মাধ্যমিক ভূগোল – বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - বায়ুমণ্ডল - বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী?

বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি তিন ধরনের –

  1. গ্যাসীয় উপাদান,
  2. জলীয়বাষ্প এবং
  3. ধূলিকণা।
  • গ্যাসীয় উপাদান – বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা 78.08 ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা 20.94 ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাস ছাড়াও বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প মাত্রায় আর্গন (শতকরা 0.93 ভাগ), কার্বন ডাইঅক্সাইড (শতকরা 0.03 ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাস আছে।
  • জলীয়বাষ্প – গ্যাসীয় উপাদানগুলির পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলে কিছু পরিমাণে জলীয়বাষ্প থাকে।
  • ধূলিকণা – বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে ধূলিকণার পরিমাণ ও ঘনত্ব সর্বাধিক। এ ছাড়া ছাই, লবণের কণা প্রভৃতি থাকে। এ ছাড়াও বায়ুমণ্ডলে উল্কাভস্ম, ধাতব কণা প্রভৃতি বিক্ষিপ্তভাবে ভেসে বেড়ায়। এগুলিকে একত্রে এরোসল বলে।

বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো।

বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান নাইট্রোজেন (78.08%)। তাই এর গুরুত্বও যথেষ্ট।

  • প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহগঠন – প্রাণীজগৎ সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার না করলেও কতকগুলি শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া (যেমন – রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। এই জাতীয় উদ্ভিদগুলিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রাণীরা নিজের দেহের নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটায়।
  • মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি – শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন সংগ্রহের মাধ্যমে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। মানুষ শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদের চাষ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
  • সার উৎপাদন – বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব নির্ণয় করো।

বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ (20.94%) খুব বেশি না হলেও জীবজগতের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

  • প্রাণের প্রধান উপকরণ – অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে জীবনধারণের জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। তাই অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব।
  • বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা – বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
  • আবহবিকারে সাহায্য করা – অক্সিজেন বিভিন্ন শিলাগঠনকারী খনিজের সঙ্গে সহজে মিলিত হয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলার আবহবিকারে বা বিচূর্ণীভবনে সাহায্য করে। এইরূপ রাসায়নিক আবহবিকারের (জারণ) ফলেই লোহায় মরিচা ধরে।
  • দহনক্রিয়ায় সাহায্য করা – অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া দহনক্রিয়া সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, অক্সিজেন ছাড়া সমগ্র বিশ্বই প্রায় অচল।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ খুবই সামান্য (0.03%) হলেও এর গুরুত্ব সীমাহীন।

  • খাদ্য উৎপাদন – কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, এই গ্যাস না থাকলে পৃথিবীর উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণীজগৎ উভয়ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ – বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে। কারণ, কার্বন ডাইঅক্সাইড তাপ শোষণ করে।
  • আবহবিকার – ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের শিলার আবহবিকারেও কার্বন ডাইঅক্সাইড (কার্বনেশন -এর মাধ্যমে) -এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
  • খনিজ পদার্থ গঠনে সাহায্য – অঙ্গারময় খনিজ এবং চুনজাতীয় খনিজ গঠনেও কার্বন ডাইঅক্সাইড সাহায্য করে।
  • পরিবেশদূষণ – বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ সামান্য বেড়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে।

বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।

বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব অপরিসীম।

  • বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ – বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয়। বায়ুতে জলীয়-বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়।
  • জীবের অস্তিত্ব রক্ষা – জলের আর-এক নাম জীবন। তাই, জলীয়বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব হত না।
  • জলবায়ু নির্ধারণ – শিশির, কুয়াশা, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি জলীয়বাষ্পের বিভিন্ন অবস্থা কোনো স্থানের জলবায়ু নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন – বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র, আবার স্বল্প বৃষ্টিপাত বা জলীয়বাষ্পের স্বল্পতা শুষ্ক মরু জলবায়ুর সৃষ্টি করে।
  • তাপের ধারক – জলীয়বাষ্প প্রচুর, পরিমাণে তাপ ধারণে সক্ষম। বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আবার জলীয়বাষ্পহীন শুক বাতাসের তাপমাত্রা কম হয়।

বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব নির্ণয় করো।

বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান ধূলিকণা। এর গুরুত্বও উল্লেখযোগ্য।

  • মেঘ সৃষ্টি – বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয়বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
  • সৌরতাপ বণ্টন – বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনে প্রভাব বিস্তার করে।
  • আকাশের বর্ণ নির্ধারণ – ধূলিকণার জন্যই আকাশে এত বর্ণবৈচিত্র্যের মেলা, এত সৌন্দর্য। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় ধূলিকণার দ্বারা সূর্যরশ্মির প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণ ঘটে। এভাবেই সৃষ্টি হয় নানা বর্ণের তরঙ্গ। এগুলির মধ্যে নীলাভ আলোর প্রাধান্য বেশি, তাই আকাশ এত নীল।

ট্রপোস্ফিয়ারের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ট্রপোস্ফিয়ারের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা 6.5°C হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊধর্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় প্রায় -55°C থেকে -66°C।
  • বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়।
  • বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা পাওয়া যায়। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। বায়ুপ্রবাহ, ঘূর্ণবাত, টর্নেডো, মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উষ্ণতা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে।

ওজোনস্তরের বিনাশের কারণ ব্যাখ্যা করো।

ওজোনস্তরের বিনাশ বা ধ্বংসের কারণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –

প্রাকৃতিক কারণ –

  • অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া – সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোন অপু ভেঙে অক্সিজেন অণু ও পরমাণু সৃষ্টি হয়। এইভাবে ওজোনস্তর ক্রমশ পাতলা হলে, তাকে ওজোন হ্রাস বলে।
  • সূর্যরশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি – প্রতি 10/11 বছর অন্তর সূর্যরশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন নাইট্রাস অক্সাইডে পরিণত হয়, যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজোনস্তরকে ক্ষয় করে।
  • অন্যান্য – আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে মেরু অঞ্চল থেকে উপমেরু অঞ্চলের দিকে বায়ুর সঞ্চালন প্রভৃতি কারণেও ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মনুষ্যসৃষ্ট কারণ –

মানুষের বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়াকলাপের ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হ্যালন, সালফেট, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং এগুলি ওজোনস্তরের বিনাশ ঘটায়। যেমন –

  • ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যৌগের প্রভাব – এই গ্যাসই ওজোন ধবংসের মূল উৎস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC গ্যাসের যৌগ ভেঙে ক্লোরিন পরমাণু তৈরি হয় এবং ওগুলিই ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন গ্যাসকে ধ্বংস করে। ফলে ওজোনস্তরের ক্ষতি হয়। O3 + Cl → CIO + O2
  • হ্যালন যৌগের প্রভাব – সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি হ্যালন-1211 এবং হ্যালন-1301 -কে ভেঙে ফেলে ব্রোমিন পরমাণুকে মুক্ত করে। এজন্য ওজোনস্তর ধ্বংস হয়।
  • সালফেট যৌগের প্রভাব – কারখানার চিমনি থেকে যেসব কালো ধোঁয়া বের হয় তার মধ্যে প্রচুর সালফার ডাইঅক্সাইড আছে। এরা সূর্যরশ্মির প্রভাবে সালফেট যৌগ তৈরি করে ও ওজোনস্তরের ক্ষয় ঘটায়।
  • বিমান চলাচলের জন্য – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে চলাচলকারী জেট বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড ওজোনস্তরকে ক্ষয় করে।

বায়ুর সাধারণ ধর্মগুলি কী কী?

বায়ুর কতকগুলি সাধারণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে –

  • বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে বায়ু ঘন এবং ভারী হয়।
  • উষ্ণতা যত বাড়ে বায়ু ততই আয়তনে প্রসারিত ও হালকা হয়।
  • উষ্ণ বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বেশি।
  • বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ কমে।
  • শুষ্ক বায়ুর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা।
  • উষ্ণ বায়ু হালকা বলে ওপরে উঠে যায় আর শীতল বায়ু ভারী বলে নীচে নেমে আসে।
  • ভূপৃষ্ঠের কাছে বায়ুর ঘনত্ব বেশি আর ওপরের বায়ুতে ঘনত্ব কমে যায়।

বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না -এর কারণ কী?

বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না, কারণ –

  • বায়ুমণ্ডল না থাকলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিনের বেলায় প্রায় 70°C এবং রাতের বেলা -145°C হত। এইরকম তাপমাত্রায় কোনো প্রাণ সৃষ্টি সম্ভব হত না।
  • বায়ুর অক্সিজেন মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের শ্বাসকার্যে জরুরি এবং বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদ দেহে খুবই প্রয়োজন। তাই বায়ুমণ্ডল আছে বলেই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।
  • বায়ুর জলীয়বাষ্প ঊর্ধ্বাকাশে ঘনীভূত হয়ে মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বৃষ্টিপাত না হলে জলে প্রাণের প্রথম আবির্ভাব সম্ভব হত না। তার ফলে কেউই বেঁচে থাকতে পারত না।
  • বায়ুস্তরের ওজোন গ্যাস সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে।

বায়ুমণ্ডলে ওজোনস্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে বলে মনে হয়?

ওজোনস্তর আছে বলে – বায়ুর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনস্তর থাকে বলেই সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মিকে সে বাধা দেয় বা শোষণ করে নেয়। এজন্য এই ক্ষতিকর রশ্মি ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত এসে পৌঁছতে পারে না। অর্থাৎ ওজোনস্তর পৃথিবীকে ছাতার মতো সুরক্ষা দিয়ে চলেছে। যার ফলে সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।

ওজোনস্তরে ছিদ্র হলে – ওজোনস্তরে ছিদ্র হলে ওই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে, যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর প্রাণী এবং উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হবে। প্রাণীদের চামড়ায় ক্যানসার, চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া, ত্বকের অন্যান্য রোগ সৃষ্টি, উদ্ভিদের পাতা পুড়ে যাওয়া, জলের মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে এবং বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে।

ওজোনস্তর ধ্বংসের ফলাফল লেখো।

বর্তমানে CFC, হ্যালন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফেট কণা প্রভৃতির বৃদ্ধির জন্য ওজোনস্তর ক্রমেই ধবংস হচ্ছে। এর ক্ষতিকর ফলাফলগুলি হল –

  • জলবায়ুর ওপর – ওজোনস্তর ধ্বংসের জন্যই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ে তাই পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ ওজোনস্তরের বিনাশ।
  • মানবজীবনে প্রভাব – অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের চামড়ায় ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষের চোখের কর্নিয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে।
  • বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব – ওজোনস্তর ধ্বংসে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীদের মৃত্যু ঘটছে।

জেট বিমানগুলি বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে এবং কেন?

জেট বিমানগুলি বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে। কারণ –

  • বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনো রকম জলীয়বাষ্প নেই। তাই এই স্তরে কোনো ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের মতো ঘটনাগুলি ঘটে না।
  • তা ছাড়া এই স্তরে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণ (friction) জনিত বাধা খুবই কম। এর ফলে মূল্যবান জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হয়।
  • ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ার দিয়ে চলাচলকারী জেট বায়ুপ্রবাহের জন্যও বিমানগুলির চলাচল করতে সুবিধা হয়। সেকারণের জন্যই জেট বিমান স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে।

ওজোনস্তরের সংকোচন কীভাবে হচ্ছে?

ওজোনস্তর সংকোচনের জন্য মানুষের কার্যাবলি প্রধানত দায়ী। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, হ্যালন প্রভৃতি গ্যাস ক্রমাগত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে ওজোনস্তরের ক্ষতি করছে। এগুলি থেকে নির্গত ক্লোরিন ও ব্রোমিনের অণুগুলি বহু বছর ধরে হাজার হাজার ওজোনের অণু ধ্বংস করতে সক্ষম। ওজোন ধ্বংসকারী এই গ্যাসগুলির দ্বারা ব্যাপক ক্ষয় করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ওজোনের স্তর ক্রমাগত পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ গোলার্ধে, বিশেষত অ্যান্টার্কটিকার ওপর ওজোনস্তরে কয়েক জায়গায় বড়ো বড়ো ছিদ্র দেখা দিয়েছে এবং ওইসব ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে বিপুল পরিমাণে অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে চলে আসছে।

হোমোস্ফিয়ার ও হেটেরোস্ফিয়ার -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

হোমোস্ফিয়ার ও হেটেরোস্ফিয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়হোমোস্ফিয়ারহেটেরোস্ফিয়ার
ধারণাবায়ুমণ্ডলের যে স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের উপাদানের অনুপাত এবং তাদের গঠন প্রায় সমান, তাকে হোমোস্ফিয়ার বলে।বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের উপাদানগুলির অনুপাত এবং রাসায়নিক গঠন সমান হয় না। তাই একে বিষমমণ্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার বলে।
অবস্থানএই স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 90 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।হোমোস্ফিয়ারের ওপর 90 কিমি থেকে 10000 কিমি পর্যন্ত এই স্তরটি রয়েছে।
শ্রেণিবিভাগউষ্ণতা অনুযায়ী এই স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ার – এই চারভাগে ভাগ করা যায়।রাসায়নিক গঠন অনুসারে এই স্তরকে আণবিক নাইট্রোজেন, পারমাণবিক অক্সিজেন, হিলিয়াম এবং হাইড্রোজেন স্তরে ভাগ করা যায়।

ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ট্রপোস্ফিয়ারস্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
অবস্থাননিরক্ষীয় অঞ্চলে 18 কিমি এবং দুই মেরুতে 8 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত।ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরে 50 কিমি পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
অর্থট্রপো কথার অর্থ পরিবর্তন। ট্রপোস্ফিয়ার শব্দের অর্থ পরিবর্তনযুক্ত বা অশান্ত অঞ্চল।স্ট্র্যাটো কথার অর্থ শান্ত। অর্থাৎ এটি শান্ত অঞ্চল।
উষ্ণতার পরিবর্তনউচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমতে থাকে।উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা বাড়ে।
জলবায়ুতে প্রভাবএই স্তরেই ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনা ঘটে।এই স্তরে কোনো মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি হয় না। এই স্তরে ওজোন গ্যাস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – বামদিক ডানদিক মেলাও

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – একটি অথবা দুটি শব্দে উত্তর দাও [Marks – 1]

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse