এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?
নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য M.N. Roy বা মানবেন্দ্রনাথ রায় নামেই ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ও বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ –
প্রথম জীবনে বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। বাংলার বিখ্যাত বিপ্লবী বাঘাযতীন ছিলেন তাঁর মন্ত্রগুরু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঘাযতীনের নির্দেশে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে যান। তিনি অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলেরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
মেক্সিকো ও আমেরিকায় মানবেন্দ্রনাথ –
বুড়িবালামের যুদ্ধে বাঘাযতীনের মৃত্যু হলে তিনি প্রথমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও পরে মেক্সিকোতে আত্মগোপন করেন। মেক্সিকোতে থাকাকালীন 1920 খ্রিস্টাব্দে ‘দ্বিতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ সম্মেলনে যোগদান করেন। এখানে স্বয়ং লেনিন তাঁকে অভিবাদন জানান।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা –
রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জী, মহম্মদ আলি সহ চব্বিশ জন প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের নিয়ে রাশিয়ার তাসখণ্ডে 1920 খ্রিস্টাব্দের 17 অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘ভ্যানগার্ড’ পত্রিকাটি ভারতীয় কমিউনিস্টদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ও মানবেন্দ্রনাথ রায় –
কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল বা কমিনটার্ন-এ ভারতীয় প্রতিনিধিরূপে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত থাকেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে 1930 খ্রিস্টাব্দে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন।
র্যাডিকাল ডেমোেক্রটিক পার্টি গঠন –
1930 খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ক্রমে তাঁর বামপন্থী মতাদর্শ থেকে সরে আসেন এবং একজন প্রগতিশীল মানবতাবাদীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। 1940 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন র্যাডিকাল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশের মন্তব্য –
ভারতে কমিউনিস্ট ভাবধারা প্রচার এবং গোড়ার দিকের কমিউনিস্ট আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে মানবেন্দ্রনাথ ছিলেন অগ্রণী পুরুষ। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মানবেন্দ্রনাথ রায় কে ছিলেন?
মানবেন্দ্রনাথ রায় (এম.এন. রায়) ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত বিপ্লবী, মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও বামপন্থী আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং পরবর্তীতে র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন।
বামপন্থী আন্দোলনের সূচনায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ভূমিকা কী ছিল?
প্রথম জীবনে তিনি বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বিশেষত অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে। পরে তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
মেক্সিকো ও আমেরিকায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের কী অবদান ছিল?
বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যুর পর মানবেন্দ্রনাথ রায় আমেরিকা ও মেক্সিকোতে গমন করেন। 1920 সালে মেক্সিকোতে দ্বিতীয় কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এ অংশগ্রহণ করেন এবং লেনিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ভূমিকা কী?
1920 সালের 17 অক্টোবর রাশিয়ার তাসখন্দে তিনি অবনী মুখার্জী, মহম্মদ আলি প্রমুখের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সম্পাদিত ‘ভ্যানগার্ড’ পত্রিকা ভারতীয় কমিউনিস্টদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়।
কমিন্টার্নে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?
তিনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল (কমিন্টার্ন)-এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে মতাদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে 1930 সালে তাঁকে কমিন্টার্ন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তী জীবনে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রাজনৈতিক দর্শন কী পরিবর্তিত হয়?
1930 -এর দশকে তিনি মার্ক্সবাদ থেকে সরে এসে প্রগতিশীল মানবতাবাদে আস্থা রাখেন। 1940 সালে তিনি র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন।
ভারতের বামপন্থী আন্দোলনে তাঁর প্রধান অবদান কী?
তিনি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তি রচনা করেন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। তাঁর চিন্তাধারা পরবর্তীতে ভারতের বামপন্থী রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রাজনৈতিক দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
প্রাথমিকভাবে তিনি মার্ক্সবাদী বিপ্লবী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ও মানবতাবাদের দিকে ঝুঁকেন। তিনি ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্ব দেন।
মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রচিত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বই বা পত্রিকা কী ছিল?
1. “India in Transition” (ভারতের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ),
2. “Revolution and Counter-Revolution in China”,
3. “ভ্যানগার্ড” (কমিউনিস্ট পত্রিকা)।
মানবেন্দ্রনাথ রায়ের উত্তরাধিকার কী?
মানবেন্দ্রনাথ রায় ভারতের বামপন্থী আন্দোলনের এক অগ্রপথিক হিসেবে স্মরণীয়। যদিও পরবর্তীতে তাঁর দর্শনে পরিবর্তন আসে, তবুও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরস্মরণীয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন