এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI) সমযোজী – হাইড্রোজেন পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 1টি এবং ক্লোরিন পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 7টি ইলেকট্রন থাকে। অণু গঠনের সময় একটি H-পরমাণু এবং একটি Cl পরমাণু তাদের সবচেয়ে বাইরের কক্ষ থেকে 1টি করে ইলেকট্রন দিয়ে 1টি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে এবং উভয় পরমাণু ওই ইলেকট্রন জোড়কে সমভাবে ব্যবহার করে H-পরমাণু তার সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 2টি এবং Cl পরমাণু তার সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 8টি ইলেকট্রন পূর্ণ করে ও HCl অণু গঠন করে।
সুতরাং, HCI সমযোজী যৌগ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) কি তড়িৎযোজী নাকি সমযোজী যৌগ?
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) একটি সমযোজী যৌগ।
HCl কে সমযোজী যৌগ বলার কারণ কী?
HCl কে সমযোজী যৌগ বলার প্রধান কারণগুলো হলো —
1. ইলেকট্রন শেয়ারিং – HCl অণু গঠনের সময় হাইড্রোজেন (H) ও ক্লোরিন (Cl) পরমাণু তাদের ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের একটি করে জোড় শেয়ার করে একটি সমযোজী বন্ধন গঠন করে।
2. অক্টেট ও ডুয়েট নিয়ম পূরণ – এই ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে ক্লোরিন (Cl) তার ভ্যালেন্স শেলে 8টি ইলেকট্রন পূর্ণ করে (অক্টেট নিয়ম) এবং হাইড্রোজেন (H) 2টি ইলেকট্রন পূর্ণ করে (ডুয়েট নিয়ম)।
3. আয়ন গঠন হয় না – এখানে কোনো পরমাণু সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহণ করে আয়নে পরিণত হয় না।
HCl জলে দ্রবীভূত হলে তা বিদ্যুৎ পরিবহন করে, তাহলে কেন একে তড়িৎযোজী যৌগ বলা হয় না?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। HCl শুষ্ক বা বিশুদ্ধ অবস্থায় একটি সমযোজী অণু এবং এটি বিদ্যুৎ পরিবহন করে না। কিন্তু যখন এটি জলে দ্রবীভূত হয়, তখন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে – HCl + H₂O → H₃O⁺ + Cl⁻ – এই বিক্রিয়ায় HCl অণু ভেঙে হাইড্রোনিয়াম আয়ন (H₃O⁺) ও ক্লোরাইড আয়ন (Cl⁻) তৈরি হয়। এই মুক্ত আয়নগুলোর উপস্থিতির কারণেই HCl এর জলীয় দ্রবণ (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড) বিদ্যুৎ পরিবহন করতে সক্ষম হয়।
অতএব, বিদ্যুৎ পরিবাহিতা HCl অণুর স্বতঃসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য নয়; বরং এটি জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর সৃষ্ট আয়নগুলির কারণে ঘটে।
হাইড্রোজেন একটি ধাতু নয়, তাহলে এটি ক্লোরিনের সাথে তড়িৎযোজী বন্ধন কেন গঠন করে না?
তড়িৎযোজী বন্ধন গঠনের জন্য একটি পরমাণুকে ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক আয়নে (Cation) এবং অপরটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে (Anion) রূপান্তরিত হতে হয়।
1. হাইড্রোজেন তার একমাত্র ইলেকট্রন হারিয়ে H⁺ আয়ন গঠন করতে পারে, কিন্তু এটি খুব অস্থিতিশীল এবং আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র।
2. ক্লোরিন অবশ্যই একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl⁻ আয়ন গঠন করতে চায়।.
3. কিন্তু H⁺ আয়ন অস্থিতিশীল যে শুধুমাত্র ইলেকট্রস্ট্যাটিক আকর্ষণ দ্বারা ক্লোরিনের সাথে স্থিতিশীল যৌগ গঠন করতে পারে না।
বরং, ইলেকট্রন শেয়ার করার মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠন করাই বেশি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হয়।
HCl গ্যাসের অণুতে পরমাণুগুলির মধ্যে বন্ধন কি পোলার নাকি নন-পোলার?
HCl এর বন্ধন একটি পোলার সমযোজী বন্ধন। কারণ, হাইড্রোজেন (তড়িৎঋণাত্মকতা 220) ও ক্লোরিনের (তড়িৎঋণাত্মকতা 3.16) মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। ফলে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড় ক্লোরিনের দিকে বেশি আকর্ষিত হয়। এর ফলে অণুতে —
1. হাইড্রোজেনে আংশিক ধনাত্মক আধান (δ⁺)
2. ক্লোরিনে আংশিক ঋণাত্মক আধান (δ⁻) সৃষ্টি হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তড়িৎযোজী না সমযোজী ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন