এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে টীকা লেখো। অথবা, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণের কারণ কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে টীকা লেখো। অথবা, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণের কারণ কী?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে টীকা লেখো।
অথবা, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণের কারণ কী?
1905 সালে বড়লাট লর্ড কার্ডনের বঙ্গভঙ্গের অপসিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংঘটিত স্বদেশি আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এলিটিস্ট চরিত্র –
এই আন্দোলনের একটি এলিটিস্ট চরিত্র ছিল বলে অনেকে মনে করেন। শহুরে মধ্যবিত্ত, ইংরেজি শিক্ষিত চাকুরিয়া, সাংবাদিক শ্রেণি, জমিদার ও জমিদারি আমলারাই এই অন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। কৃষক সমাজ বা নিম্নবর্গের জনসাধারণের সাথে আন্দোলনের কোনো আত্মিক যোগাযোগ ঘটেনি। অনেকক্ষেত্রেই ‘বয়কট’ তাদের ওপর বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জমিদারশ্রেণির স্বার্থচিন্তা –
ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে স্বদেশির পশ্চাতে বড়ো জমিদারদের স্বার্থচিন্তা বিশেষভাবে কাজ করেছিল। বঙ্গভঙ্গের ঘোষণায় দুই বঙ্গের জমিদাররাই অস্তিত্বের সংকটে পড়ে আন্দোলনে শামিল হন। এদের প্রায় কেউই আন্দোলনের প্রতি আন্তরিক ছিলেন না। ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতানুযায়ী, কৃষকশ্রেণিকে আন্দোলনের শরিক হিসেবে অংশগ্রহণের ব্যাপারে স্বদেশি আন্দোলনের নেতৃবর্গ সচেতনভাবে উদাসীনতা দেখান। ভূমিসত্ত্ব সংরক্ষণ, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি কৃষকসমাজের দাবিগুলোকে গ্রহণ করে স্বদেশি নেতারা জমিদার তথা উচ্চবর্গীয়দের বিরাগভাজন হতে চাননি।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচির অভাব –
ডঃ সুমিত সরকার বলেন যে, মধ্যবিত্তশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত এই আন্দোলন ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচির’ অভাবের জন্য দরিদ্র কৃষকদের নিজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেনি। গ্রামীণ অর্থনীতি বা কৃষক সমাজের উন্নতির জন্য কোনো আকর্ষণীয় কর্মসূচি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। স্বদেশি নেতৃবর্গ শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দিলেও কৃষকদের সম্পর্কে তারা ছিলেন উদাসীন।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা –
জাতীয় কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করা বা খাজনা প্রদান বন্ধে কৃষকদের উৎসাহিত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। 1907 সালে ‘নিস্ক্রিয় প্রতিরোধ’ সংক্রান্ত এক প্রবন্ধে অরবিন্দ ঘোষ কৃষকদের খাজনা বন্ধের আন্দোলন সম্ভাবনা বাতিল করে দেন। তিনি আশঙ্কা করেন, এর ফলে দেশপ্রেমিক জমিদাররা ক্ষুব্ধ হবেন।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম সমাজের নেতিবাচক অংশগ্রহণ –
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম কৃষক সমাজ নঞর্থক রূপে যোগদান করেছিল। সরকারি তরফে বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম সমাজের ভবিষ্যৎ লাভের সম্ভাবনা প্রচার করা হলে অধিকাংশ মুসলিম কৃষক পরিবার আন্দোলন থেকে দূরে থাকে।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের মন্তব্য –
ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠীর পরিভাষায় “শ্রমিক, কৃষকদের বিপ্লবমুখী করে তোলার ব্যাপারে চরমপন্থীদের অক্ষমতার মধ্যেই গোটা আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল নিহিত ছিল।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজ কেন সীমিতভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?
এই আন্দোলন মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত, ইংরেজি-শিক্ষিত শ্রেণি, জমিদার ও জমিদারি আমলাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল। কৃষকদের স্বার্থ ও সমস্যাগুলোকে আন্দোলনের কর্মসূচিতে স্থান দেওয়া হয়নি, ফলে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এলিটিস্ট চরিত্র বলতে কী বোঝায়?
আন্দোলনটি শহরকেন্দ্রিক ও উচ্চবর্গীয় নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে কৃষক ও নিম্নবর্গের মানুষের অংশগ্রহণ বা স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। স্বদেশি নেতারা কৃষকদের দাবি (যেমন – খাজনা হ্রাস, ভূমিসংস্কার) এড়িয়ে চলেন জমিদারদের সমর্থন ধরে রাখার জন্য।
জমিদার শ্রেণির স্বার্থ কীভাবে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল?
জমিদাররা বঙ্গভঙ্গের ফলে নিজেদের আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি আশঙ্কা করে আন্দোলনে যোগ দেন, কিন্তু কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী ছিলেন না। নেতৃত্ব কৃষকদের দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে জমিদারদের সমর্থন বজায় রাখতে চেয়েছিল।
কৃষকদের আকর্ষণ করতে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কী ধরনের কর্মসূচির অভাব ছিল?
আন্দোলনে কৃষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি (যেমন – খাজনা কমিশন বাতিল, ভূমি সংস্কার)। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন বা কৃষকদের দুর্দশা লাঘবের কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেস ও অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা কী ছিল?
কংগ্রেস কৃষকদের সংগঠিত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অরবিন্দ ঘোষও “নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ” -এর তত্ত্বে কৃষকদের খাজনা বন্ধের আন্দোলনকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন, কারণ এটি জমিদারদের বিরাগভাজন করতে পারত।
মুসলিম কৃষকরা কেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়নি?
ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গকে মুসলিম স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করেছিল। ফলে, পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকরা আন্দোলনকে হিন্দু জমিদারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে মনে করে দূরত্ব বজায় রাখে।
ঐতিহাসিকরা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতা সম্পর্কে কী মত দিয়েছেন?
ডঃ সুমিত সরকার ও অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, কৃষক ও শ্রমিকদের বিপ্লবমুখী করতে না পারাই আন্দোলনের মূল দুর্বলতা ছিল। নেতৃত্বের উচ্চবর্গীয় চরিত্র এবং কৃষক-সমস্যার প্রতি উদাসীনতা আন্দোলনের ব্যাপকতা সীমিত করে দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে টীকা লেখো। অথবা, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণের কারণ কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে টীকা লেখো। অথবা, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের সীমিত অংশগ্রহণের কারণ কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন