্দর সংযোগ পরিকল্পনা বলে।

স্থল পরিবহণ ব্যবস্থাকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
1. সড়কপথ, 2. রেলপথ
রেলপথ আবার দুই রকমের হয়:
1. ভূপৃষ্ঠস্থ রেলপথ, 2. ভূগর্ভস্থ রেলপথ

জলপথ পরিবহণ দুই রকমের হতে পারে:
1. অভ্যন্তরীণ জলপথ
2. আন্তর্জাতিক জলপথ
অভ্যন্তরীণ জলপথ আবার দুই রকমের হয়:
1. নদীপথ
2. খালপথ

পাইপলাইন বা নলপথের মাধ্যমে তরল এবং গ্যাসীয় পদার্থের পরিবহণ করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, জল ইত্যাদি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। বিশেষ করে খনিজ তেল পরিবহণে নলপথের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল বা খনি অঞ্চলে গভীর উপত্যকা পারাপারের জন্য নির্মিত দড়ির মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবস্থাকে রজ্জুপথ বলে। এগুলি স্বল্প দূরত্বের হয় এবং সাধারণত ভ্রমণকারী, খাদ্য, জল বা খনিজ দ্রব্য পরিবহণে ব্যবহৃত হয়।

1. পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
2. বর্তমানে মোবাইল ফোন ছবি তোলা, SMS, MMS, ইন্টারনেটের কাজেও বহুল ব্যবহৃত হয়।

যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য আমদানি করা হয় এবং আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় বা ব্যবসা করার পর রপ্তানি করা হয়, তাকে পুনঃরপ্তানি বন্দর বলে। যেমন — কেরালার কোল্লাম বন্দর।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের বিশাল ভান্ডার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়। পৃথিবীর যে-কোনো স্থানে বার্তা, ইমেল, তথ্য, সিনেমা, গান প্রভৃতি খুব দ্রুত পাঠানো যায়। বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল।

পরিবহণ বলতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য ও যাত্রীর স্থানান্তরকে বোঝায়। কিন্তু যোগাযোগ বলতে তথ্যের আদানপ্রদানকে বোঝায়।

যেসব শিল্পে কাঁচামাল বা উৎপাদিত দ্রব্য খুব দূরে আমদানি-রপ্তানি করতে হয় না, সেইসব শিল্পে সড়ক পরিবহণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। মূলত আঞ্চলিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সড়কপথ ব্যয় সাশ্রয়ী এবং লাভজনক পরিবহণ মাধ্যম।

জলপথ পরিবহণ সবচেয়ে সস্তা ও লাভজনক। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জলপথের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। জলপথ পরিবহণ সস্তা এবং সহজলভ্য বলেই বন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলেই বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটে। যে দেশে যত বেশি বন্দর, সেই দেশ তত বেশি শিল্পে উন্নত।

গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রসারিত পথকে গ্রামীণ পথ বলে। এগুলি বেশিরভাগ সময়ে কাঁচা বা মোরাম দিয়ে তৈরি থাকে। এগুলি অপ্রশস্ত এবং আঁকাবাঁকা হয়। গ্রামীণ পথগুলি প্রধান সড়কপথের সাথে যুক্ত থাকে।

আধুনিক যুগে বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে জলপথের গুরুত্ব এত বেশি যে একে উন্নয়নের জীবনরেখা বলা হয়।
1. বহির্বাণিজ্যের বেশিরভাগই জলপথে পরিবাহিত হয়।
2. জলপথে পরিবহণ ব্যয় সবচেয়ে কম।
3. সমুদ্রবেষ্টিত দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে জলপথে বাণিজ্যের ওপর।র।

জলপথে বাণিজ্যের জন্য যে জাহাজগুলি একটি নির্দিষ্ট পথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ করে, তাকে লাইনার বলে। এগুলি দ্রুতগামী এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এর পরিবহণ ব্যয় অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

জলপথের এই জাহাজগুলি ধীরগামী। এগুলোর নির্দিষ্ট কোনো যাত্রাপথ নেই বা নির্দিষ্ট সময় ধরে চলে না। যেখানে যেমন পণ্য পায়, সেগুলো বহন করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। কয়লা, কাঠসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল এই জাহাজগুলি বহন করে।

এইসব জাহাজ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দেশে পরিবহণ করে। যেমন — খনিজ তেল, লোহা ও ইস্পাত, মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি এরা পরিবহণ করে।

দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয়ভাবে ছোটো ছোটো বিমানবন্দরগুলির মধ্যে ছোটো ছোটো বিমান চলাচল করে। অল্প সংখ্যক আসনবিশিষ্ট স্বল্প দূরত্ব অতিক্রমকারী বিমান পরিসেবাকে বায়ুদূত নামে পরিচিত।

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং কখনো কখনো রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যে হেলিকপ্টার পরিসেবা প্রদান করা হয়, তার নাম পবন হংস। খনিজ তেলের ক্ষেত্র এবং অল্প দূরত্বের পাহাড়ি পথে যাতায়াতের জন্য এই হেলিকপ্টার পরিসেবা চালু আছে।

কোনো দেশে বা অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতি 1000 জন লোকের মধ্যে যতজন লোক টেলিফোন ব্যবহার করে, তাকে টেলিঘনত্ব বলে। আধুনিক বা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম সূচক বোঝানো হয় টেলিঘনত্বের মাধ্যমে। টেলিঘনত্ব ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম চালু হয়।

কলকাতা পরিবহণ-পরিসেবার সুব্যবস্থার উদ্দেশ্যে কলকাতা চক্ররেল পরিসেবা চালু আছে। এটি প্রিন্সেপঘাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুর প্রভৃতি স্টেশন থেকে শুরু হয়ে হাসনাবাদ, বারাসত, দমদম, প্রিন্সেপঘাট ও ব্যারাকপুর স্টেশনে এসে শেষ হয়।

রেলপথের মাধ্যমে কৃষিপণ্য বাজার এলাকায় পৌঁছানোর সুযোগ পায়। উৎপাদিত কৃষিপণ্য রেলপথের মাধ্যমে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করা যায়। তেমনি কৃষিতে প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ, কৃষিযন্ত্রপাতি রেল পরিবহণ করে এনে কৃষক এবং কৃষিকাজে সহায়তা করে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে এবং প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো, গো এয়ার, ব্লু ডার্ট এভিয়েশন প্রভৃতি। এ ছাড়া, সরকারি ‘পবন হংস’ সংস্থাটি বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার পরিসেবা দেয়।

ভারতের পরিবহণ ব্যবস্থাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল – 1. স্থলপথ, 2. জলপথ, 3. বিমানপথ, 4. পাইপলাইন ও 5. রজ্জুপথ। স্থলপথকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- [i] সড়কপথ ও [ii] রেলপথ। তেমনি জলপথকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা – [i] অভ্যন্তরীণ জলপথ, [ii] উপকূলীয় জলপথ ও [iii] আন্তর্জাতিক জলপথ। বিমানপথকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা – [i] অভ্যন্তরীণ বিমানপথ ও [ii] আন্তর্জাতিক বিমানপথ।

স্বাধীনতা লাভের পর দেশের প্রতিরক্ষার জন্য সীমান্ত অঞ্চল বরাবর সড়কপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে 1960 সালে ‘সীমান্ত সড়ক উন্নয়ন সংস্থা’ (Border Roads Organisation) গঠন করা হয়। এগুলিকে সীমান্ত সড়ক বলে। বর্তমানে এই রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 32885 কিমি। এই সংস্থার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ পথ নির্মাণ। এটি লেহ্ থেকে তিব্বত সীমান্ত পর্যন্ত গেছে। অন্য একটি পথ হিমাচলের মানালি থেকে লাদাখের লেহ্ শহর পর্যন্ত প্রসারিত। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পথ

ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়সাপেক্ষ পথ হল জলপথ। এর কারণগুলো হল:
1. জলপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়।
2. একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন আকার ও আয়তনের পণ্য পরিবহণ করা যায়, যা অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
3. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জলপথ একটি অবাধ পথ হিসেবে বিবেচিত, যেখানে খালপথ ও নদীপথ ছাড়া বাকি জলপথগুলোতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করা সম্ভব।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুটি প্রধান মাধ্যম হল:
1. ইন্টারনেট – এটি বৈশ্বিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, যা বিশ্বের সব প্রান্তকে যুক্ত করে।
2. মোবাইল ফোন – এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যখন প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের কার্যক্ষমতা কমে যায়, তখন সেই বন্দরকে সহায়তা করার জন্য যে বন্দর নির্মাণ করা হয়, তাকে সহযোগী বা পরিপূরক বন্দর বলে। এই বন্দর মূল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের অনেকটা বোঝা ভাগ করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতা বন্দরের সহযোগী বন্দর হল হলদিয়া বন্দর।

Interconnected Networks শব্দ দুটি থেকে সংক্ষেপে ইন্টারনেট (Internet) শব্দটি এসেছে। এটি একটি বৈশ্বিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা মডেমের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে সংবাদ, তথ্য, ছবি, চিঠিপত্র ইত্যাদি দ্রুত ও সহজে পাঠানো যায়।