এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সোডিয়াম ক্লোরাইড উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কঠিন পদার্থ কিন্তু কার্বন টেট্রাক্লোরাইড তরল পদার্থ কেন? অথবা, NaCl ও CCl₄ -এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক বেশি ও কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সোডিয়াম ক্লোরাইড উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কঠিন পদার্থ কিন্তু কার্বন টেট্রাক্লোরাইড তরল পদার্থ কেন?
অথবা, NaCl ও CCl₄ -এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক বেশি ও কেন?
NaCl হল একটি তড়িৎযোজী যৌগ। Na⁺ ও Cl⁻ এই দুই বিপরীতধর্মী আয়নের স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বলের প্রভাবে যুক্ত হয়ে NaCl -এর কেলাস গঠিত হয়। সম্পূর্ণ কেলাসটি একটি অতিকায় অণুরূপে বর্তমান থাকে। এইরূপ গঠনের জন্য আয়নগুলিকে পৃথক করে গলিত অবস্থায় আনতে প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই NaCl উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কঠিন যৌগ।
আবার CCl₄ একটি সমযোজী যৌগ। অণুটি বিচ্ছিন্ন বা একক অণুরূপে অবস্থান করে। CCl₄ অণুগুলি পরস্পর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ নয়। তাই CCl₄ -এর গলনাঙ্ক খুবই কম।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
NaCl-এর গলনাঙ্ক এত বেশি হওয়ার মূল কারণ কী?
NaCl একটি তড়িৎযোজী যৌগ। এটি Na⁺ (সোডিয়াম ক্যাটায়ন) এবং Cl⁻ (ক্লোরাইড অ্যানায়ন)-এর সমন্বয়ে একটি বিশাল আয়নিক কেলাস তৈরি করে। এই বিপরীত আয়নগুলির মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল (Electrostatic Force) কাজ করে। এই শক্তিশালী বন্ধন ভাঙতে এবং আয়নগুলিকে মুক্ত করে গলিত অবস্থায় আনতে প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, তাই এর গলনাঙ্ক খুব বেশি।
CCl₄-এর গলনাঙ্ক এত কম হওয়ার কারণ কী?
CCl₄ একটি সমযোজী যৌগ এবং এটি আণবিক কেলাস তৈরি করে। প্রতিটি CCl₄ অণু অন্য CCl₄ অণুর সাথে দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বল (দুর্বল আন্তঃআণবিক বল) -এর মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। এই দুর্বল আকর্ষণ বল ভাঙতে খুব অল্প তাপশক্তিরই প্রয়োজন হয়, তাই এর গলনাঙ্ক অনেক কম।
‘আয়নিক বন্ধন’ এবং ‘আন্তঃআণবিক বল’ -এর মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
‘আয়নিক বন্ধন’ এবং ‘আন্তঃআণবিক বল’ -এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য –
1. আয়নিক বন্ধন – বিপরীতধর্মী আয়নগুলির (যেমন – Na⁺ ও Cl⁻) মধ্যে গঠিত অত্যন্ত শক্তিশালী আকর্ষণ বল। এই বন্ধন ভাঙতে প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়।
2. আন্তঃআণবিক বল – পৃথক অণুগুলির (যেমন – একটি CCl₄ অণু ও আরেকটি CCl₄ অণু) মধ্যে দুর্বল আকর্ষণ বল। এগুলি ভাঙা তুলনামূলক সহজ, তাই পদার্থটি সহজেই কম তাপে গলে যায়।
NaCl -এর কেলাসকে ‘অতিকায় অণু’ বলা হয় কেন?
একটি বিশাল NaCl কেলাসে অসংখ্য Na⁺ এবং Cl⁻ আয়ন নির্দিষ্ট বিন্যাসে শক্তিশালী আয়নিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পুরো কেলাসটিকে একক, বিরাট অণুর মতো ধরা হয়, কারণ প্রতিটি অংশ শক্তিশালী আয়নিক বন্ধনে যুক্ত। এই কারণেই এটিকে ‘অতিকায় অণু’ (Giant Molecule) বলা হয়।
সকল সমযোজী যৌগেরই কি CCl₄-এর মতো কম গলনাঙ্ক থাকে?
না, সব সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক কম হয় না। এটি তাদের কেলাস বা জালিকার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
1. আণবিক কেলাসযুক্ত যৌগ (যেমন – CCl₄, বরফ, I₂) – এদের গলনাঙ্ক সাধারণত কম।
2. বৃহৎ সমযোজী কেলাস/জালিকাযুক্ত যৌগ (যেমন – হীরা, সিলিকা – SiO₂) – এগুলি অসংখ্য পরমাণু শক্তিশালী সমযোজী বন্ধনে গঠিত এক বিরাট কেলাস। এদের গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি হয় (যেমন – হীরার গলনাঙ্ক প্রায় 3550°C)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সোডিয়াম ক্লোরাইড উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কঠিন পদার্থ কিন্তু কার্বন টেট্রাক্লোরাইড তরল পদার্থ কেন? অথবা, NaCl ও CCl₄ -এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক বেশি ও কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন