মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ - ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার সম্পর্ক আলোচনা করো।

স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে জলবায়ু তথা উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত এবং ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। যেমন –

  • সারাবছরব্যাপী অধিক উষ্ণ-আর্দ্র ও বৃষ্টিসমন্বিত নিরক্ষীয় অঞ্চলে চিরহরিৎ উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায়, 
  • গ্রীষ্মে উষ্ণ-আর্দ্র এবং শীতে শুষ্ক-শীতল ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে পর্ণমোচী উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায়, 
  • মরু অঞ্চলে কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়,
  • অল্পবৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে দেখা যায় তৃণভূমি, 
  • পার্বত্য ও শীতল অঞ্চলে সরলবর্গীয় অরণ্য দেখা যায়,
  • জলাভূমিতে জন্মায় জলজ উদ্ভিদ। আবার,
  • লবণাক্ত মৃত্তিকায় ও উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়,
  • পডসল মৃত্তিকায় সরলবগীয় উদ্ভিদ,
  • চারনোজেম মৃত্তিকায় তৃণভূমি এবং
  • লোহিত ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ দেখা যায়।

ভারতের বনভূমিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

অথবা, ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলয়ের নাম লেখো।

উচ্চতা, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বা বনভূমিকে প্রধানত পাঁচটি শ্রেণি বা বলয়ে বা অঞ্চলে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল –

  1. চিরসবুজ অরণ্য – এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলি হল শিশু, গর্জন, তুন প্রভৃতি।
  2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য – শাল, সেগুন, মহুয়া প্রভৃতি হল এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য বৃক্ষ।
  3. কাঁটাঝোপ ও মরু উদ্ভিদ – এই ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে ক্যাকটাস, ফণীমণসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
  4. পার্বত্য অঞ্চলের অরণ্য – যাদের মধ্যে ম্যাগনেশিয়া, সিঙ্কোনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
  5. উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য – এই ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ভারতের উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য সম্পর্কে কী জানো?

গঙ্গার বদ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবন হল পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি অঞ্চল। এ ছাড়া, ওডিশার মহানদী বদ্বীপ অঞ্চলে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও গুজরাতের কচ্ছ উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলেও এইপ্রকার বনভূমি দেখা যায়।

ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ

ভারতের উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য –

  • লোনা মাটিতে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয় বলে গাছগুলির কিছু শিকড় মাটির ওপরে উঠে আসে, এগুলিকে বলে শ্বাসমূল। 
  • জোয়ারভাটা এবং ঢেউ -এর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গাছগুলির গোড়ার দিকে অনেক ঠেসমূল থাকে।
  • এইসব অঞ্চলে অনবরত জোয়ারভাটা হয় বলে মাটি লোনা এবং সবসময় ভিজে থাকে।
  • মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে জল পাওয়া যায় বলে গাছে সারাবছর পাতা থাকে।
  • স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেঁচে থাকতে হয় বলে গাছের কাণ্ডগুলি সুদৃঢ় হয়।
  • জোয়ারভাটা খেলে বলে গাছগুলিতে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায়।

উদ্ভিদ – ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হেঁতাল, কেয়া, গোলপাতা প্রভৃতি গাছ বেশি দেখা যায়।

উপযোগিতা –

  • ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির কাঠ খুব মূল্যবান। গোরুর গাড়ির চাকা, নৌকা, লাঙল, বাড়িঘরের খুঁটি প্রভৃতি তৈরির জন্য এই কাঠ ব্যবহার করা হয়।
  • এই অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু, গোলপাতা প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়।

ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্যের অবস্থান –

  • সাধারণত তুষারপাত-অধ্যুষিত অঞ্চলে সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য সৃষ্টি হয়।
  • ভারতের মধ্যে একমাত্র পূর্ব হিমালয়ে 2500 মিটার থেকে 4000 মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000 থেকে 3200 মিটার উচ্চতায় বেশি তুষারপাতের কারণে এই বনভূমি বা অরণ্য দেখা যায়।

ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্যের বৈশিষ্ট্য – এই অরণ্যের উদ্ভিদগুলি –

  • মাঝারি উচ্চতার, 
  • শঙ্কু আকৃতির,
  • ছুঁচোলো পত্রযুক্ত এবং 
  • নরম কাঠের হয়।

ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্যের উদ্ভিদ – এই অরণ্যে পাইন, ফার, রুপালি ফার, স্প্রুস, লরেল, দেবদারু, রডোডেনড্রন প্রভৃতি সরলবর্গীয় গাছ জন্মায়।

ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্যের উপযোগিতা – নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলিতে কাগজ শিল্প ও কাঠ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এই অরণ্যের কাঠ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হলেও দুর্গমতার জন্য ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সরলবর্গীয় অরণ্য খুব কমই ব্যবহৃত হয়।

বৃক্ষরোপণে ভারতের সাধারণ মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে কেন?

ভারতের সাধারণ মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কারণ –

  • বনভূমি বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
  • বনভূমির অভাবে বন্যা, অনাবৃষ্টি, মাটি ক্ষয় প্রভৃতি নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক কথায় বলা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
  • ভারতে বনভূমির পরিমাণ খুবই কম। দেশের মোট ভৌগোলিক আয়তনের শতকরা মাত্র 24.01 ভাগ স্থানে বনভূমি আছে।
  • পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, দেশের অন্তত এক তৃতীয়াংশ স্থানে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে আমাদের দেশটি সম্পূর্ণভাবে মরুভূমিতে পরিণত হবে।

হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কী কী স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়?

হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য হয় বলে পর্বতের পাদদেশ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে স্বাভাবিক উদ্ভিদের অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। নীচে তা সারণি আকারে দেখানো হল।

স্বাভাবিক উদ্ভিদআঞ্চলিক বণ্টনপ্রধান প্রধান উদ্ভিদসৃষ্টির কারণ
চিরসবুজ অরণ্যপূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলে অর্থাৎ 1000 মিটার থেকে 2000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল।শিশু, চাপলাস, গর্জন প্রভৃতিউষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের আধিক্য (উষ্ণতা – 30°C-35°C, বৃষ্টিপাত- 200 সেমি-র অধিক) এই অরণ্য বিকাশে সহায়ক।
মিশ্র বনভূমিপূর্ব হিমালয়ের 1000 মিটার থেকে 2500 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ের 500 মিটার থেকে 2000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল।পপলার, ওক, ম্যাপল, বার্চ, লরেল প্রভৃতিউচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা হ্রাসের কারণে নাতিশীতোষ্ণ পর্ণমোচী এবং নাতিশীতোষ্ণ চিরসবুজ-উভয়প্রকার বৃক্ষের একত্র সমাবেশ দেখা যায়।
সরলবর্গী বনভূমিপূর্ব হিমালয়ের 2500 মিটার থেকে 4000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ের 2000 মিটার থেকে 3000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল।পাইন, ফার, স্প্রুস, লরেল প্রভৃতিপ্রবল তুষারপাতের হাত থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে এখানে বিশেষ ধরনের অভিযোজনগত (শঙ্কু আকৃতির বৃক্ষ) বৈশিষ্ট্য সমন্বিত উদ্ভিদ বিকাশ লাভ করেছে।
আল্লীয় উদ্ভিদপশ্চিম হিমালয়ের সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলের আরও ওপরে প্রায় 4500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল।জুনিপার, রডোডেনড্রন, লার্চ, ভুর্জ, প্রভৃতি নানা-রকমের তৃণ ও গুল্ম।বছরের কিছুটা সময় মাটি বরফাবৃত থাকার পর বসন্তকালে বরফের গলনে মৃদু শীতল আবহাওয়ায় এই ধরনের উদ্ভিদ বিকাশ লাভ করেছে।

বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায় কেন?

বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলবিশিষ্ট উদ্ভিদের যে অরণ্য দেখা যায় তাকে বলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এখানে এই ধরনের অরণ্য গড়ে ওঠার কারণগুলি হল –

  • লবণাক্ত মাটি নরম ও আঠালো হওয়ায় মাটির ভিতরে ঠিকমতো বায়ু চলাচল করতে পারে না। এজন্য ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসকার্য চালানোর জন্য শ্বাসমূল থাকে।
  • বদ্বীপ এলাকায় অনবরত জোয়ারভাটা হয় ও সমুদ্রের ঢেউ এসে আঘাত করে এবং প্রচণ্ড জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়। তাই, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির গোড়ায় ঠেসমূল থাকে।
  • জলময় পরিবেশে এই অরণ্য গড়ে ওঠে বলে গাছের ফল বা বীজগুলি জলে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় বা ভেসে অন্য কোথাও চলে না যায় তাই ফলগুলি মাটিতে পড়ামাত্র বা পড়ার আগেই তা থেকে অঙ্কুর বের হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম। এই অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হেঁতাল, কেওড়া, পিটুলি প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

ভারতে অতি আর্দ্র চিরহরিৎ গাছের বনভূমি কোথায় দেখা যায় ও এদের বৈশিষ্ট্য কী?

অবস্থান – পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের খাসি, জয়ন্তিয়া, গারো ও লুসাই পাহাড়ি এলাকা, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশভূমি প্রভৃতি এলাকায় অতি আর্দ্র চিরহরিৎ গাছের বনভূমি দেখা যায়। এই জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে প্রধান হল – শিশু, গর্জন, তুন, পুন প্রভৃতি।

ভারতে অতি আর্দ্র চিরহরিৎ গাছের বনভূমি বৈশিষ্ট্য –

  • ভারতের 250-300 সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ও 27°C বার্ষিক গড় উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলে এই জাতীয় অরণ্য দেখা যায়।
  • বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য ভূমি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না। এজন্য গাছের পাতা সবসময় সবুজ থাকে।
  • উষ্ণ-আর্দ্র পরিবেশের জন্য এই অরণ্যে গাছপালা জন্মায় খুব বেশি এবং সেগুলি বাড়েও খুব দ্রুত। 
  • গাছগুলি হয় সুদীর্ঘ। 
  • অরণ্যের তলদেশ লতাগুল্ম, আগাছা ইত্যাদিতে পূর্ণ থাকে এবং চারপাশে একটা ভিজে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বিরাজ করে।
  • গাছের শাখাপ্রশাখায় অর্কিড-জাতীয় পরগাছা জন্মায়।

সামাজিক বনসৃজন কাকে বলে?

ধারণা – প্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের আর্থিক সাহায্যের লক্ষ্যে যখন নির্ধারিত অরণ্যসীমার বাইরে, অব্যবহৃত জমি বা পতিত জমিতে বিশেষ বিশেষ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অরণ্য সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে।

সামাজিক বনসৃজন

সামাজিক বনসৃজনের জন্য উপযুক্ত ভূমি –

  • খাল ও নদীর পাড়ের জমি,
  • রেলপথ ও সড়কপথের দু-পাশের ফাঁকা জমি,
  • পুকুর বা দিঘির পাড়,
  • খনি এলাকার অব্যবহৃত জমি,
  • বিদ্যালয়, অফিস, ধর্মস্থান প্রভৃতির উন্মুক্ত জায়গা,
  • পতিত জমি প্রভৃতি।

সামাজিক বনসৃজনের উদ্দেশ্য –

  • দেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠের উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে অব্যবহৃত, পতিত ও পরিত্যক্ত জমিকে লাভজনক কাজে ব্যবহার করা,
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা,
  • ভূমিক্ষয় রোধ,
  • ফলমূলের উৎপাদন বাড়ানো ইত্যাদি।

উষ্ণ মরু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উষ্ণ মরু অঞ্চলে ‘জেরোফাইট’ শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশে জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য উষ্ণ মরু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যেমন –

  • মাটির গভীর থেকে জল সংগ্রহ করার জন্য উদ্ভিদের শিকড় খুব দীর্ঘ হয়।
  • গাছে পাতা থাকে না (ক্যাকটাস) বা থাকলেও খুব কম এবং সেগুলি হয় ছোটো ছোটো (বাবলা)।
  • জল ধরে রাখার জন্য কাণ্ড ও পাতা শাঁসযুক্ত হয় (ব্যারেল ক্যাকটাস)।
  • কাণ্ড মোমজাতীয় পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে।
  • গাছের গায়ে প্রচুর লোম ও কাঁটা থাকে।
  • উদ্ভিদগুলি বেশ দূরে দূরে জন্মায় অর্থাৎ ছড়ানো হয়।
  • পরাগ মিলন সুনিশ্চিত করার জন্য উদ্ভিদগুলির ফুল উজ্জ্বল রঙের এবং তীব্র গন্ধযুক্ত হয়।
উষ্ণ মরু উদ্ভিদ

উদাহরণ – ভারতের রাজস্থান মরু অঞ্চলে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়।

ডেকান ট্র্যাপ কী?

‘ডেকান’ কথাটির অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘ট্র্যাপ’ কথাটির অর্থ ধাপ বা সিঁড়ি। দাক্ষিণাত্য মালভূমি ডেকান ট্র্যাপ নামে পরিচিত। তরল লাভা জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে বলে এই অঞ্চলটি সাধারণভাবে সমতল হলেও পর্বতের মাথাগুলি চ্যাপটা হয়। সমগ্র মালভূমিটি পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে বলে ডেকান ট্র্যাপ নামকরণ করা হয়েছে।

মরূদ্যান কী?

ঢাকা ধূ-ধূ মরুভূমির মাঝে সবুজ গাছপালায় ঢাকা উদ্যানের মতো কোনো স্থান সৃষ্টি হলে তাকে বলে মরূদ্যান। মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের অপসারণ কার্যের ফলে ভূমিতে ছোটো-বড়ো নানা আকৃতি ও আয়তনের গর্ত সৃষ্টি হয়। বায়ুপ্রবাহের অপসারণ ক্ষমতা প্রবল হলে ভূপৃষ্ঠে বিশাল এলাকা জুড়ে অবনত এলাকা বা খাদ তৈরি হয়। এইভাবে বিশাল এলাকা জুড়ে বহুদিন ধরে বালি অপসারিত হতে হতে অবনত অংশটির গভীরতা ভূগর্ভের জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন ওখানে জলাশয় সৃষ্টি হয়। ওই জলাশয়-সংলগ্ন স্থানের ভিজে বালি বা মাটিতে তখন কিছু কিছু সবুজ গাছপালা জন্মায়। এইভাবে ওখানে সৃষ্টি হয় মরূদ্যান।

হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অংশের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকৃতির কেন?

হিমালয় পর্বতে বিভিন্ন প্রকৃতির স্বাভাবিক উদ্ভিদ থাকার কারণগুলি হল –

  • ভূমির উচ্চতার প্রভাব – উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত তথা জলবায়ুর পরিবর্তন হলে স্বাভাবিক উদ্ভিদেরও পরিবর্তন হয়। হিমালয়েও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে। এজন্য হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলে যে ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায়, ক্রমশ ওপরের দিকে তার পরিবর্তন হয়।
  • বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার তারতম্য – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা সরাসরি এসে পূর্ব হিমালয়ে আঘাত করে বলে পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় পূর্ব হিমালয়ে বৃষ্টিপাত অনেক বেশি হয় এবং সেখানকার বাতাসে আর্দ্রতাও বেশি থাকে। এর ফলে একই উচ্চতায় পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতিগত অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
  • অক্ষাংশগত অবস্থানের পার্থক্য – পূর্ব হিমালয়ের তুলনায় পশ্চিম হিমালয় উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত বলে পশ্চিম হিমালয়ে ঠান্ডা বেশি। এজন্যও পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে স্বাভাবিক উদ্ভিদের তারতম্য দেখা যায়।

চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে? ভারতে কোন্ অঞ্চলে এই জাতীয় অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়?

চিরহরিৎ অরণ্য – যে সকল গাছ বছরের কোনো সময়ই তার সব পাতা ঝরিয়ে দেয় না তাদের বলে চিরহরিৎ গাছ। যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেন্টিমিটারেরও বেশি, সেইসব অঞ্চলে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয়। এর কারণ বেশি বৃষ্টির জন্য ওইসব অঞ্চলে মাটি সবসময় ভিজে থাকে, ফলে উদ্ভিদের কখনও জলের অভাব হয় না। এই জাতীয় অরণ্যে কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে উদ্ভিদের সব পাতা একসঙ্গে ঝরে না গিয়ে সারাবছর ধরে ধীরে ধীরে ঝরতে থাকে বলে উদ্ভিদকে চিরসবুজ দেখায়। এই ধরনের অরণ্যে শিশু, গর্জন, তুন, পুন, বিশপকাঠ, গোলাপকাঠ প্রভৃতি চিরসবুজ গাছ জন্মায়।

ভারতে অবস্থান – পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, অসমের পার্বত্য অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায়।

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে? 

যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করা হয় বহুবিধ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য (যেমন – বন্য নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছচাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি) তাকে বলে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা। যেমন – দামোদর উপত্যকা প্রকল্প ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা।

সামাজিক বনসৃজন ও কৃষি বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য করো।

সামাজিক বনসৃজন ও কৃষি বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য –

ভিত্তিসামাজিক বনসৃজনকৃষি বনসৃজন
ধারণাপ্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের জন্য যখন নির্ধারিত অরণ্যসীমার বাইরে অব্যবহৃত জমি বা পতিত জমিতে অরণ্য সৃষ্টি করা হয়, তখন তার নাম সামাজিক বনসৃজন।চাষ-আবাদের সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যখন তার কৃষিজমিতে অথবা পতিত জমিতে গাছপালা লাগিয়ে অরণ্য গড়ে তোলে, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
লক্ষ্যঅব্যবহৃত, পতিত ও পরিত্যক্ত জমিকে লাভজনক কাজে ব্যবহার করা, বনজদ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং পরিবেশ তথা আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের উন্নতি ঘটানো।অরণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা, বনজ দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানো, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং কৃষকের আয় বাড়ানো।
ব্যবহৃত ভূমিখাল ও নদীর পাড়ের জমি, রেলপথ ও সড়কপথের দু-পাশের ফাঁকা জায়গা, বিদ্যালয়, অফিস, ধর্মস্থান, বাড়ি প্রভৃতির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা।কৃষিজমির আল ও সীমানা, পুকুরের পাড়, বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা প্রভৃতি।
উপযোগী উদ্ভিদখাল ও নদীর পাড়ে বাবলা, ইউক্যালিপটাস, আম, নিম; রেললাইন ও সড়কপথের পাশে নিম, বট, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, দেবদারু; বিদ্যালয়, অফিস, বাড়ির আশেপাশে আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি।পতিত জমিতে শাল, সেগুন, নিম, শিরীষ; কৃষিজমির আল নারকেল, তাল, সুপারি, খেজুর, বাবলা; পুকুরের ধারে কলা, নারকেল, সুপারি; অন্যান্য জায়গায় আম, জাম, লিচু প্রভৃতি।
অন্যান্যএর মাধ্যমে গাছপালার সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, বিভিন্ন প্রকার বনজ দ্রব্য উৎপাদিত হয়, ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য হয়।কাঠ, ফলমূল প্রভৃতি বনজ দ্রব্যের মাধ্যমে কৃষকের অতিরিক্ত আয় হয়, ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।

ভারতের চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী অরণ্যের মধ্যে তিনটি পার্থক্য করো।

চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী অরণ্যের তিনটি পার্থক্য –

ভিত্তিঅরণ্যের প্রকৃতিপর্ণমোচী অরণ্য
অরণ্যের প্রকৃতিবেশি বৃষ্টিপাত এবং বছরের অধিকাংশ সময় আর্দ্র আবহাওয়া থাকে বলে গাছের পাতা একসঙ্গে ঝরে যায় না। সারাবছরই অরণ্য সবুজ থাকে।গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্র আবহাওয়া থাকলেও শীতকাল শুষ্ক হওয়ায় ওই সময় গাছের অধিকাংশ পাতা ঝরে যায় এবং তখন অরণ্য রুক্ষ ও শুষ্ক রূপ নেয়।
বৃক্ষউষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য এই অরণ্যের বৃক্ষগুলি দ্রুত বাড়ে, তাদের শাখাপ্রশাখা ক্রমশ ওপর দিকে ছড়িয়ে যায় এবং পাতাগুলি হয় খুব বড়ো। অরণ্যের উপরিভাগ সবুজ চাঁদোয়ার মতো প্রায় নিশ্ছিদ্রভাবে বিস্তৃত হয়।বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে বলে অরণ্যের বৃক্ষগুলির উচ্চতা হয় মাঝারি, এদের শাখাপ্রশাখা এলেমেলোভাবে বাড়ে, পাতার কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না এবং অরণ্যের উপরিভাগ উঁচুনীচু হয়।
অরণ্যের তলদেশঅরণ্যের তলদেশ ঝোপঝাড়, লতাগুল্মে পূর্ণ থাকে এবং তাই অরণ্যের ভিতর প্রবেশ করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়।অরণ্যের তলদেশে ঝোপঝাড়, লতাগুল্ম খুবই কম থাকে এবং বৃক্ষগুলি ফাঁকা ফাঁকাভাবে অবস্থান করে। তাই অরণ্যে সহজেই প্রবেশ করা যায়।

ভারতে কাঠ শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি কেন?

ভারতে তেমন কাষ্ঠ শিল্পের বিকাশ হয়নি। কারণ –

  • ঘন অরণ্য – ভারতের চিরহরিৎ বা পর্ণমোচী অরণ্য যথেষ্ট ঘন। ওই ঘন অরণ্য থেকে কাঠ বেছে সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। ঘন অরণ্য থেকে কাঠ সংগ্রহ করাও বেশ কষ্টসাধ্য।
  • নানা প্রজাতির উদ্ভিদ – ভারতের ক্রান্তীয় অরণ্যে নানা ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি একসঙ্গে অবস্থান করে। তাই নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ শনাক্ত করে তা সংগ্রহ করা বেশ অসুবিধাজনক।
  • শক্তকাঠ – ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্যের পরিমাণ কম। বেশিরভাগই শক্ত কাঠের বনভূমি। শক্ত কাঠ কাটা অসুবিধাজনক।
  • আর্দ্র জলবায়ু – ভারতের জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র। এইরকম জলবায়ুতে কাঠ সংগ্রহ অসুবিধাজনক। মাটি বেশিরভাগ সময়ই ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে থাকে। তাই কাষ্ঠ সংগ্রহে অসুবিধা হয়।

ভারতে বন সংরক্ষণের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?

ভারতে বনসংরক্ষণের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ – বনভূমির সীমাহীন উপকারিতার কথা চিন্তা করে বর্তমানে ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের ও প্রসারের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন –

  • বৃক্ষরোপণ – প্রতি বছর বর্ষাকালে বনমহোৎসবের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
  • বনভূমি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন – যথেচ্ছভাবে বন-সংহার রোধের জন্য 1980 সাল থেকে বনভূমি সংরক্ষণ আইন চালু হয়েছে।
  • কীটনাশকের ব্যবহার – কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে বনভূমিকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
  • বৃক্ষচ্ছেদন রোধ – অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
  • পশুচারণ নিষিদ্ধ – অভয়ারণ্য ও জাতীয় বনভূমিগুলিতে পশুচারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • বন-গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন – বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশের দেরাদুনে বন-গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
  • কৃষি ও সামাজিক বনসৃজন – সম্প্রতি কৃষিবনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
  • ঝুমচাষ নিষিদ্ধ – বর্তমানে বনজঙ্গল পুড়িয়ে ঝুমচাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতে পর্ণমোচী এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যবহার লেখো।

ভারতে পর্ণমোচী অরণ্যের ব্যবহার – ভারতে পর্ণমোচী গাছের কাঠ খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এই বনভূমির কাঠ আসবাবপত্র তৈরি, গৃহনির্মাণ, দরজা, জানলা, কৃষি-যন্ত্রপাতি, রেলের স্লিপার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই বনভূমির বিভিন্ন ভেষজ গাছ থেকে নানা ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়।

ভারতে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যবহার – সুন্দরী গাছ থেকে ভালো নৌকা বানানো যায়। এ ছাড়া ম্যানগ্রোভের গোলপাতা, হোগলাপাতা ঘর ছাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। সুন্দরবন থেকে প্রচুর মধু, মোম এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়। গরান এবং গর্জন গাছের ছাল চামড়া ট্যান করতে কাজে লাগে। গেঁওয়া কাঠ থেকে দিয়াশলাই প্রস্তুত হয়।

পর্ণমোচী বৃক্ষের এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে কেন?

পর্ণমোচী বৃক্ষ, যেমন – শাল, সেগুন প্রভৃতি সাধারণত মধ্যম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে, যেখানে একটি শুষ্ক ঋতু আছে সেখানে জন্মায়। শুষ্ক ঋতুতে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় জল যাতে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে না যায়, সেইজন্য এইসব উদ্ভিদ শুষ্ক ঋতুতে পত্রমোচন করে। একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে এই ধরনের উদ্ভিদ সব পাতা ঝরিয়ে দেয় বলে, এই ধরনের উদ্ভিদকে পর্ণমোচী উদ্ভিদ বলে।

পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটার কারণ কী?

পশ্চিম উপকূলের পূর্বসীমায় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রাচীরের মত বিস্তৃত আছে সুউচ্চ পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি। এজন্য আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে এসে দক্ষিণ ভারতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশের মুখে এই পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে প্রথম বাধা পায়। এরপর পশ্চিমঘাট অতিক্রমের চেষ্টায় ওই আর্দ্র বায়ু যতই ওপরে ওঠে ততই শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।

ভারতের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

ভারতের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • এই অঞ্চলে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং উষ্ণতাও অনেক বেশি থাকে তাই বার্ষিক উষ্ণতার গড় হয় প্রায় 27°C। এরূপ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত দীর্ঘ (30-35 মিটার) চিরসবুজ গাছের অরণ্য জন্মায়। ঘন অরণ্যে সূর্যালোক পাওয়ার আশায় গাছগুলি ঊর্ধ্বদিকে ক্রমশ বেড়ে ওঠে।
  • এই অরণ্যের গাছগুলি থেকে সারাবছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ায় গাছগুলি কখনই সম্পূর্ণরূপে পত্রশূন্য হয়ে পড়ে না, তাই অরণ্য সর্বদা চিরসবুজ দেখায়।
  • চিরসবুজ অরণ্যের গাছগুলিতে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত বড়ো বড়ো পাতা থাকে। পাতার এই ছিদ্রপথ দিয়ে গাছে সঞ্চিত অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় নির্গত হয়।

ভারতে বনবিভাগকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?

ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় অরণ্যের পরিমাণ খুব কম। কিন্তু এই স্বল্প পরিমাণ অরণ্য নিয়েই ভারতের বনবিভাগকে বিশেষ কতকগুলি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন –

  • অবৈধ ও বেআইনি বৃক্ষচ্ছেদন, বনজ সম্পদ আহরণ ও বন্যজন্তু শিকার – ভারতে প্রতি বছর বেআইনিভাবে বিপুল সংখ্যায় বৃক্ষ কেটে নেওয়া হয় ও নানা ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ করা হয়। এ ছাড়াও চোরা শিকারের ফলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
  • অসংরক্ষিত বনাঞ্চলে কৃষিভূমির সম্প্রসারণ – বর্তমানে দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিভূমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে গাছ কেটে বহু অসংরক্ষিত বনভূমিকে কৃষিভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এর ফলে বনভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
  • দাবানল, কীটপতঙ্গের আক্রমণ – দাবানল, কীটপতঙ্গ বা রোগ-পোকার আক্রমণ, ভূমি ধস প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর যথেষ্ট পরিমাণে অরণ্য বিনষ্ট হয়। কিন্তু ভারতের বনবিভাগ এগুলি প্রতিরোধে এখনও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উঠতে পারেনি।
  • অরণ্যের কম উৎপাদন ক্ষমতা – দেশে বাণিজ্যিক অরণ্যের অভাব, অধিকাংশ বৃক্ষের স্বল্প বৃদ্ধিহার, পার্বত্য অঞ্চলে বনভূমির দুর্গমতা প্রভৃতি কারণে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভারতে কাঠসহ নানা ধরনের বনজ দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – বামদিক ডানদিক মেলাও

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – একটি অথবা দুটি শব্দে উত্তর দাও [Marks – 1]

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse