ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা ধর্মের তুলনা করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা ধর্মের তুলনা করো। অথবা, দুটি ভৌতধর্মের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথলিনের মধ্যে পার্থক্য করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা ধর্মের তুলনা করো। অথবা, দুটি ভৌতধর্মের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথলিনের মধ্যে পার্থক্য করো।
Contents Show

ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা ধর্মের তুলনা করো।

অথবা, দুটি ভৌতধর্মের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথলিনের মধ্যে পার্থক্য করো।

গলনাঙ্ক – ন্যাপথলিন সমযোজী যৌগ ও সোডিয়াম ক্লোরাইড তড়িৎযোজী যৌগ। ন্যাপথলিনের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল খুব কম কিন্তু সোডিয়াম ক্লোরাইড অণুগুলির মধ্যে আর্কষণ বল বেশি তাই ন্যাপথলিনের গলনাঙ্ক (80°C) সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক (820°C) অপেক্ষা কম।

জলে দ্রাব্যতা – ন্যাপথলিন (সমযোজী) ধ্রুবীয় দ্রাবকে (জল) দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু অধ্রুবীয় দ্রাবকে (অ্যালকোহল, ইথার ইত্যাদি) দ্রবীভূত হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড (আয়নীয় যৌগ) ধ্রুবীয় দ্রাবকে (জলে) দ্রবীভূত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ন্যাপথলিন কোন ধরনের দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়?

ন্যাপথলিন একটি অধ্রুবীয় যৌগ হওয়ায় এটি অধ্রুবীয় দ্রাবক যেমন বেনজিন, টলুইন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl₄), ইথার, কেরোসিন ইত্যাদিতে ভালোভাবে দ্রবীভূত হয়।

গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতার উপর ভিত্তি করে ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্যে কী কী পার্থক্য করা যায়?

গলনাঙ্ক – ন্যাপথলিনের গলনাঙ্ক কম (80°C), আর সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি (801°C)।
জলে দ্রাব্যতা – ন্যাপথলিন জলে অদ্রবণীয়, আর সোডিয়াম ক্লোরাইড জলে সহজেই দ্রবীভূত হয়।

ন্যাপথলিন এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি কী?

ন্যাপথলিন একটি সমযোজী যৌগ, যেখানে কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত। অন্যদিকে, সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি আয়নীয় যৌগ, যেখানে সোডিয়াম (Na⁺) এবং ক্লোরাইড (Cl⁻) আয়নের মধ্যে তাড়িতস্থিতিক আকর্ষণ বা আয়নীয় বন্ধন বিদ্যমান।

ন্যাপথলিনের গলনাঙ্ক কম হওয়ার পেছনে কোন আন্তঃআণবিক বল দায়ী?

ন্যাপথলিনের অণুগুলোর মধ্যকার দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বল এর গলনাঙ্ক কম হওয়ার জন্য দায়ী। এই বল ভাঙতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়।

সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক খুব বেশি হওয়ার কারণ কী?

সোডিয়াম ক্লোরাইডের স্ফটিক জালক Na⁺ এবং Cl⁻ আয়নের একটি শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক নেটওয়ার্ক দ্বারা গঠিত। এই আয়নগুলোর মধ্যে কাজ করা অত্যন্ত শক্তিশালী আয়নীয় বন্ধন বা তাড়িতস্থিতিক আকর্ষণ ভাঙতে প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, ফলে এর গলনাঙ্ক খুব বেশি হয়।

আয়নীয় যৌগ ও সমযোজী যৌগ সনাক্ত করতে গলনাঙ্ক কীভাবে সাহায্য করে?

সাধারণত, আয়নীয় যৌগগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি হয় কারণ এদের স্ফটিক জালক ভাঙতে হয়। অন্যদিকে, সমযোজী যৌগগুলোর (বিশেষ করে আণবিক সমযোজী যৌগ) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই, উচ্চ গলনাঙ্ক কোনো যৌগের আয়নীয় প্রকৃতির একটি শক্তিশালী সূচক।

ন্যাপথলিন এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা কীভাবে ভিন্ন হয়?

সোডিয়াম ক্লোরাইড গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় মুক্ত আয়নের উপস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। কিন্তু কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি স্থির থাকায় এটি বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না। অন্যদিকে, ন্যাপথলিন (একটি শুদ্ধ সমযোজী যৌগ) কঠিন, গলিত বা দ্রবীভূত যে কোনো অবস্থাতেই মুক্ত আয়ন বা ইলেকট্রনের অভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না।

সোডিয়াম ক্লোরাইড জলে দ্রবীভূত হয় কিন্তু ন্যাপথলিন হয় না – এর কারণ কী?

এটি দ্রাব্যতার “Like dissolves like” বা “সদৃশ সদৃশকে দ্রবীভূত করে” নীতির উপর নির্ভরশীল। জল একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক। সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি আয়নীয়/ধ্রুবীয় যৌগ হওয়ায় এটি জলের অণু দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সহজে দ্রবীভূত হয়। কিন্তু ন্যাপথলিন একটি অধ্রুবীয় যৌগ, তাই এটি ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত হতে পারে না।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ন্যাপথলিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা ধর্মের তুলনা করো। অথবা, দুটি ভৌতধর্মের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথলিনের মধ্যে পার্থক্য করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটে তা ক্যাথোড ও অ্যানোডে বিক্রিয়াসমূহ লেখো।

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে তা ব্যাখ্যা করো। অথবা, কপার তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের (CuSO₄) জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো এবং অ্যানোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো।

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

Pt ক্যাথোড ও গ্রাফাইট অ্যানোডে গলিত AlCl₃-এর তড়িদ্বিশ্লেষণে কী ঘটে? ক্যাথোড ও অ্যানোডের বিক্রিয়া লেখো।

তড়িৎবিশ্লেষণের আয়নীয় উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও।