তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।
Contents Show

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে বাংলা তথা ভারতের নানা প্রান্তে যেসব স্বাধীন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আবহে 1942 খ্রিস্টাব্দের 17 ডিসেম্বর মেদিনীপুরের তমলুকে প্রতিষ্ঠিত হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল ও তমলুক-এই চারটি থানা এলাকা তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতৃত্ব –

এই সরকারের সর্বাধিনায়ক ছিলেন বিশিষ্ট গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত। তাঁর দুই প্রধান সহযোগী ছিলেন অজয় মুখার্জী ও সুশীলচন্দ্র ধাঁড়া।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের কর্মকান্ড –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ব্রিটিশ বিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলনে শামিল হয়। এই সরকারের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গড়ে ওঠে ‘বিদ্যুৎ বাহিনী’ নামক স্বেচ্ছাসেবক সেনাদল আর নারীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভগিনী সেনা’। এরা মূলত যুদ্ধে আহত সেনাদের সেবা-শুশ্রূষা ও ত্রাণকার্যে অংশ নিত। এই সরকারের মুখপত্র ছিল ‘বিপ্লবী’। ব্রিটিশ বিরোধীতার পাশাপাশি 1942 খ্রিস্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মেদিনীপুরে ত্রাণ সংগ্রহ ও বণ্টনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। সালিশি সভার আয়োজন করে গ্রাম্য বিবাদের নিষ্পত্তিতে এই সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অবসান –

বিপুল উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও এই সরকারের আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র 1 বছর 7 মাস 22 দিন। (1942 খ্রিস্টাব্দের 17 ডিসেম্বর – 1944 খ্রিস্টাব্দের 8 আগস্ট)। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশের প্রত্যাঘাত এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটে।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মন্তব্য –

ব্যর্থতা সত্ত্বেও ব্রিটিশ বিরোধী আপোসহীন সংগ্রামে এই সরকারের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। পরাধীন বাংলার এখানেই প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলিত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় (1942 খ্রিস্টাব্দ) মেদিনীপুরের তমলুকে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন জাতীয় সরকার, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও স্বশাসনের প্রচেষ্টা চালায়।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার 17 ডিসেম্বর, 1942 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতৃত্বে কারা ছিলেন?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন –
1. সর্বাধিনায়ক – সতীশচন্দ্র সামন্ত (গান্ধীবাদী নেতা)
2. প্রধান সহযোগী – অজয় মুখার্জী ও সুশীলচন্দ্র ধাঁড়া

তাম্রলিপ্ত সরকারের অধীনে কোন অঞ্চলগুলি ছিল?

তাম্রলিপ্ত সরকারের অধীনে মেদিনীপুরের চারটি থানা— সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল ও তমলুক

তাম্রলিপ্ত সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড কী ছিল?

তাম্রলিপ্ত সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড ছিল –
1. বিদ্যুৎ বাহিনী (যুব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী) ও ভগিনী সেনা (নারীদের সংগঠন) গঠন।
2. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ত্রাণকার্য (1942 খ্রিস্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ে), সালিশি ব্যবস্থা চালু।
3. “বিপ্লবী” নামক মুখপত্র প্রকাশ।

তাম্রলিপ্ত সরকার কতদিন টিকেছিল?

তাম্রলিপ্ত সরকার 1 বছর 7 মাস 22 দিন (17 ডিসেম্বর 1942 খ্রিস্টাব্দ – 8 আগস্ট 1944 খ্রিস্টাব্দ) টিকেছিল।

তাম্রলিপ্ত সরকারের পতনের কারণ কী?

তাম্রলিপ্ত সরকারের পতনের কারণ হল ব্রিটিশ দমননীতি ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতা।

তাম্রলিপ্ত সরকারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

তাম্রলিপ্ত সরকারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব –
1. বাংলায় প্রথম স্বাধীন সরকার গঠনের প্রচেষ্টা।
2. ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে জনগণকে সংগঠিত করায় ভূমিকা।
3. স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের প্রতীকী গুরুত্ব।

তাম্রলিপ্ত সরকারে “বিদ্যুৎ বাহিনী” ও “ভগিনী সেনা” কী কাজ করত?

1. বিদ্যুৎ বাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র ও গেরিলা কার্যক্রম।
2. ভগিনী সেনা – আহতদের সেবা, ত্রাণ বিতরণ ও নারীদের সংগঠিত করা।

তাম্রলিপ্ত সরকারের ব্যর্থতা সত্ত্বেও কেন এটি স্মরণীয়?

এটি স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন ও স্থানীয় স্বশাসনের একটি সাহসী উদ্যোগ ছিল, যা পরবর্তী আন্দোলনগুলিকে প্রেরণা দিয়েছে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।