মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরমাণুর নিউক্লিয়াস – নিউক্লিয় শক্তি

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিউক্লিয় শক্তিনিয়ে আলোচনা করব। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিউক্লিয় শক্তিঅংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “নিউক্লিয় শক্তি” থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরমাণুর নিউক্লিয়াস - নিউক্লিয় শক্তি
Contents Show

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরমাণুর নিউক্লিয়াস – নিউক্লিয় শক্তি

নিউক্লিয়ন –

নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে।

ভরত্রুটি –

নিউক্লিয়াসের স্থির ভর ও এতে উপস্থিত নিউক্লিয়নগুলির মোট ভরের পার্থক্যকে ভরত্রুটি বলে।

ভরত্রুটি (Δm) = [Zmp + (A – Z)mn] – M;

যেখানে Z = প্রোটন সংখ্যা, mp = প্রোটনের ভর, A – Z = নিউট্রন সংখ্যা, mn = নিউট্রনের ভর, M = পরমাণুটির নিউক্লিয়াসের ভর (পরীক্ষালব্ধ ভর)

নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি –

নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনগুলির ভর হ্রাসের ফলে ভর ও শক্তির তুল্যতা সূত্র (E = mc²) থেকে প্রাপ্ত যে বিশেষ শক্তির দ্বারা নিউক্লিয়নগুলি ঠাসাঠাসিভাবে আবদ্ধ থাকে তাকে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলে।

পরমাণুর ভর হ্রাস Δm হলে বন্ধন শক্তি (ΔE) = Δmc², c = আলোকের বেগ।

নিউক্লিয় বিভাজন –

যে বিভাজনে কোনো ভারী নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে দুটি কাছাকাছি ভরের নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয় এবং তার সঙ্গে নিউট্রন জাতীয় কয়েকটি ক্ষুদ্র কণা এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয় তাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে।

বিজ্ঞানী অটোহান এবং স্ট্রাসমান দেখেন যে কেবলমাত্র \({}_{92}^{235}U\) আইসোটোপই নিউট্রনের আঘাতে বিভাজিত হয়। তাদের আবিষ্কৃত বিক্রিয়াটি নিম্নলিখিত সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় –

\({}_{92}^{235}U+{}_0^1n\rightarrow{}_{92}^{236}U\rightarrow{}_{56}^{141}Bu+{}_{36}^{92}Kr+3{}_0^1n+\) শক্তি

নিউক্লিয় চুল্লি –

যে যন্ত্রের সাহায্যে নিউক্লিয় বিভাজনে সৃষ্ট শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট হারে ও সুনিশ্চিতভাবে নিউক্লিয় শক্তি পাওয়া যায় তাকে নিউক্লিয় চুল্লি বলে।

নিউক্লিয় চুল্লির ব্যবহার –

  • বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন,
  • তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ উৎপাদন।
  • নিউট্রনের তীব্ররশ্মি উৎপাদন।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে বিভিন্ন রকমের পদার্থের উৎপাদন।

নিউক্লিয় দুর্ঘটনা –

নিউক্লিয় চুল্লি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং ল্যাবোরেটরিতে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় মৌলের আইসোটোপগুলি থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় কণার পরিবেশে ছড়িয়ে পড়াকে নিউক্লিয় দুর্ঘটনা বলে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে মানবদেহে সাধারণত দুই ধরনের ক্ষতি হয়। যেমন –

  1. প্যাথোলজিক্যাল এবং
  2. জেনেটিক।

প্যাথোলজিক্যাল ক্ষতির ক্ষেত্রে দেহের যে অংশে বিকিরণ পড়ে সেই অংশের কোশগুলি ধ্বংস হয়। ফলে লিউকোমিয়া বা ক্যানসার হতে পারে। জিনগত ত্রুটি আরও মারাত্মক। এতে জনন কোশের জিনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগ বংশানুক্রমিক।

নিউক্লিয় সংযোজন –

কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় দুটি স্বল্প ভরযুক্ত পরমাণুর নিউক্লিয়াস একত্রে যুক্ত হয়ে একটি বৃহত্তর নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। এই বিক্রিয়াকে নিউক্লিয় সংযোজন বলে। 1938 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী বেথে ও ভাইৎসস্যাকার দেখান যে, চারটি হাইড্রোজেন কেন্দ্রক যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম কেন্দ্রক ও দুটি পজিট্রন গঠিত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। \(4{}_1^1H\rightarrow{}_2^4He+2{}_{+1}^0e+\) শক্তি

সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রে শক্তি উৎপাদনের জন্য দায়ী নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নিউক্লিয়ন কাকে বলে?

নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলিকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে।

ভরত্রুটি বলতে কী বোঝায়?

একটি নিউক্লিয়াসের প্রকৃত (পরীক্ষালব্ধ) ভর এবং তার উপাদান প্রোটন ও নিউট্রনগুলির পৃথক ভরের যোগফলের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে, তাকে ভরত্রুটি বলে।
সূত্র: Δm = [Zmp + (A – Z)mn] – M

ভরত্রুটি কেন হয়?

নিউক্লিয়াস গঠনের সময় প্রোটন ও নিউট্রনগুলি শক্তিশালী নিউক্লিয় বল দ্বারা একত্রিত হয়। এই বন্ধন শক্তি নির্গত হওয়ার কারণে ভরের একটি অংশ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় (E = mc² সূত্রানুসারে)। এই হারানো ভরই ভরত্রুটি হিসেবে প্রকাশ পায়।

নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি কী?

নিউক্লিয়নগুলিকে (প্রোটন ও নিউট্রন) নিউক্লিয়াসের মধ্যে শক্তভাবে আবদ্ধ রাখার জন্য যে শক্তি ব্যয় হয় বা যে শক্তি নির্গত হয়, তাকে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলে। এটি ভরত্রুটির (Δm) সমতুল্য শক্তি (ΔE = Δmc²)।

বন্ধন শক্তি কীভাবে পরিমাপ করা হয়?

প্রথমে ভরত্রুটি (Δm) গণনা করা হয়। তারপর আইনস্টাইনের ভর-শক্তি তুল্যতা সূত্র E = Δmc² (যেখানে c হল আলোর বেগ) প্রয়োগ করে বন্ধন শক্তি নির্ণয় করা হয়।

নিউক্লিয় বিভাজন কী?

এটি একটি নিউক্লিয় বিক্রিয়া যেখানে একটি ভারী পরমাণুর (যেমন ইউরেনিয়াম-235) নিউক্লিয়াস একটি নিউট্রন শোষণ করে অস্থিতিশীল হয় এবং বিভক্ত হয়ে প্রায় সমান ভরের দুটি হালকা নিউক্লিয়াস, কয়েকটি নিউট্রন এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে।

শৃঙ্খল বিক্রিয়া কী?

নিউক্লিয় বিভাজনের সময় যে অতিরিক্ত নিউট্রনগুলি নির্গত হয়, সেগুলি আশেপাশের ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে আঘাত করে তাদেরও বিভাজিত করে। এই প্রক্রিয়ায় আরও নিউট্রন উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়া ক্রমাগত চলতে থাকে। একেই শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলে।

নিউক্লিয় চুল্লি (Nuclear Reactor) কী?

নিউক্লিয় চুল্লি হল একটি বিশেষ যন্ত্র যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিউক্লিয় বিভাজনের শৃঙ্খল বিক্রিয়া চালিয়ে নিরাপদভাবে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

নিউক্লিয় চুল্লির প্রধান ব্যবহার কী?

চুল্লির প্রধান ব্যবহারগুলোর মধ্যে রয়েছে –
1. বিদ্যুৎ উৎপাদন।
2. চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ উৎপাদন।
3. বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নিউট্রন রশ্মি উৎপাদন।

নিউক্লিয় সংযোজন কী?

এটি একটি নিউক্লিয় বিক্রিয়া যেখানে দুটি হালকা নিউক্লিয়াস অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে মিলিত হয়ে একটি অপেক্ষাকৃত ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং বিপুল শক্তি নির্গত করে।

নিউক্লিয় দুর্ঘটনা কী?

নিউক্লিয় চুল্লি, গবেষণাগার বা চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ দুর্ঘটনাবশত পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে নিউক্লিয় দুর্ঘটনা বলে।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মানবদেহের কী কী ক্ষতি করতে পারে?

তেজস্ক্রিয় বিকিরণের দুটি প্রধান ধরনের ক্ষতি হয়:
1. প্যাথোলজিক্যাল ক্ষতি – দেহের কোষ সরাসরি ধ্বংস করে, যা ক্যান্সার (যেমন লিউকেমিয়া) বা ত্বকের পোড়ার কারণ হতে পারে।
2. জেনেটিক ক্ষতি – জনন কোষের (শুক্রাণু বা ডিম্বাণু) জিনগত উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বংশগত রোগের কারণ হতে পারে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিউক্লিয় শক্তি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিউক্লিয় শক্তি অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নিউক্লিয় শক্তি অংশটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শুষ্ক করতে গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে গাঢ় HNO₃ ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় না কেন?