এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আয়নীয় যৌগগুলির জলে দ্রাব্যতার কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আয়নীয় যৌগগুলির জলে দ্রাব্যতার কারণ কী?
আয়নীয় যৌগে বিপরীত আধানযুক্ত আয়নসমূহ স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বল দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। তাই উচ্চ পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক (Dielectric constant) বিশিষ্ট দ্রাবক (জল) বা অন্যান্য ধ্রুবীয় দ্রাবকে আয়নীয় যৌগগুলি দ্রবীভূত হয় কিন্তু অধুবীয় দ্রাবকে এগুলি অদ্রাব্য। ধ্রুবীয় দ্রাবকে (Polar Solvent) পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের মান বেশি হলে দ্রাবক অণুর সঙ্গে কেলাস আয়নগুলির আকর্ষণ তীব্র হওয়ায় ওই মাধ্যমে আয়নীয় যৌগের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্যে আকর্ষণ বল কম হয়, ফলে আয়নীয় যৌগের নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি বিশিষ্ট কেলাসটি ভেঙে গিয়ে সেটি সেই মাধ্যমে দ্রবীভূত হয়। অন্যদিকে, অধ্রুবীয় দ্রাবক অণুর সঙ্গে আয়নগুলির আকর্ষণ বল অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির হওয়ায় আয়নীয় যৌগগুলি অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না। এজন্য আয়নীয় যৌগগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য কিন্তু অধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক (Dielectric Constant) বলতে কী বোঝায় এবং দ্রাব্যতার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা কী?
পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক হলো কোনো মাধ্যমের (এখানে দ্রাবকের) বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল হ্রাস করার ক্ষমতার একটি মাপকাঠি। জলের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের মান খুব বেশি (~80)।
ভূমিকা – যখন কোনো আয়নিক যৌগ (যেমন NaCl) জলে রাখা হয়, তখন জলের উচ্চ পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক Na⁺ ও Cl⁻ আয়নের মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী কুলম্বীয় আকর্ষণ প্রায় 80 গুণ দুর্বল করে দেয়। এর ফলে জল অণুগুলি সহজেই আয়নগুলিকে স্ফটিক জালিকা থেকে পৃথক করে ঘিরে ফেলতে পারে এবং দ্রবণ সৃষ্টি হয়।
জল কীভাবে একটি আয়নিক স্ফটিক (যেমন – NaCl) থেকে পৃথক পৃথক আয়নগুলিকে আলাদা করে?
জল একটি মেরু অণু (Polar Molecule)। এর অক্সিজেন পরমাণু আংশিক ঋণাত্মক (δ⁻) এবং হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি আংশিক ধনাত্মক (δ⁺) আধানযুক্ত।
যখন NaCl স্ফটিক জলে রাখা হয়, তখন জলের অণুর ঋণাত্মক প্রান্ত (O) Na⁺ ক্যাটায়নের দিকে এবং ধনাত্মক প্রান্ত (H) Cl⁻ অ্যানায়নের দিকে আকৃষ্ট হয়। এই শক্তিশালী আয়ন-দ্বিধ্রুবী আকর্ষণ স্ফটিক জালিকার অভ্যন্তরীণ আয়ন-আকর্ষণকে দুর্বল করে, ফলে আয়নগুলি জালিকা থেকে বেরিয়ে আসে ও জল অণু দ্বারা পরিবৃত হয়। একে বিশেষ ক্ষেত্রে hydration বলা হয়।
কেন আয়নিক যৌগগুলি (যেমন – লবণ) তেল বা বেনজিনের মতো অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না?
তেল বা বেনজিনের মতো অধ্রুবীয় দ্রাবকের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের মান খুব কম (~2-3) এবং এগুলি অমেরু অণু। এদের মধ্যে কোনো স্থায়ী ধনাত্মক বা ঋণাত্মক প্রান্ত থাকে না। তাই এগুলি আয়নের সাথে শক্তিশালী আয়ন-দ্বিধ্রুবী আকর্ষণ গঠন করতে পারে না। ফলে এই ধরনের দ্রাবক আয়নিক স্ফটিকের শক্তিশালী আয়নিক বন্ধন দুর্বল করতে সক্ষম হয় না, এবং যৌগ দ্রবীভূত হয় না।
সকল আয়নিক যৌগ কি জলে সমানভাবে দ্রবণীয়? যদি না হয়, তাহলে তার কারণ কী?
না, সব আয়নিক যৌগ জলে সমানভাবে দ্রবণীয় নয়। এর জন্য কয়েকটি কারণ দায়ী –
1. জালক শক্তি (Lattice Energy) – স্ফটিক জালিকায় আয়নগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল যত বেশি, যৌগ তত কম দ্রবণীয় হয়। (যেমন, CaSO₄ -এর দ্রাব্যতা NaCl -এর চেয়ে কম, কারণ এর জালক শক্তি বেশি)।
2. হাইড্রেশন এনথালপি (Hydration Enthalpy) – আয়ন জলে পরিবৃত হলে যে শক্তি নিঃসৃত হয়। এটি যত বেশি (অর্থাৎ বেশি ঋণাত্মক), আয়ন তত সহজে দ্রবীভূত হয়।
3. চূড়ান্ত ফলাফল – দ্রাব্যতা নির্ভর করে জালক শক্তি ভাঙতে যে শক্তি লাগে এবং হাইড্রেশন থেকে যে শক্তি মুক্ত হয় তার ভারসাম্যের উপর। যদি হাইড্রেশনে মুক্ত শক্তি বেশি হয়, যৌগ সহজে দ্রবীভূত হবে; যদি কম হয়, তবে দ্রবীভূত হওয়া কঠিন।
দ্রাব্যতা বলতে কী বোঝায়? শুধু ‘দ্রবীভূত হওয়া’ নয় কি?
“দ্রবীভূত হওয়া” একটি গুণগত ধারণা (হয়/না হয়), কিন্তু দ্রাব্যতা একটি পরিমাণগত ধারণা।
দ্রাব্যতা হলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে সর্বাধিক কতটা দ্রব পদার্থ দ্রবীভূত হতে পারে এবং একটি স্থিতিশীল সম্পৃক্ত দ্রবণ গঠন করতে পারে। এটি সাধারণত গ্রাম দ্রব পদার্থ প্রতি 100 g দ্রাবক এককে প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ – আমরা বলি “NaCl জলে দ্রবণীয়”; কিন্তু এর দ্রাব্যতা হলো — 20°C তাপমাত্রায় 100 g জলে সর্বাধিক 36 g NaCl দ্রবীভূত হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আয়নীয় যৌগগুলির জলে দ্রাব্যতার কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন