এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?
1928 খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ঔপনিবেশেক শাসন, শোষণ ও অনাচারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনে নামে তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছে।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কৃষকদের দুরাবস্থা –
বারদৌলি তালুকের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকরা ছিল নিম্নবর্ণের ‘কালিপরাজ সম্প্রদায়’ ভুক্ত। সীমাহীন দারিদ্র্য ও সামাজিক অবজ্ঞা তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছিল।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কারণ –
নিম্নবর্ণের কৃষক ‘কালিপরাজ’দের উপর উচ্চবর্ণের কৃষক ‘উজালিপরাজ’দের অত্যাচারে কৃষকরা বিক্ষুব্ধ ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার রাজস্বের পরিমাণ 27 থেকে 30 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলোর দাম পড়ে গেলে এবং জলসেচের সংকট দেখা দিলে কৃষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে প্যাটেলের নেতৃত্ব –
স্থানীয় কৃষকদের আমন্ত্রণে গান্ধিবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম কৃষকরা গীতা ও কোরান ছুঁয়ে খাজনা বন্ধের শপথ গ্রহণ করে। সরকারি অত্যাচার ও প্রলোভন উপেক্ষা করে বারদৌলিতে সংঘবদ্ধ আন্দোলন চলতে থাকে।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নারীসমাজের অংশগ্রহণ –
নারীসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বারদৌলি সত্যাগ্রহ স্বতন্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে। সম্ভ্রান্ত পার্শি মহিলা মিঠুবেন প্যাটেল, মনিবেন প্যাটেল, সারদা মেহেতা প্রমুখ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। অনেক সময় মিটিং-মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি পুরুষের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যেত। বারদৌলির মহিলারাই বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘সর্দার’ অভিধায় ভূষিত করেন।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রভাব –
সর্বাত্মক আন্দোলনের চাপে সরকার শেষপর্যন্ত বর্ধিত রাজস্বে হার 6.03 শতাংশ ধার্য করলে আন্দোলন প্রত্যাহৃত হয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মন্তব্য –
ভারতের অগনিত কৃষক বিদ্রোহের ভিড়ে বারদৌলি সত্যা-গ্রহ এক স্বতন্ত্র স্থানের অধিকারী।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?
1928 সালে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে কৃষকরা ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার, শোষণ ও রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিল, তাকেই বারদৌলি সত্যাগ্রহ বলা হয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রধান কারণ কী ছিল?
বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রধান কারণ ছিল –
1. ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাজস্ব 27% থেকে 30% পর্যন্ত বৃদ্ধি।
2. উচ্চবর্ণের ‘উজালিপরাজ’ সম্প্রদায়ের দ্বারা নিম্নবর্ণের ‘কালিপরাজ’ কৃষকদের উপর অত্যাচার।
3. আন্তর্জাতিক বাজারে তুলোর দাম পড়ে যাওয়া ও জলসেচের সংকট।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
গান্ধীবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেল এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নির্দেশনায় কৃষকরা খাজনা বন্ধের শপথ নেয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারীদের ভূমিকা ছিল –
1. নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলন শক্তি অর্জন করে।
2. মিঠুবেন প্যাটেল, মনিবেন প্যাটেল, সারদা মেহেতা প্রমুখ নেত্রী সক্রিয় ভূমিকা নেন।
3. নারীরাই বল্লভভাই প্যাটেলকে “সর্দার” (নেতা) উপাধি দেন।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের ফলাফল কী ছিল?
বারদৌলি সত্যাগ্রহের ফলাফল ছিল –
1. ব্রিটিশ সরকার চাপে পড়ে রাজস্ব বৃদ্ধির হার 6.03% -এ কমিয়ে আনে।
2. কৃষকদের সংগঠিত আন্দোলনের শক্তি দেখিয়ে দেয়।
জাতীয় কংগ্রেসের বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি মনোভাব কেমন ছিল?
জাতীয় কংগ্রেসের বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি মনোভাব ছিল –
1. কংগ্রেস এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল এবং বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
2. এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করে।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
বারদৌলি সত্যাগ্রহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল –
1. এটি ছিল একটি অহিংস কৃষক আন্দোলন, যা গান্ধীজির সত্যাগ্রহ নীতিকে অনুসরণ করেছিল।
2. এটি প্রমাণ করেছিল যে সংগঠিত কৃষক আন্দোলন সরকারি নীতিকে পরিবর্তন করতে পারে।
3. পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কৃষকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বারদৌলি সত্যাগ্রহ – টীকা লেখো। অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বারদৌলি সত্যাগ্রহ – টীকা লেখো। অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন