উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো। অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো। অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো। অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।

অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও বহু আত্মত্যাগের পর স্বাধীনতা এলেও তা এল দেশভাগের বেদনা ও উদ্‌বাস্তু সমস্যার অবাঞ্ছিত বিঘ্ন নিয়ে। উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারত সরকার যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখালেও দেশের পশ্চিমাঞ্চল (পাঞ্জাব) এবং পূর্বাঞ্চলে (পশ্চিম বাংলা) এ বিষয়ে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের মধ্যে যথেষ্ট তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার তারতম্য –

সময়কালগত –

দেশভাগের অনতিকালের মধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একযোগে প্রায় ষাট লক্ষ মানুষের এদেশে অভিপ্রয়াণ ঘটে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে এদের বাসস্থান ও ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং এইভাবে কমবেশি 1951 খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই পাঞ্জাবে উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়।

পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম বাংলায় উদ্‌বাস্তুদের আগমন ছিল একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া। 1971 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উদ্‌বাস্তু স্রোত পূর্ণমাত্রায় বহমান ছিল। ফলত, পশ্চিম বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধান অনেকটাই কঠিন হয়ে দেখা দেয়।

জনহস্তান্তর –

দেশভাগের অনতিকালের মধ্যেই লাহোর ও পাঞ্জাবে হিংসার বলি হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠী একযোগে নিজ নিজ বাস-ভূমি ত্যাগ করে। এক্ষেত্রে পরস্পরের বাসস্থান খুঁজে পেতে সমস্যা হয়নি। তা ছাড়া পাঞ্জাবের নিকটস্থ দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারও এক্ষেত্রে উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে অকৃপণ হস্তে এগিয়ে আসে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম বাংলায় আসা উদ্‌বাস্তুদের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণ ছিল হতাশাজনক এবং খানিকটা বিমাতৃসুলভ। এক্ষেত্রে তাদের প্রথমে আশ্রয় দেওয়া হয় ‘ট্রানজিট ক্যাম্প’ বা সাময়িক শিবিরে। ভাবা হয়েছিল সাময়িক অশান্তি মিটলে তারা পুনরায় পূর্ব পাকিস্তানে নিজ গৃহে ফিরে যাবেন। সাময়িক শিবিরে প্রদত্ত ‘ডোল’ বা রেশনের পরিমাণও ছিল নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। 1951 খ্রিস্টাব্দের পর উদ্‌বাস্তুদের স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্দ্যোগ নেওয়া হলেও তা রূপায়িত হতে হতে 1955 খ্রিস্টাব্দ গড়িয়ে যায়।

ভাষাগত সমস্যা –

ভাষাগত সমস্যা না থাকায় পশ্চিম পাঞ্জাবের পাঞ্জাবি ও সিম্প্রীভাষী উদ্‌বাস্তুরা, দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে নির্দ্বিধায় আশ্রয়স্থল গড়ে তোলে।

কিন্তু বাংলাভাষী উদ্‌বাস্তুদের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা ছাড়া অন্যত্র অভিপ্রয়াণের সুযোগ ছিল অনেক কম। স্বভাবতই পশ্চিম বাংলা উদ্‌বাস্তু সমস্যার বীজক্ষেত্রে পরিণত হয়।

মন্তব্য –

সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায়, উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে দেশের পশ্চিমাঞ্চল অপেক্ষা পূর্বাঞ্চলে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ছিল অনেকটাই হতাশাজনক। স্বয়ং নেহরু পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু উদ্‌বাস্তুদের পশ্চিমমুখী যাত্রাকে ‘নিছক কাল্পনিক ভয়’ আখ্যা দেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পশ্চিমাঞ্চল (পাঞ্জাব) ও পূর্বাঞ্চলে (পশ্চিম বাংলা) উদ্‌বাস্তু সমস্যার প্রধান পার্থক্য কী?

পশ্চিমাঞ্চল (পাঞ্জাব) ও পূর্বাঞ্চলে (পশ্চিম বাংলা) উদ্‌বাস্তু সমস্যার প্রধান পার্থক্য হল –
1. সময়কালগত পার্থক্য – পাঞ্জাবে উদ্‌বাস্তু সমস্যা 1947-1951 সাল -এর মধ্যে সমাধান হয়, কিন্তু পশ্চিম বাংলায় এটি 1971 সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।
2. জনহস্তান্তর – পাঞ্জাবে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জনবিনিময় দ্রুত হয়, কিন্তু পূর্বাঞ্চলে উদ্‌বাস্তুরা দীর্ঘদিন শিবিরে থাকেন।
3. সরকারি পদক্ষেপ – পাঞ্জাবে দ্রুত পুনর্বাসন হয়, কিন্তু পশ্চিম বাংলায় উদ্‌বাস্তুদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হয়নি।

কেন পাঞ্জাবে উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্ভব হয়েছিল?

1. দ্রুত জনবিনিময় – হিন্দু ও শিখরা ভারতে, মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যায়।
2. কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয়তা – দিল্লি সরকার জমি ও বাড়ি বরাদ্দ করে দ্রুত পুনর্বাসন করে।
3. ভাষাগত মিল – পাঞ্জাবি ভাষার কারণে উদ্‌বাস্তুরা উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সহজে বসবাস করতে পেরেছিল।

পশ্চিম বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ কী?

পশ্চিম বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ –
1. ধীরগতিতে আগমন – 1947-1971সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে উদ্‌বাস্তু আসতে থাকেন।
2. সরকারি অবহেলা – কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে এটিকে অস্থায়ী সমস্যা ভেবেছিল, তাই স্থায়ী পুনর্বাসনে দেরি হয়।
3. ভাষাগত সীমাবদ্ধতা – বাংলাভাষী উদ্‌বাস্তুরা শুধু পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামেই যেতে পারতেন, অন্য রাজ্যে সমস্যা হতো।

নেহরু সরকারের উদ্‌বাস্তু নীতির সমালোচনা কেন করা হয়?

নেহরু সরকারের উদ্‌বাস্তু নীতির সমালোচনা করা হয় কারণ –
1. অবহেলাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি – নেহরু পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্‌বাস্তুদের ভয়কে “কাল্পনিক” বলে উল্লেখ করেন।
2. অপর্যাপ্ত ত্রাণ – উদ্‌বাস্তুদের জন্য সাময়িক শিবির ও অপ্রতুল রেশন দেওয়া হয়।
3. রাজনৈতিক অগ্রাধিকার – পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় পূর্বাঞ্চলে পুনর্বাসনে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী ছিল?

উদ্‌বাস্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ছিল –
1. পশ্চিম বাংলায় – অর্থনৈতিক চাপ, বস্তির বিস্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা।
2. পাঞ্জাবে – দ্রুত পুনর্বাসন হলেও সম্পত্তি বিরোধ ও সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েন রয়ে যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো। অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো। অথবা, দেশভাগ পরবর্তী পাঞ্জাব ও বাংলায় উদ্‌বাস্তু সমস্যার চরিত্রগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা