নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলপ্রসূ হয়েছিল?
Contents Show

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

দেশভাগ ও উদ্‌বাস্তু সমস্যার প্রেক্ষাপটে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির প্রেক্ষাপট –

দীর্ঘসংগ্রাম ও বহু আত্মত্যাগের পর স্বাধীনতা এলেও তা এল দেশভাগের বেদনা ও উদ্‌বাস্তু সমস্যার অবাঞ্ছিত বিঘ্ন নিয়ে। টুকরো হল দেশ। ভারত ও পাকিস্তান। সৃষ্টি হল শরণার্থী সম্প্রদায়ের। বাস্তুহারা হলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খান পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে উদ্‌বাস্তু সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজেন।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর –

1950 খ্রিস্টাব্দের 17 এপ্রিল উপরিউক্ত দুই রাষ্ট্রনায়ক চুক্তিবদ্ধ হন।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির শর্তাবলি –

এই চুক্তি দ্বারা স্থির হয় –

  • সংখ্যালঘুরা যে যার রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে এবং তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের কাছেই প্রতিকার চাইবে।
  • পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে কেউ অন্য দেশে শরণার্থী হতে চাইলে তাকে সাহায্য করা হবে।
  • ভারত ও পাকিস্তান বর্তমান সংকটের কারণ ও পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবে এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে।
  • পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকবে।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির প্রতিক্রিয়া –

এই চুক্তি অনেককেই হতাশ করেছিল। তারা মনে করেন যে, এই চুক্তি সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট কঠোর নয়। এই কারণে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ক্ষিতিশচন্দ্র নিয়োগী নেহরু মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির মন্তব্য –

বাস্তবিকই এই চুক্তির দ্বারা শরণার্থীর স্রোত কিছুটা কমলেও সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক অত্যাচার চলতে থাকে। 1971 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, বিশেষত পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের স্রোত অব্যাহত ছিল।’

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কী এবং কেন স্বাক্ষরিত হয়?

1950 সালের 17 এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দেশভাগ-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী ছিল?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির প্রধান শর্তগুলি ছিল –
1. সংখ্যালঘুরা নিজ নিজ রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছেই ন্যায্য অধিকার দাবি করবে।
2. পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে উদ্‌বাস্তুদের স্থানান্তরে সহায়তা দেওয়া হবে।
3. সংখ্যালঘু কমিশন ও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে।
4. পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কি উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পেরেছিল?

না, এই চুক্তি সাময়িকভাবে শরণার্থী প্রবাহ কমালেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে ব্যর্থ হয়। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন অব্যাহত থাকে, ফলে 1971 সাল পর্যন্ত শরণার্থীদের ভারতে আগমন চলতে থাকে।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির সমালোচনা কী ছিল?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির সমালোচনা ছিল –
1. অনেকের মতে, চুক্তিটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে যথেষ্ট কঠোর ছিল না।
2. ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ক্ষিতিশচন্দ্র নিয়োগী নেহরু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন, কারণ তারা মনে করেছিলেন চুক্তিটি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির ঐতিহাসিক মূল্য কী?

যদিও চুক্তিটি উদ্‌বাস্তু সমস্যার পূর্ণ সমাধান দিতে পারেনি, তবুও এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখালেও বাস্তবে তা টেকসই হয়নি।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কি শরণার্থীদের ফিরে যেতে উৎসাহিত করেছিল?

চুক্তিতে শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই ভারতে থেকে যান। ফলে চুক্তির এই ধারা কার্যকর হয়নি।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল?

কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক শান্তি স্থাপনে সহায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর করতে পারেনি। 1950 খ্রিস্টাব্দের দশক থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন বাড়তে থাকে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা