এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের ইতিহাস অনেকাংশে গ্রামীণ কৃষিজীবি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাধীনতা রক্ষার মরণপন সংগ্রামের ইতিহাস।
বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির বৈশিষ্ট্য
ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত –
বেশ কিছু আন্দোলন কৃষক আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরে সেগুলি জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। উদাহরণস্বরূপ ওয়াহাবি, ফরাজি, পাগলপন্থী প্রভৃতি বিদ্রোহের কথা বলা যায়।
পরস্পর বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত –
ইতিহাসের এই পর্বে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলি ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত এবং অনেকক্ষেত্রেই সুষ্ঠ পরিকল্পনাহীন। এদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ বলে কিছু ছিল না। সব থেকে বড়ো কথা, আন্দোলনগুলিকে কেন্দ্র করে কৃষকদের মধ্যে যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে উঠেছিল, আন্দোলনের পরিসমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তারও অবসান ঘটে।
সংকীর্ণ আদর্শ –
জাতীয়তাবাদী বা অন্য কোনো মহান আদর্শের জন্য কৃষকরা আন্দোলনে শামিল হয়নি। সাধারণত সামন্ততান্ত্রিক শোষণ, নিপীড়ন, অনাচার, মহাজনী শোষণ, করভার প্রভৃতি থেকে মুক্তি পাওয়ার তাগিদেই তারা আন্দোলনে নেমেছিল।
নিম্নবর্গের নেতৃত্ব –
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্রোহগুলির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিম্নবর্গের মানুষজন। অংশগ্রহণকারীদের ভেতর থেকেই কোনো সাধারণ কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন।
বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির মন্তব্য –
ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে সংঘটিত এইসব কৃষক বিদ্রোহগুলি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর প্রথম প্রতিবাদ এবং চরিত্রগত বিচারে নিঃসন্দেহে জাতীয়তাবাদে সিক্ত ও সংগ্রামী চেতনায় পরিপূর্ণ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল –
1. ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া (যেমন – ওয়াহাবি, ফরাজি আন্দোলন)।
2. পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত প্রকৃতি।
3. সংকীর্ণ স্থানীয় আদর্শ (জাতীয়তাবাদী চেতনার অভাব)।
4. নিম্নবর্গীয় কৃষকদের নেতৃত্ব।
বিংশ শতকে কেন কৃষক বিদ্রোহগুলো “বিক্ষিপ্ত” বলা হয়?
বিংশ শতকে কৃষক বিদ্রোহগুলো “বিক্ষিপ্ত” বলা হয় কারণ এগুলো—
1. কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছাড়াই সংঘটিত হয়েছিল।
2. বিভিন্ন অঞ্চলে স্বতন্ত্রভাবে ঘটেছিল।
3. এক বিদ্রোহের সঙ্গে অন্য বিদ্রোহের সংযোগ বা সমন্বয় ছিল না।
বিংশ শতকে কৃষকরা কী কারণে বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল?
মূলত স্থানীয় সমস্যার কারণে, যেমন —
1. জমিদার ও মহাজনদের শোষণ।
2. ব্রিটিশ করনীতি ও ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার চাপ।
3. ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়ন।
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলিতে নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলিতে সাধারণত নিম্নবর্গের মানুষ, যেমন—
1. স্থানীয় কৃষক নেতা।
2. ধর্মীয় গুরু (যেমন – তিতুমীর, হাজী শরিয়তউল্লাহ)।
3. ক্ষুদ্র জমিদার বা প্রান্তিক সমাজের ব্যক্তিত্ব।
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য –
2. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম গণ-প্রতিরোধ।
3. পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।
4. গ্রামীণ শোষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছিল।
বিংশ শতকে কোন বিদ্রোহগুলো ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল?
1. ওয়াহাবি আন্দোলন (ইসলামিক পুনরুজ্জীবনবাদী চেতনা)।
2. ফরাজি আন্দোলন (হাজী শরিয়তউল্লাহর নেতৃত্বে)।
3. পাগলপন্থী বিদ্রোহ (বাংলার আদিবাসী-কৃষক সংঘর্ষ)।
বিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলো কি সফল হয়েছিল?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই না, কারণ —
1. ব্রিটিশ সামরিক শক্তির কাছে দমন হয়।
2. সংগঠনের অভাব ও স্থায়ী ঐক্যের অনুপস্থিতি।
3. তবে এগুলি পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ নীতির সমালোচনা তৈরি করেছিল।
বিংশ শতকে কোন অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ সবচেয়ে তীব্র ছিল?
কৃষক বিদ্রোহ সবচেয়ে তীব্র ছিল প্রধানত —
1. বাংলা (নীল বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ)।
2. উত্তর ভারত (অযোধ্যার কৃষক অসন্তোষ)।
3. পাঞ্জাব (কুকা আন্দোলন)।
বিংশ শতকে ব্রিটিশ সরকার কীভাবে কৃষক বিদ্রোহগুলোর মোকাবিলা করেছিল?
1. সামরিক দমন (যেমন: কুকা বিদ্রোহে নিষ্ঠুর দমন)।
2. আইনি সংস্কার (বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, 1885)।
3. “Divide and Rule” নীতি প্রয়োগ করে বিভেদ সৃষ্টি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন