এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন বলার কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন বলার কারণ কী?
তড়িৎযোজী যৌগগুলিতে বিপরীত আধানযুক্ত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির মধ্যে তীব্র তাড়িতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এই আকর্ষণ বলের ক্রিয়ায় আয়নগুলি ত্রিমাত্রিকভাবে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতিতে সজ্জিত হয়ে কেলাস জালক গঠন করে এবং সাধারণ চাপ ও উষ্ণতায় যৌগগুলি কঠিন অবস্থায় থাকে। এই কারণে তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন (Ionic Solid) বলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎযোজী যৌগ বলতে কী বোঝায়?
তড়িৎযোজী যৌগ হল এমন যৌগ যা ধনাত্মক আধানযুক্ত ধাতব আয়ন (ক্যাটায়ন) এবং ঋণাত্মক আধানযুক্ত অধাতব আয়ন (অ্যানায়ন) -এর মধ্যে ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে গঠিত হয়। এদের আয়নীয় যৌগও বলা হয়।
উদাহরণ – NaCl, CaO, MgCl₂।
তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে কেন ‘আয়নীয় কঠিন’ বলা হয়?
তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন বলা হয় কারণ এগুলি কঠিন অবস্থায় বিপরীত আধানযুক্ত আয়নগুলির মধ্যে শক্তিশালী তড়িৎস্থিতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে গঠিত একটি সুশৃঙ্খল, ত্রিমাত্রিক কেলাসিত জালক (Crystal Lattice) আকারে থাকে। এই শক্তিশালী আকর্ষণ বলই এদেরকে সাধারণ তাপমাত্রায় কঠিন রাখে।
আয়নীয় কঠিনের কেলাস জালক কী?
কেলাস জালক হল আয়নগুলির একটি পুনরাবৃত্তিমূলক, সুশৃঙ্খল ত্রিমাত্রিক বিন্যাস। ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়নগুলি পরস্পরকে আকর্ষণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক কাঠামো (যেমন – ঘনকীয়, ষড়ভুজীয়) গঠন করে। এই জালক কাঠামোই আয়নীয় যৌগের ভৌত ধর্ম (যেমন – গলনাঙ্ক, কঠোরতা) নির্ধারণ করে।
তড়িৎযোজী যৌগ সাধারণত উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হয় কেন?
কেলাস জালকে আয়নগুলির মধ্যে কার্যকর শক্তিশালী তড়িৎস্থিতিক আকর্ষণ বল ভাঙতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এই জালক ভেঙে যৌগটিকে গলানো বা বাষ্পীভূত করতে হলে উচ্চ তাপমাত্রা দরকার হয়। এ কারণেই এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি।
আয়নীয় কঠিনগুলি সাধারণত কঠিন ও ভঙ্গুর হয় কেন?
এগুলি শক্তিশালী আন্তঃআয়নীয় আকর্ষণের কারণে কঠিন হয়। তবে, যখন এদের উপর বল প্রয়োগ করে এক স্তর আয়নকে অপর স্তরের উপর সরানো হয়, তখন একই আধানযুক্ত আয়নগুলি পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বিকর্ষণ করে। এই বিকর্ষণের ফলে কেলাস জালক ভেঙে যায় এবং যৌগটি ভঙ্গুর ধর্ম প্রদর্শন করে।
তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত কঠিন অবস্থায় বিদ্যুৎ অপরিবাহী কিন্তু গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় পরিবাহী হয় কেন?
কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি কেলাস জালকে শক্তভাবে আবদ্ধ থাকায় সেগুলো মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না, তাই বিদ্যুৎ পরিবহন করে না। কিন্তু গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নগুলি মুক্ত হয়ে যায় এবং তাদের চলাচলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
সকল তড়িৎযোজী যৌগ কি জলে দ্রবণীয়?
না, সকল তড়িৎযোজী যৌগ পানিতে দ্রবণীয় নয়। দ্রবণীয়তা আয়নগুলির আকার, আধান এবং জালক শক্তির উপর নির্ভর করে।
উদাহরণ – Sodium Chloride (NaCl) জলে খুব দ্রবণীয়, কিন্তু Silver Chloride (AgCl) প্রায় অদ্রবণীয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন বলার কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন