তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।
Contents Show

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের পরীক্ষা –

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি –

একটি তারের কুণ্ডলী, একটি দণ্ডচুম্বক এবং একটি গ্যালভানোমিটার।

পরীক্ষা পদ্ধতি –

একটি অনুভূমিক কার্ডবোর্ডের উপর একটি তারের কুণ্ডলীকে (C) ভালোভাবে বসিয়ে কুণ্ডলীটির দুই প্রান্তের সঙ্গে একটি গ্যালভানোমিটার (G) যুক্ত করা হল।

পর্যবেক্ষণ –

একটি শক্তিশালী দণ্ডচুম্বকের N মেরুকে কুণ্ডলীর একটি প্রান্তের দিকে দ্রুত নিয়ে এলে দেখা যাবে যে গ্যালভানোমিটারের কাঁটাটির ক্ষণস্থায়ী বিক্ষেপ ঘটছে। অর্থাৎ, কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়।

  • দণ্ডচুম্বকটি স্থির রাখা হলে গ্যালভানোমিটারের কাঁটার কোনো বিক্ষেপ হয় না।
  • এখন চুম্বকটির N মেরুকে কুণ্ডলী থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলে দেখা যাবে যে, গ্যালভানোমিটারের বিক্ষেপ ঘটছে তবে তা পূর্বের বিপরীত অভিমুখে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে কুণ্ডলীতে প্রথমবারের বিপরীত অভিমুখে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়।
  • দণ্ডচুম্বকের N মেরুর পরিবর্তে S মেরুটিকে কুণ্ডলীর কাছে রেখে উপরোক্ত পরীক্ষাটি করলে (1) ও (3) নং ক্ষেত্রে বিপরীত ফল পাওয়া যাবে এবং (2) নং ক্ষেত্রে আগের মতোই গ্যালভানোমিটারের কাঁটার কোনো বিক্ষেপ ঘটবে না।
তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ প্রদর্শনের পরীক্ষা ব্যবস্থা

সিদ্ধান্ত –

কুণ্ডলী ও চুম্বকের মধ্যে আপেক্ষিক গতি থাকলেই কুণ্ডলীতে তড়িৎচালক বল আবিষ্ট হয় এবং তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কী?

যখন কোনো বদ্ধ বর্তনীর (closed circuit) সঙ্গে সম্পর্কিত চৌম্বক ফ্লাক্স (magnetic flux) পরিবর্তিত হয়, তখন সেই বর্তনীতে একটি তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF আবিষ্ট হয়। এই ঘটনাকেই তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ (Electromagnetic Induction) বলে।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের জন্য দায়ী মৌলিক নিয়মটি কী?

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের জন্য দায়ী মৌলিক নিয়মটি হলো ফ্যারাডের তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ সূত্র (Faraday’s Law of Electromagnetic Induction)। এটি বলে, “কোনো বর্তনীতে আবিষ্ট তড়িৎচালক বলের মান বর্তনীটির সাথে সম্পর্কিত চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।”

পরীক্ষায় গ্যালভানোমিটারের কাঁটা বিভিন্ন দিকে বিক্ষেপ কেন করে?

গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপের দিক নির্ভর করে কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের দিকের উপর। প্রবাহের দিক আবার নির্ভর করে চুম্বকটিকে কুণ্ডলীর দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে না-কি দূরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং চুম্বকের কোন মেরু (উত্তর বা দক্ষিণ) ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর। ফ্লাক্সের পরিবর্তনের ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হার অনুযায়ী প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়।

লেঞ্জের সূত্রটি কী?

লেঞ্জের সূত্র (Lenz’s Law) হলো ফ্যারাডের সূত্রের একটি গুণাত্মক ব্যাখ্যা। এটি বলে, “কোনো বর্তনীতে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের দিক এমন হয় যে, এটি সেই কারণকেই বাধা দেয় যার জন্য এটি নিজেই সৃষ্টি হয়েছে।” অর্থাৎ, আবিষ্ট প্রবাহ সর্বদা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের বিরোধিতা করে।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের চুম্বকটি স্থির রাখলে গ্যালভানোমিটারে কোনো প্রবাহ ধরা পড়ে না কেন?

চুম্বকটি স্থির রাখলে কুণ্ডলীর সাথে সম্পর্কিত চৌম্বক ফ্লাক্সের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী, চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হার (dΦ/dt) শূন্য হলে, আবিষ্ট তড়িৎচালক বলও শূন্য হয়। তাই কুণ্ডলীতে কোনো তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয় না।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের পরীক্ষাটি কীভাবে প্রমাণ করে যে শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না?

যখন আমরা চুম্বকটিকে কুণ্ডলীর দিকে নিয়ে যাই, তখন লেঞ্জের সূত্র অনুসারে একটি আবিষ্ট প্রবাহ সৃষ্টি হয় যা চুম্বকটিকে বিকর্ষণ করে। আবার, যখন চুম্বকটিকে দূরে সরাই, তখন আবিষ্ট প্রবাহ চুম্বকটিকে আকর্ষণ করে। এর অর্থ হলো, চুম্বক সরানোর জন্য আমাদের যে যান্ত্রিক কাজ (mechanical work) করতে হয়, সেটিই তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এভাবে শক্তির রূপান্তর ঘটে, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের দৈনন্দিন জীবনে কিছু ব্যবহার উল্লেখ করো।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের নীতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
1. বৈদ্যুতিক জেনারেটর (Generator) – যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তর করে।
2. ট্রান্সফরমার (Transformer) – AC ভোল্টেজকে কম বা বেশি করতে ব্যবহৃত হয়।
3. ইন্ডাকশন কুকটপ (Induction Cooktop) – রান্না করার জন্য।
4. ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাড (Wireless Charging Pad) – মোবাইল ফোন চার্জ করার জন্য।
5. ইলেকট্রিক গিটারের পিকআপ (Pickup) – শব্দতরঙ্গকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে।

আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ ও সাধারণ ব্যাটারি থেকে প্রাপ্ত তড়িৎপ্রবাহের মধ্যে পার্থক্য কী?

আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ কেবলমাত্র তখনই বিদ্যমান থাকে যখন চৌম্বকীয় ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে। এটি একটি ক্ষণস্থায়ী (transient) প্রবাহ। অন্যদিকে, ব্যাটারি থেকে প্রাপ্ত তড়িৎপ্রবাহ একটি স্থির (steady) DC প্রবাহ, যা একটি বদ্ধ বর্তনীতে অবিরাম প্রবাহিত হতে থাকে যতক্ষণ না ব্যাটারির শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কীভাবে ঘটে তা প্রদর্শনের জন্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ