রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টির কারণ কী?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টির কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টির কারণ কী?

রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টির কারণ কী?

নিষ্ক্রিয় মৌলগুলি ছাড়া বাকি মৌলের পরমাণুগুলি অস্থায়ী অবস্থায় থাকে। তাই প্রত্যেক মৌলের পরমাণুই একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলির সঙ্গে সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন আদানপ্রদানের মাধ্যমে বা ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের গঠন কাঠামো লাভ করে। তাই পরমাণুগুলি সুস্থিতি পাওয়ার জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

রাসায়নিক বন্ধন কী?

রাসায়নিক বন্ধন হল দুটি বা ততোধিক পরমাণুর মধ্যকার সেই আকর্ষণ বল যা তাদেরকে একটি অণু বা যৌগে একত্রে ধরে রাখে। এই বন্ধনের মূল উদ্দেশ্য হল পরমাণুগুলিকে স্থিতিশীল ইলেকট্রনিক কাঠামো অর্জনে সাহায্য করা।

পরমাণুগুলি স্থিতিশীল হতে চায় কেন?

পরমাণুগুলি সর্ববহিস্থ কক্ষপথে (ভ্যালেন্স শেল) আটটি (অক্টেট) ইলেকট্রন থাকলে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল হয় (হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের জন্য দুটি ইলেকট্রন যথেষ্ট)। এটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির ইলেকট্রনিক কাঠামোর মতো, যারা প্রকৃতিতে খুবই স্থিতিশীল এবং সাধারণত কোনো বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। এই স্থিতিশীল অবস্থা অর্জনের জন্যই পরমাণুগুলি বন্ধন গঠন করে।

নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি বন্ধন গঠন করে না কেন?

নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির (হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন ইত্যাদি) ইতিমধ্যেই তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষপথ পূর্ণ (হিলিয়ামের জন্য 2টি, বাকিদের জন্য 8টি ইলেকট্রন)। তাই তাদের কোনো ইলেকট্রন আদান-প্রদান বা ভাগাভাগির প্রয়োজন পড়ে না। তারা ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলে সাধারণত রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে না।

পরমাণু স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য কী কী পদ্ধতিতে বন্ধন গঠন করে?

প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে বন্ধন গঠন হয় –
1. আয়নিক বন্ধন – এক পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে। (যেমন – NaCl)
2. সমযোজী বন্ধন – দুই বা ততোধিক পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ভাগাভাগি করার মাধ্যমে। (যেমন – H₂O, CH₄)
3. ধাতব বন্ধন – ধাতুর পরমাণুগুলির মধ্যে ইলেকট্রন সমুদ্র মডেলের মাধ্যমে। (যেমন – লোহা, তামা)

অক্টেট নিয়ম কী? এর ব্যতিক্রম আছে কী?

অক্টেট নিয়ম অনুসারে, পরমাণুগুলি বন্ধন গঠন করার সময় তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষে আটটি ইলেকট্রন অর্জনের চেষ্টা করে। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে –
1. অপূর্ণ অক্টেট – কিছু পরমাণু অক্টেট পূর্ণ না করেও যৌগ গঠন করে। (যেমন – BF₃ -এ বোরনের 6টি ইলেকট্রন থাকে)
2. সম্প্রসারিত অক্টেট – তৃতীয় পর্যায় বা তার নিচের মৌলগুলি (যেমন – ফসফরাস, সালফার) 10 বা 12টি ইলেকট্রন নিয়ে যৌগ গঠন করতে পারে। (যেমন – SF₆)

শুধু ইলেকট্রনই কি রাসায়নিক বন্ধনের কারণ? শক্তির কী ভূমিকা আছে?

হ্যাঁ, শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন পরমাণুগুলি বন্ধন গঠন করে, তখন তারা একটি নিম্নশক্তিসম্পন্ন, বেশি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছায়। বন্ধন গঠনের সময় শক্তি মুক্তি পায়। এই স্থিতিশীল অবস্থা থেকে তাদের আলাদা করতে আবার শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই বন্ধন গঠন একটি শক্তিগতভাবে অনুকূল প্রক্রিয়া।

একটি পরমাণু কতগুলো বন্ধন গঠন করতে পারে?

একটি পরমাণু তার সর্ববহিস্থ কক্ষে থাকা যোজ্য ইলেকট্রনের সংখ্যা এবং অক্টেট পূরণের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বন্ধনের সংখ্যা নির্ধারণ করে। এই সংখ্যাকে পরমাণুর যোজ্যতা বা সমযোজীতা বলে। যেমন, কার্বনের 8টি যোজ্য ইলেকট্রন আছে, তাই সে সাধারণত 8টি সমযোজী বন্ধন গঠন করে।

রাসায়নিক বন্ধন গঠনের ফলে পদার্থের ধর্ম কীভাবে পরিবর্তিত হয়?

রাসায়নিক বন্ধন গঠনের ফলে মৌলিক পদার্থের ধর্ম সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং নতুন ধর্মবিশিষ্ট যৌগ গঠিত হয়। যেমন – বিষাক্ত সোডিয়াম ধাতু ও বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাসের মধ্যে বন্ধন গঠনে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) তৈরি হয়, যার ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টির কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটে তা ক্যাথোড ও অ্যানোডে বিক্রিয়াসমূহ লেখো।

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে তা ব্যাখ্যা করো। অথবা, কপার তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের (CuSO₄) জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো এবং অ্যানোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো।

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

Pt ক্যাথোড ও গ্রাফাইট অ্যানোডে গলিত AlCl₃-এর তড়িদ্বিশ্লেষণে কী ঘটে? ক্যাথোড ও অ্যানোডের বিক্রিয়া লেখো।

তড়িৎবিশ্লেষণের আয়নীয় উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও।