আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “বায়ুর বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
অথবা, বায়ুর ক্ষয়কার্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ –
বায়ুর কার্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় শুষ্ক মরু অঞ্চলে। এই অঞ্চলে বায়ু প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য করে। যেমন –

অবঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ –
অবঘর্ষের ফলে মরু অঞ্চলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপগুলির সৃষ্টি হয় –
ভেন্টিফ্যাক্ট –
মরু অঞ্চলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে যখন শিলার প্রতিবাত পার্শ্ব (বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় সেইদিক) মসৃণ ও ধারালো হয়ে যায়, তখন সেই শিলাকে বলা হয় ভেন্টিফ্যাক্ট। কালাহারি মরুভূমিতে অনেক ভেন্টিফ্যাক্ট দেখা যায়।
ড্রেইকাস্টার –
ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যদি বায়ুর দিক পরিবর্তন হয়, তাহলে অবঘর্ষের ফলে শিলারও বিভিন্ন দিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মসৃণ হয় এবং বিভিন্ন দিকের ধারগুলিও খুব তীক্ষ্ণ হয়। এই ধরনের শিলার তিন দিকই ক্ষয়প্রাপ্ত ও তীক্ষ্ণ হলে, তাকে ড্রেইকান্টার বলা হয়। সাহারা মরুভূমিতে ড্রেইকান্টার দেখা যায়।
গৌর –
মরু অঞ্চলে অবঘর্ষের জন্য বৃহদাকৃতির শিলাখণ্ডের নিম্নাংশ যত বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ঊর্ধ্বাংশ তত হয় না। এ ছাড়া, কঠিন ও কোমল শিলাস্তরে এই ধরনের বৃহদায়তন শিলাখণ্ড গঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোমল শিলা গঠিত অংশটি যদি নীচের দিকে থাকে, তাহলে বায়ুর অবঘর্ষের ফলে নীচের অংশটি খুব বেশি ক্ষয়ে যায় এবং ওপরের অংশটি কম ক্ষয় পেয়ে সমগ্র শিলাখণ্ডটি ব্যাঙের ছাতার মতো আকৃতিবিশিষ্ট হয়ে যায়। একে গৌর বা গারা বা ব্যাঙের ছাতার মতো শিলাস্তূপ বলা হয়। সাহারা মরুভূমিতে গৌর আকৃতির অনেক শিলাস্তূপ দেখা যায়।

জিউগেন –
মরুভূমির যেসব স্থানে ওপরের স্তরে ফাটলযুক্ত কঠিন শিলা এবং নীচের স্তরে কোমল শিলা থাকে, সেখানে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে কোমল শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাতের আকার ধারণ করে। অন্যদিকে, কঠিন শিলাগঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় চ্যাপটা ও সমতল শীর্ষদেশবিশিষ্ট পরস্পর সমান্তরাল টিলার আকারে অবস্থান করে। এইভাবে দুটি খাতের মধ্যে চ্যাপটা শীর্ষদেশ বিশিষ্ট টিলার ন্যায় ভূমিরূপকে জিউগেন বলা হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনোরান মরু অঞ্চলে এই ভূমিরূপ দেখা যায়।

ইয়ারদাং –
কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ভূপৃষ্ঠে পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলাস্তরগুলি তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়। এর ফলে কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে বিচিত্র আকৃতির শৈলশিরার মতো খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এদের বলা হয় ইয়ারদাং। সৌদি আরবের মরু অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।

ইনসেলবার্গ –
বহুযুগ ধরে বায়ুপ্রবাহের নিরন্তর ক্ষয়কাজের ফলে সমগ্র মরু অঞ্চলের সাধারণ উচ্চতা কমে গিয়ে যখন প্রায় সমপ্রায়ভূমিতে পরিণত হয়, তখন তার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কঠিন শিলায় গঠিত অংশগুলি কোনোক্রমে ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে অনুচ্চ ও পরস্পর সমান উচ্চতাবিশিষ্ট টিলার আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ধরনের ক্ষয়জাত পাহাড় বা টিলাকে বলা হয় ইনসেলবার্গ। দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরু অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে অনেক ইনসেলবার্গ দেখা যায়।

পেডিমেন্ট বা পাদদেশীয় সমভূমি –
মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশসমূহ যখন বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ও মরু অঞ্চলের অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদিগুলির ক্ষয়কাজের ফলে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে একটি প্রস্তরময় সমভূমিতে পরিণত হয়, তখন তাকে পেডিমেন্ট বলা হয়। উত্তর আফ্রিকায় অ্যাটলাস পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।

ফারো –
মরু অঞ্চলে প্রবল বেগে প্রবাহিত বায়ুর সঙ্গে নানা আকৃতির অসংখ্য শিলাখণ্ড থাকে। দাঁড়িয়ে থাকা কোনো শিলার সঙ্গে এইসব শিলাখণ্ডের ঘর্ষণে, দণ্ডায়মান শিলার গায়ে ফালি ফালি দাগের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে ফারো বলে।
- ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর প্রবল বেগ বা আকর্ষণে বড়ো বড়ো প্রস্তরখণ্ড পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়ে মিলেট (ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতির দানাকে মিলেট বলে) দানার মতো ছোটো ছোটো শিলাখণ্ডের সৃষ্টি করে। এগুলিকে একত্রে বলে মিলেট সিড্ স্যান্ড। এর ফলে মরু অঞ্চলে বালুকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- অপসারণের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর অপসারণের ফলে মরু অঞ্চলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় –- ধান্দ – তীব্র বায়ুপ্রবাহে মরু অঞ্চলের বালি অপসারিত হওয়ার ফলে ছোটো-বড়ো নানা আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই ধরনের ছোটো-বড়ো বিভিন্ন আকৃতির গর্তগুলিকে বলা হয় ধান্দস বা ডান্ডস। এগুলিতে জল জমে লবণাক্ত জলের হ্রদ গঠিত হয়।
- অবনতভূমি বা ব্লো আউট – অনেক সময় বায়ুর অপসারণ ক্রিয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠে সুবিশাল অবনত অঞ্চল বা ব্লো আউট গঠিত হয়। উদাহরণ – মিশরের কাতারা অবনতভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 133 মিটার নীচে অবস্থিত।
- মরূদ্যান – বিশাল অঞ্চল জুড়ে বহুদিন ধরে বালি অপসারিত হতে হতে যদি অবনত অংশটির গভীরতা ভূগর্ভের জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে সেখানে মরূদ্যান গড়ে ওঠে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধ এরকম একটি মরূদ্যানের ওপর অবস্থিত।
 
শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের চিত্রসহ বিবরণ দাও।
বায়ু ও জলাধারের মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ –
মরুভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। তবে যখন বৃষ্টিপাত হয়, একেবারে মুষলধারেই তার আবির্ভাব ঘটে। আর বৃষ্টিপাতের সেই জল ভূপৃষ্ঠের ঢাল বরাবর নেমে কিছু অনিত্যবহ জলধারাও সৃষ্টি করে। এজন্য মরু অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে কিছু ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। যেমন –
- ওয়াদি – আরবি শব্দ ‘ওয়াদি’ -র অর্থ শুষ্ক উপত্যকা। মরু অঞ্চলের বালি ঢাকা ভূমিতে জল নিকাশের জন্য নদীনালা বিশেষ থাকে না বলে এক পশলা মুষলধারে বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়ে যায়। বন্যা বা বৃষ্টির জল বেরোনোর জন্য তখন বালুকাভূমির ওপর অস্থায়ী নদী সৃষ্টি হয়। জল নেমে গেলে ওগুলি শুষ্ক খাত হিসেবে পড়ে থাকে। এদেরই বলে ওয়াদি।
- পেডিমেন্ট – বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত ক্ষয়কার্যে উচ্চভূমি বা ইনসেলবার্জের পাদদেশে যে প্রায়-সমতল বা মৃদু ঢালবিশিষ্ট ভূমিভাগের সৃষ্টি হয় তাকে বলে পেডিমেন্ট। এর ঢাল গড়ে 1° (এক) থেকে 10° -এর মধ্যে থাকে। পেডিমেন্টের ওপর ছোটো ছোটো শিলাখণ্ড, ফাটল, পলি ইত্যাদি থাকতে পারে। অথবা পেডিমেন্ট সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হতে পারে। পেডিমেন্টের নীচে থাকে বাজাদা।
- বাজাদা – পেডিমেন্টের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার সঙ্গে আসা নুড়ি, কাঁকর, পলি, বালি প্রভৃতি ঢালের নিম্নাংশে অর্থাৎ পেডিমেন্টের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার পললব্যজনী সৃষ্টি করে। এই ধরনের অনেকগুলি ভূমি পরস্পর যুক্ত হলে যে বড়ো আকারের পলল ভূমি গঠিত হয় তাকে বলে বাজাদা বা বাহাদা। সুতরাং পেডিমেন্টের সামনে গড়ে-ওঠা বাজাদা সম্পূর্ণরূপে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ। পেডিমেন্টের দিকে বাজাদার খাড়া অবতল ঢাল সৃষ্টি হলেও প্লায়ার কাছে ঢাল খুব কম বা একেবারে শূন্যও হতে পারে।
- প্লায়া – চারপাশের উচ্চভূমি থেকে আসা অনেকগুলি জলধারা মধ্যভাগের উপত্যকা বা নিম্নভূমিতে মিলিত হলে সেখানে লবণাক্ত জলের অগভীর হ্রদ সৃষ্টি হয়। বাজাদা পৃষ্ঠের ওপর গড়ে-ওঠা এই মরু হ্রদের নাম প্লায়া। এগুলি সাধারণত অস্থায়ী প্রকৃতির হয় এবং এদের আয়তন বা ক্ষেত্রমান কয়েক বর্গমিটার থেকে কয়েক বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মরু অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের নিম্নসীমা বা শেষসীমা হল এই প্লায়া।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট দুটি ভূমিরূপ বর্ণনা করো।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট দুটি ভূমিরূপ হল –
গৌর –
মরু অঞ্চলে অবঘর্ষের জন্য বৃহদাকৃতির শিলাখণ্ডের নিম্নাংশ যত বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ঊর্ধ্বাংশ তত হয় না। এ ছাড়া, কঠিন ও কোমল শিলাস্তরে এই ধরনের বৃহদায়তন শিলাখণ্ড গঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোমল শিলা গঠিত অংশটি যদি নীচের দিকে থাকে, তাহলে বায়ুর অবঘর্ষের ফলে নীচের অংশটি খুব বেশি ক্ষয়ে যায় এবং ওপরের অংশটি কম ক্ষয় পেয়ে সমগ্র শিলাখণ্ডটি ব্যাঙের ছাতার মতো আকৃতিবিশিষ্ট হয়ে যায়। একে গৌর বা গারা বা ব্যাঙের ছাতার মতো শিলাস্তূপ বলা হয়। সাহারা মরুভূমিতে গৌর আকৃতির অনেক শিলাস্তূপ দেখা যায়।

জিউগেন –
মরুভূমির যেসব স্থানে ওপরের স্তরে ফাটলযুক্ত কঠিন শিলা এবং নীচের স্তরে কোমল শিলা থাকে, সেখানে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে কোমল শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাতের আকার ধারণ করে। অন্যদিকে, কঠিন শিলাগঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় চ্যাপটা ও সমতল শীর্ষদেশবিশিষ্ট পরস্পর সমান্তরাল টিলার আকারে অবস্থান করে। এইভাবে দুটি খাতের মধ্যে চ্যাপটা শীর্ষদেশ বিশিষ্ট টিলার ন্যায় ভূমিরূপকে জিউগেন বলা হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনোরান মরু অঞ্চলে এই ভূমিরূপ দেখা যায়।

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
অথবা, উদাহরণ ও চিত্রসহ বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করো।
বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপসমূহ –
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল –

বালিয়াড়ি –
বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, বড়ো প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনোরকম বাধা থাকলে অথবা না থাকলে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ ঢিপির মতো উঁচু হয়ে যায়। স্তূপাকারে সঞ্চিত এই বালির ঢিপিগুলিকে বলা হয় বালিয়াড়ি।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন –
- তির্যক বালিয়াড়ি এবং
- অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি।
তির্যক বালিয়াড়ি –
যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতির সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠে, তাদের বলে তির্যক বালিয়াড়ি। এদের আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় –
- বারখান,
- অ্যাকলে বালিয়াড়ি এবং
- রোর্ডস্ বালিয়াড়ি।
1. বারখান – যেসব বালিয়াড়ি একেবারে অর্ধচন্দ্রের আকারে গড়ে ওঠে, সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে বারখান। সাহারা মরুভূমিতে অনেক বারখান দেখা যায়।

2. অ্যাকলে বালিয়াড়ি – একাধিক বারখান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয়, তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয়। এই বালিয়াড়ির বাঁকের সামনের অংশকে লিংগুঅয়েড এবং পিছনের অংশকে বারখানয়েড বলে।
3. রোর্ডস্ বালিয়াড়ি – যেসব তির্যক বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে রোর্ডস্ বালিয়াড়ি। বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বারখানগুলিই রোর্ডস্ বালিয়াড়িতে পরিণত হয়।
অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি –
যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠে, সেইসব বালিয়াড়িকে বলা হয় অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি। এদের মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ, সেগুলিকে বলে সিফ বালিয়াড়ি। থর মরুভূমিতে সিফ দেখা যায়।

মস্তক বালিয়াড়ি –
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোনো টিলার বায়ুপ্রবাহের দিকমুখী অংশে বালিয়াড়ি গঠিত হলে, তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বা সংলগ্ন বালিয়াড়ি বলা হয়।
পুচ্ছ বালিয়াড়ি –
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোনো টিলার বায়ুপ্রবাহের বিপরীত দিকমুখী অংশে যদি সরু লেজের আকারে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়, তবে তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলা হয়।
পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি –
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোনো টিলার উভয়দিকে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হলে, সেই বালিয়াড়িকে পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি বলা হয়।

অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি –
মস্তক বা সংলগ্ন বালিয়াড়ির কিছুটা আগে ঘূর্ণি বাতাসের জন্য অনেক সময় বালি সঞ্চিত হয়ে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি।
অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি –
মরু অঞ্চলে অনেক সময় বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে সঞ্চিত বালুকারাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে সরে যায়। একে বলা হয় অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই চলমান বালিয়াড়িকে বলা হয় প্রিয়ান।
নক্ষত্র বালিয়াড়ি –
কোনো একটিকে কেন্দ্র থেকে বালিয়াড়িগুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে, সেই বালিয়াড়িগুলিকে নক্ষত্র বালিয়াড়ি বলা হয়।
লোয়েস সমভূমি –
মরুভূমির বালুকামিশ্রিত হলুদ রঙের শিথিল অতিসূক্ষ্ম পলিকণা বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়। একে লোয়েস বলে। এভাবে বায়ুবাহিত সূক্ষ্ম বালুকণা ও পলিকণা দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সেখানকার বিস্তৃত এলাকায় সঞ্চিত হয়ে যখন সমভূমি সৃষ্টি করে, তখন তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। উত্তর চিনের হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় এই লোয়েস সমভূমি দেখা যায়। মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বালুকারাশি উড়ে এসে চিনের হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠন করেছে।
মরু অঞ্চলে বায়ু কীভাবে কাজ করে?
মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রক্রিয়া –
মরু অঞ্চলে বায়ু তিন ভাবে কাজ করে। যেমন –

ক্ষয়কার্য –
বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়াগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
- অবঘর্ষ – মরু অঞ্চলে প্রবাহিত বায়ুতে বিভিন্ন মাপের শিলাচূর্ণ, বালি ও শক্ত কোয়ার্টজ কণা থাকে। এর ফলে বায়ুবাহিত এইসব পদার্থের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের ঘর্ষণে শিলাস্তরের গায়ে কোথাও আঁচড় কাটার মতো দাগ, কোথাও বেশ গভীর দাগ, কোথাও অসংখ্য ছোটো ছোটো গর্ত তৈরি হয়। এই ধরনের ক্ষয়কেই বলা হয় অবঘর্ষ। অবঘর্ষের ফলে গৌর, ইনসেলবার্গ, ইয়ারদাং, জিউগেন, ভেন্টিফ্যাক্ট, ড্রেইকান্টার, পেডিমেন্ট প্রভৃতি ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।
- অপসারণ – প্রবল বায়ুপ্রবাহ মরুভূমির বালুকাকে এক স্থান থেকে আর-এক স্থানে উড়িয়ে নিয়ে যায়। একে বলে অপসারণ। অপসারণের ফলে ধান্দ, মরূদ্যান, অবনত ভূমি প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
- ঘর্ষণ – প্রবল বেগে প্রবাহিত বায়ুর সঙ্গে যেসব পাথরখণ্ড থাকে সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঘর্ষণ ও ঠোকাঠুকিতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয়। একে ঘর্ষণ বলা হয়।
বহনকার্য –
ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাচূর্ণ ও বালিকণাকে বায়ু নিম্নলিখিত তিনটি প্রক্রিয়ায় বহন করে। যেমন-
- ভাসমান প্রক্রিয়া – সূক্ষ্ম বালুকণা হালকা বলে প্রবহমান বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় বহু দূরে উড়ে যায়।
- লম্ফন প্রক্রিয়া – কিছুটা বড়ো বা মাঝারি আয়তনের পাথর ভারী বলে বার বার ভূমিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে এগিয়ে চলে।
- গড়ানো প্রক্রিয়া – প্রবল বেগে প্রবাহিত বায়ুর সঙ্গে বালির বড়ো বড়ো দানা, পাথরের টুকরো প্রভৃতি ভূমিতে গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে চলে।
সঞ্চয়কার্য –
প্রবহমান বায়ুর গতিপথে গাছপালা, শিলাখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনোরকম বাধা থাকলে তাতে প্রতিহত হয়ে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হতে হতে ক্রমশ ঢিপির মতো উঁচু হয়ে ওঠে। বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে তির্যক বালিয়াড়ি (বারখান, অ্যাকলে বালিয়াড়ি, রোর্ডস্ বালিয়াড়ি), অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি, মস্তক বালিয়াড়ি, পুচ্ছ বালিয়াড়ি প্রভৃতি নানারকম বালিয়াড়ি এবং লোয়েস সমভূমি গঠিত হয়।
মরু অঞ্চলের প্রসারণ কীভাবে ঘটছে? কীভাবে এর প্রতিকার করা সম্ভব?
মরুভূমির প্রসারণের কারণ –
পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর মরুভূমিরও সম্প্রসারণ ঘটছে। ভারতের থর, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির আয়তনও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

- অধিক পশুচারণ – স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত মরুভূমির কোনো কোনো জায়গায় ঘাস জন্মায়। সেজন্য মরুভূমির মানুষের প্রধান জীবিকা পশুপালন। পশুচারণের জন্য পশুর পায়ের চাপে মাটির ওপরের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বৃষ্টিপাত এবং বায়ুপ্রবাহ ওই সব বালি, মাটিকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং অন্যত্র জমা করে।
- বনধ্বংস – গাছের শিকড় মাটিকে আটকে রাখে। আবার গাছ বাতাস চলাচলে বাধা দেয়। বৃষ্টির জল সরাসরি মাটিতে না পড়ে গাছে পড়লে মাটির ক্ষয় কম হয়। কিন্তু মরুভূমিতে যত গাছ কাটা চলবে ততই মরুভূমি এগোতে থাকবে।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি – পৃথিবীর সর্বত্র জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মরু অঞ্চলেও মানুষের সংখ্যা বাড়লে চাষবাস, পশুচারণ, পানীয় জল সংগ্রহ ও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ বাড়বে। এতে মরু সম্প্রসারণও বাড়বে।
- খাদ্যশস্যের উৎপাদন – অতিরিক্ত চাষবাসে জমির উর্বরতা কমে যায় ও ভূমিক্ষয় বাড়ে। বারবার লাঙল দিয়ে চাষ করার জন্য মাটি ঝুরঝুরে হয়ে যায় ও মরুকরণ ঘটে।
- জ্বালানি কাঠ – মরুভূমির বেশিরভাগ মানুষ জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে। তাই তারা মরু উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। যত বেশি গাছ কাটা হবে, তত মরুভূমির প্রসারণ ঘটবে।
এ ছাড়া, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জলসেচ, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন মরুভূমির প্রসারণে সহায়তা করেছে। বর্তমানে ভূপৃষ্ঠের প্রায় 40 শতাংশ স্থান শুকনো এবং কৃষিজমির প্রায় 80 শতাংশ ভূমি মরু এবং মরুপ্রায় হওয়ার অবস্থায় রয়েছে।
মরুভূমির অগ্রগমন প্রতিরোধ –
মরুভূমির এগিয়ে আসাকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। মরুভূমির প্রসারণ রোধ করার উপায়গুলি হল –
- বনভূমি তৈরি – মরুভূমির প্রান্ত বরাবর নিবিড়ভাবে বনভূমি গড়ে তুলতে হবে। গাছ মরু প্রসারণ রোধ করে। এমন উদ্ভিদ রোপণ করতে হবে যা মরু জলবায়ুর উপযুক্ত।
- পশুচারণ রোধ – পশুচারণে মাটির ক্ষয় বাড়ে। তাই পশুচারণ বন্ধ করতে হবে।
- জ্বালানির উৎস সন্ধান – কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। এর বদলে গোবরগ্যাস, ঘুটে, কেরোসিন, LPG ও অন্যান্য উৎস বা বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে।
- ভূমির সুস্থিত ব্যবহার – মরুভূমিতে মিশ্রকৃষির প্রসার, মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং আধুনিক জলসেচ পদ্ধতির প্রয়োগ, জৈব কৃষি, জলের সঠিক ব্যবহার, ওই জলবায়ুর উপযুক্ত ফসল নির্ধারণ ইত্যাদির মাধ্যমে মরুভূমির সম্প্রসারণ অনেকটাই আটকানো সম্ভব।
- জল সংরক্ষণ – বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, জলধারণ, ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ানো, জলের অপচয় কমানো, এমনকি জলের বহুমুখী ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার প্রভৃতি উপায় অবলম্বন করতে পারলে মরুভূমির প্রসার অনেকাংশে আটকানো সম্ভব।
জিউগেন ও ইয়ারদাং -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জিউগেন ও ইয়ারদাং -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | জিউগেন | ইয়ারদাং | 
| শিলাস্তরের অবস্থান | যেসব স্থানে বায়ুর গতিপথে অবস্থিত উচ্চভূমিতে ওপরে কঠিন ও নীচে কোমল শিলাস্তর অনুভূমিকভাবে পরপর সজ্জিত থাকে সেখানে বায়ুর অবঘর্ষ পদ্ধতিতে ক্ষয়ের মাধ্যমে জিউগেন গঠিত হয়। | যেসব ক্ষেত্রে কোনো উচ্চভূমিতে কঠিন ও কোমল শিলান্তর পরপর উল্লম্ব বা খাড়াভাবে সজ্জিত থাকে, সেখানে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা ইয়ারদাং সৃষ্টি হয়। | 
| ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য | কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় হয় বলে কোমল শিলাগঠিত অংশসমূহ ক্রমশ নীচু হয়ে খাতের আকার ধারণ করে এবং কঠিন শিলা গঠিত অংশসমূহ কম ক্ষয়ে টিলা বা শিরার আকারে অবস্থান করে। | কোমল শিলাস্তর অতি সহজেই ক্ষয়ে গিয়ে সুড়ঙ্গের আকার ধারণ করে এবং কঠিন উল্লম্ব শিলাস্তর কম ক্ষয়ে খাড়া দেওয়াল যুক্ত রৈখিক টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। | 
| শীর্ষদেশ | শীর্ষদেশ সমতল হয়। ক্ষয়ের ফলে শীর্ষদেশ ক্রমশ চ্যাপটা ও নীচু হতে থাকে। | শীর্ষদেশ অসমতল হয়। ক্ষয়ের ফলে শীর্ষদেশ ক্রমশ তীক্ষ্ণ হয়। | 
| উচ্চতা | এগুলির উচ্চতা সাধারণভাবে 30 মিটারের মধ্যে থাকে। | এদের উচ্চতা গড়ে 7 মিটার হয়। | 
| উদাহরণ | আফ্রিকার কালাহারি, অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনোরান মরুভূমিতে অনেক জিউগেন দেখা যায়। | সাহারা মরুভূমি ও আরবীয় মরুভূমিতে অনেক ইয়ারদাং আছে। | 
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “বায়ুর বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
 





মন্তব্য করুন