সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ – প্রবন্ধ রচনা

Rohit

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ - প্রবন্ধ রচনা
সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ – প্রবন্ধ রচনা

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করো।

ভূমিকা –

সকালের আলো ফোটার সাথে সাথেই পথের দেবতার শুরু হয় ব্যস্ততা। কাজের শেষ নেই। কেউ যায় স্কুল-কলেজে। কেউ যায় বাজারে। জীবন চালানোর জন্য শুধু ছুটে চলা। এইভাবে নানা কাজ, নানা প্রয়োজন মানুষকে টেনে পথে নামায়। দেখতে দেখতে গাড়ির সংখ্যা বাড়ে। বাড়ে লোকজনের ভিড়। সকালে বেরোয়। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে। কেউ আবার রাস্তায়ই কাটায় দিনের পর দিন। এর মধ্যে কেউ কেউ আর ফেরে না। রাত বাড়ে। বাড়ে পরিবারের লোকের চিন্তা, ভয়। থানায় হাসপাতালে চলে খোঁজখবর। তারপর বুকভাঙা কান্না। এতদিন যে ছিল পরিবারের ভরসা, বেঁচে থাকার সহায়, সে অকালে চলে গেল। সেখানে জমে শুধু আপনজন হারানোর ব্যথা, প্রিয়জন চলে যাওয়ার কান্না। অকালমৃত্যুর এই কান্না থামাতে প্রয়োজন নিজের সচেতনতা। এই উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 8 জুলাই 2016 সালে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি নেয়। সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে সচেতনতা বাড়ানোই এর প্রধান লক্ষ্য।

সড়ক নিরাপত্তা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন উদ্যোগ –

রাজ্যে দুর্ঘটনা বাড়ায় চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মানুষকে সচেতন করতে এবার নিজেই সচেতনতার স্লোগান দিলেন তিনি। স্লোগানটি হল – ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ‘ (SAFE DRIVE, SAVE LIFE) মানে নিরাপদে গাড়ি চালালে চালক এবং পথচারী দুজনেরই অকাল মৃত্যু হবে না। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের প্রধানদের নিয়ে পরিবহণ দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর স্লোগান নিয়ে প্রচার শুরু করছে। এই প্রকল্পের একটি ‘রোডম্যাপ’ বানানো হয়েছে। কলকাতা সহ সব জেলায় রাজ্য পরিবহণ দপ্তর ও পুলিশ এই স্লোগান নিয়ে বিশেষ অভিযান শুরু করছে। মনে রাখতে হবে, এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আঁকা প্রতীক নিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছিল। সেই প্রকল্প ইউনিসেফ সহ সারা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। আসলে, দুর্ঘটনা রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই স্লোগানও যে সারা দেশে প্রশংসা পাবে তা মনে করেন রাজ্যের অনেক পরিবহণ সংস্থার প্রধানরা। কলকাতার পাশাপাশি সব ন্যাশনাল ও স্টেট হাইওয়ের দুপাশে এবং কলকাতার সব রাস্তায় ইতিমধ্যেই এই স্লোগানের হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসেও (SAFE DRIVE, SAVE LIFE) স্লোগান নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে।

‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রসঙ্গে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি –

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচিতে রাজ্য সরকারের বক্তব্যের মূল কথা হলো –

  • অনেক সময় আমরা অসতর্ক থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।
  • প্রত্যেক জীবন দামী। প্রতিটি মৃত্যু কষ্টের।
  • সবাই নিয়ম ভাঙে না, কিন্তু কয়েকজনের ভুলের জন্য সবাইকে মূল্য দিতে হয়।
  • সবুজসাথী, কন্যাশ্রীতে বাংলা মডেল হতে পারলে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচিতে কেন নয়?
  • হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে দুর্ঘটনা হয়। আজকাল রাতে ফ্লাইওভারে অনেকে বাইক রেস করে, এটা বন্ধ করতে হবে।
  • বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া হবে না। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
  • আমাদের ট্রাফিক আইন বদলাতে হবে।
  • মোটর গাড়ির আইন কেন্দ্র করে। রাজ্যগুলোরও এই ক্ষমতা থাকা উচিত।
  • এখন কলকাতায় ট্রাফিক সিগন্যাল অনেক ভালো হয়েছে।
  • কলকাতার মত সব জেলা ও জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • গাড়িতে বেশি মানুষ নেওয়া এবং রুক্ষ ড্রাইভিং বরদাস্ত করা হবে না।
  • সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হবে।
  • স্থানীয় ক্লাব, লোকশিল্পী এবং তরুণরা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করবে।
  • ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচিকে দুর্গাপুজোর বিষয় করতে পূজা কমিটিগুলোকে বলা হবে।
  • রাস্তার নিরাপত্তা দেখতে আরও সিসিটিভি বসানো হবে।
  • ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ একটি আন্দোলন এবং সরকার সড়ক নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেবে।
  • যে ব্লকে কম দুর্ঘটনা ঘটবে, তাকে এক বছর পর পুরস্কার দেবে সরকার।
  • সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

দুর্ঘটনার ছবি –

আজকাল খবরের কাগজে প্রতিদিনই পথের দুর্ঘটনার খবর। দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু। গড়ে বছরে 400 মানুষ মারা যায় গাড়ির নীচে। কোথাও বাসে-ট্রামে ধাক্কা। কোথাও মিনিবাস-বাস, কোথাও বাস-ট্রাক মৃত্যু নিয়ে আসে পথচারীর সামনে। কত মূল্যবান জীবন নষ্ট হয়। কোথাও রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা যায় পথচারী। কোথাও গাড়ির প্রতিযোগিতায় প্রতিদিনই কত মানুষের জীবন শেষ হয়। মৃত্যু লুকিয়ে আছে রাস্তার এখানে-সেখানে। কখন কাকে নেবে কে জানে। কিন্তু কেন প্রতিদিন এত মৃত্যু! পথের দেবতা এ কী জীবনের খেলা খেলছে!

দুর্ঘটনার কারণ –

এক বা অনেক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ একটাই নয়, অনেক। বেপরোয়া গাড়ি চালানো বড় কারণ। অনেক সময় ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই। ড্রাইভার মদ খেয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারায়। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই গাড়ি রাস্তায় নামে। বাসে-বাসে, মিনিবাসে-মিনিবাসে, মিনিবাসে-বাসে চলে কে আগে যাবে তার প্রতিযোগিতা। যাত্রী বা পথচারীর দিকে তখন নজর থাকে না। অনেক সময় এক দুর্ঘটনা আরও বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়। অনেক সময় যাত্রী নামানো-তোলার সময় অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটে। নানা রকম মিছিলও যানজটের বড় কারণ। রাস্তা বন্ধ, রাস্তায় সভা, আগুন ইত্যাদি কারণেও যানজট হয়। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা তখন কঠিন হয়। হকারদের ফুটপাথ দখল করায় পথচারী রাস্তায় নামে। রাস্তার উপরই বসে বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় হয়। যেখানে সেখানে গর্ত করা। রাস্তার দুপাশে বেআইনি ভাবে গাড়ি, ঠেলা রিক্সা দাঁড় করিয়ে রাস্তা ছোট করা হয়। এ সবই দুর্ঘটনার কারণ।

সমাধানের পথ –

লোকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। এখন দরকার চওড়া রাস্তা বানানো। পুরনো রাস্তা মেরামত করা দরকার। সবচেয়ে দরকার গাড়ির প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ – দরকারে কঠোর শাস্তি। শহরে হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা চাই। পথচারীদের ফুটপাথ ফিরিয়ে দিতে হবে। রাস্তায় বেআইনি দখল বন্ধ করতে হবে। পথচারীদের রাস্তায় চলার নিয়ম জানতে হবে। আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। রাস্তা পার হতে গেলে প্রথমে ডান, তারপর বাঁ, আবার ডানদিক দেখতে হবে। ট্রাফিক লাইট, ট্রাফিক পুলিশের ইশারা মেনে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। যানবাহনের সমস্যাও দিন দিন বাড়ছে। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

উপসংহার –

অকালে কত প্রাণ হারায়। প্রতিদিন কত মানুষ রাস্তায় মারা যায়। কত ঘরে জমে কান্না। কত পরিবারের আলো নিভে যায়। স্বপ্ন ভেঙে যায়। তবু মানুষ ছুটে চলে। পথ তাকে ডাকে। এই ডাক উপেক্ষা করা মানুষের সাধ্য নয়। চলতে গিয়ে সামান্য ভুল করলেই পথের দেবতা রেগে যায়। এ কি আধুনিক সভ্যতার অনিবার্য পরিণাম? নাকি মানুষের অসাবধান চলার ফল? এর জবাবে, পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং যুব কল্যাণ দপ্তরের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নামে একটি প্রচার অভিযান শুরু করেছে। এই রাজ্যের 341টি ব্লকে, 117টি পৌরসভা ও 6টি মিউনিসিপালিটি কর্পোরেশনে, কলকাতার 144টি ওয়ার্ডে, 19টি জেলা সদরে এবং জিটিএ-তে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রতিটি এলাকার ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, অধ্যাপক, শিল্পী, খেলোয়াড়, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীসহ এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত ও পৌর প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারী, পুলিশ ও প্রশাসনের সব স্তরের কর্তাব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে বিশেষ দিনে পদযাত্রায় যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ অভিযান সফল করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এটি একটি জনকল্যাণমূলক সচেতনতা কর্মসূচি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

চন্দ্রযান-3

চন্দ্রযান-3 – প্রবন্ধ রচনা

মিশন নির্মল বাংলা - প্রবন্ধ রচনা

মিশন নির্মল বাংলা – প্রবন্ধ রচনা

সময়ের মূল্য - প্রবন্ধ রচনা

সময়ের মূল্য – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

একটি কাচের স্ল্যাবের গঠন চিত্রসহ বর্ণনা করো।

চন্দ্রযান-3 – প্রবন্ধ রচনা

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ – প্রবন্ধ রচনা