এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতার তুলনা করো। তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির গ্যাসকে আয়নিত করার ধর্মের বা আয়োনাইজিং ক্ষমতার তুলনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতার তুলনা করো। তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির গ্যাসকে আয়নিত করার ধর্মের বা আয়োনাইজিং ক্ষমতার তুলনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতার তুলনা করো।
α, β, ও γ-রশ্মির ভেদন ক্ষমতার তুলনা –
বিষয় | α-রশ্মি | β-রশ্মি | γ-রশ্মি |
ভেদন ক্ষমতা | α-কণার ভর বেশি ও বেগ কম হওয়ায় এর ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে কম। এই রশ্মি 0.1 মিমি পুরু অ্যালুমিনিয়াম পাতের দ্বারা সম্পূর্ণ শোষিত হয়ে যায়। | ভর নগণ্য ও গতিবেগ উচ্চতর হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা খুব বেশি (α-কণার প্রায় 50 গুণ)। 5 mm পুরু অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে। | γ-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এটি কয়েক সেমি পুরু সিসার পাত ভেদ করতে পারে। |
তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির গ্যাসকে আয়নিত করার ধর্মের বা আয়োনাইজিং ক্ষমতার তুলনা করো।
α, β, ও γ-রশ্মির গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতার তুলনা –
বিষয় | α-রশ্মি | β-রশ্মি | γ-রশ্মি |
গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা | গ্যাসীয় মাধ্যমে যাওয়ার সময় গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করে, ফলে গ্যাসীয় মাধ্যম আয়নিত হয়। গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা α-কণার বেশি। | ভর নগণ্য হওয়ার জন্য গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা কম (α-কণার 100 ভাগের 1 ভাগ)। | আধান নেই বলে গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা খুবই কম। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
α, β, এবং γ-রশ্মির মধ্যে ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম কার?
ভেদন ক্ষমতার দিক থেকে ক্রম হল: γ-রশ্মি > β-রশ্মি > α-রশ্মি।
1. γ-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি (এটি কয়েক সেমি পুরু সিসার পাত ভেদ করতে পারে)।
2. α-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে কম (একটি কাগজের টুকরো বা অ্যালুমিনিয়ামের খুব পাতলা পাত দিয়েও আটকানো যায়)।
কোন রশ্মির আয়নীকরণ ক্ষমতা (Ionizing Power) সবচেয়ে বেশি এবং কেন?
α-রশ্মির আয়নীকরণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। কারণ –
1. α-কণার ভর তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
2. এদের গতিবেগ কম।
3. এদের ধনাত্মক আধান (+2) রয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে এগুলি গ্যাসীয় অণু/পরমাণুর ইলেকট্রনের সাথে খুব সহজে ও শক্তভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং প্রচুর আয়ন সৃষ্টি করে।
γ-রশ্মির আয়নীকরণ ক্ষমতা সবচেয়ে কম কেন?
γ-রশ্মি উচ্চ-শক্তির তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (ফোটন কণা), যার কোন ভর বা আধান নেই। যেহেতু এগুলি আধানহীন, তাই পদার্থের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এরা ইলেকট্রন বা প্রোটনের সাথে সহজে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে না। ফলে এদের আয়নীকরণ ক্ষমতা খুবই নগণ্য।
ভেদন ক্ষমতা এবং আয়নীকরণ ক্ষমতার মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে?
হ্যাঁ, একটি বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে।
1. যে রশ্মির আয়নীকরণ ক্ষমতা বেশি (যেমন – α-রশ্মি), তা দ্রুত শক্তি হারায় এবং পদার্থের অগভীর স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে। তাই এর ভেদন ক্ষমতা কম।
2. যে রশ্মির আয়নীকরণ ক্ষমতা কম (যেমন – γ-রশ্মি), তা সহজে পদার্থ ভেদ করে গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং শক্তি দ্রুত হারায় না। তাই এর ভেদন ক্ষমতা বেশি।
α, β, এবং γ-রশ্মি কি দিয়ে তৈরি?
α, β, এবং γ-রশ্মি তৈরি –
1. α-রশ্মি – হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস; 2টি প্রোটন ও 2টি নিউট্রন নিয়ে গঠিত (+2 আধান)।
2. β-রশ্মি – উচ্চ গতির ইলেকট্রন (β⁻) বা পজিট্রন (β⁺) কণা (-1 বা +1 আধান)।
3. γ-রশ্মি – আলোর কণার মতো (ফোটন), যা তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ; কোন ভর বা আধান নেই।
কোন রশ্মি মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক এবং কেন?
এটি নির্ভর করে রশ্মির উৎস শরীরের ভেতরে নাকি বাইরে আছে তার উপর।
1. শরীরের ভেতরে (অভ্যন্তরীণ) – α-রশ্মি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এর অতি উচ্চ আয়নীকরণ ক্ষমতা শরীরের কোষ ও DNA-কে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে বাইরে থাকলে α-রশ্মি ত্বক ভেদ করতে পারে না।
2. শরীরের বাইরে (বাহ্যিক) – γ-রশ্মি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক কারণ এটি শরীরের গভীরে প্রবেশ করে অভ্যন্তরীণ টিস্যুতে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। β-রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলোর চৌম্বক ক্ষেত্রে বিচ্যুতির প্রবণতা কেমন?
তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলোর চৌম্বক ক্ষেত্রে বিচ্যুতির প্রবণতা –
1. α-রশ্মি – সামান্য বিচ্যুত হয় (ভারি ভর ও ধনাত্মক আধান থাকার কারণে)।
2. β-রশ্মি – অনেক বেশি বিচ্যুত হয় (হালকা ভর ও ঋণাত্মক আধান থাকার কারণে)।
3. γ-রশ্মি – মোটেই বিচ্যুত হয় না (আধানহীন হওয়ায়)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতার তুলনা করো। তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির গ্যাসকে আয়নিত করার ধর্মের বা আয়োনাইজিং ক্ষমতার তুলনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতার তুলনা করো। তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির গ্যাসকে আয়নিত করার ধর্মের বা আয়োনাইজিং ক্ষমতার তুলনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন