অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু কিন্তু সিলভার নাইট্রেট ও সোডিয়াম হাইড্রাইড তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য। কিন্তু সিলভার নাইট্রেট, সোডিয়াম হাইড্রাইড – এরা তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য। কিন্তু সিলভার নাইট্রেট, সোডিয়াম হাইড্রাইড – এরা তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য কেন?
Contents Show

অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য। কিন্তু সিলভার নাইট্রেট, সোডিয়াম হাইড্রাইড – এরা তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য কেন?

অ্যাসিটিক অ্যাসিডের বিয়োজন মাত্রা কম হওয়ায় উপযুক্ত দ্রাবকে (জল) দ্রবীভূত অবস্থায় এটির খুব অল্প পরিমাণ অণু বিয়োজিত হয়ে CH₃COO⁻ অ্যানায়ন ও H⁺ ক্যাটায়ন উৎপন্ন করে।

CH₃COOH ⇌ CH₃COO⁻ + H⁺

দ্রবণে CH₃COO⁻ ও H⁺ আয়নের সংখ্যা খুব কম হওয়ায় তড়িৎ পরিবহনের মাত্রাও কম হয়। তাই অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য।

আবার, সিলভার নাইট্রেট (AgNO₃), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) ইত্যাদির বিয়োজন মাত্রা বেশি হওয়ায় গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে (জল) দ্রবীভূত অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে প্রচুর পরিমাণে আয়ন উৎপন্ন করে। ফলে এদের দ্রবণের তড়িৎ পরিবহনের মাত্রাও বেশি হয়। তাই AgNO₃, NaOH তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ।

AgNO₃ → Ag⁺ + NO₃⁻; NaOH → Na⁺ + OH⁻

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎবিশ্লেষ্য বলতে কী বোঝায়?

তড়িৎবিশ্লেষ্য হলো এমন পদার্থ যা গলিত অবস্থায় বা দ্রাবকে (যেমন – জলে) দ্রবীভূত হয়ে আয়নে বিয়োজিত হয় এবং সেই দ্রবণে তড়িৎ পরিবহন করতে পারে। যেমন – অ্যাসিড, ক্ষারক ও লবণ।

মৃদু ও তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

মৃদু ও তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো বিয়োজন মাত্রা বা Degree of Dissociation (α)।
1. তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য – দ্রাবকে দ্রবীভূত হলে এরা প্রায় 100% বিয়োজিত হয়ে প্রচুর সংখ্যক আয়ন তৈরি করে। (যেমন – NaCl, HCl, NaOH)।
2. মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য – দ্রাবকে দ্রবীভূত হলে এদের খুব অল্প অংশ (1% এরও কম) বিয়োজিত হয়ে অল্পসংখ্যক আয়ন তৈরি করে। (যেমন – CH₃COOH, NH₄OH)।

অ্যাসিটিক অ্যাসিডের দ্রবণে তড়িৎ পরিবহন কম হয় কেন, কিন্তু সোডিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণে বেশি হয়?

এর কারণ হলো আয়নের সংখ্যা ও গতিশীলতা।
1. অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH₃COOH) – এটি একটি দুর্বল অ্যাসিড, যা জলে খুব অল্প পরিমাণে বিয়োজিত হয়ে H⁺ ও CH₃COO⁻ আয়ন তৈরি করে। ফলে মুক্ত আয়নের সংখ্যা কম হয় এবং তড়িৎ পরিবহনও কম হয়।
2. সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) – এটি একটি তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য, যা জলে সম্পূর্ণরূপে Na⁺ ও Cl⁻ আয়নে বিয়োজিত হয়। প্রচুর সংখ্যক মুক্ত আয়ন থাকায় এটি তড়িৎ সুপরিবাহী।

“বিয়োজন মাত্রা” কীভাবে একটি পদার্থকে মৃদু না তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে?

বিয়োজন মাত্রা (α) হলো মোট দ্রবীভূত অণুর মধ্যে কত অংশ আয়নে পরিণত হয়েছে তার অনুপাত।
1. যদি α ≈ 1 (বা প্রায় 100%) হয় → পদার্থটি তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য।
2. যদি α ≪ 1 (বা 1% এরও কম) হয় → পদার্থটি মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য।

দুর্বল অ্যাসিড (যেমন – অ্যাসিটিক অ্যাসিড) এবং দুর্বল ক্ষারক (যেমন অ্যামোনিয়া) কি সবসময় মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য?

হ্যাঁ, সাধারণত তাই। দুর্বল অ্যাসিড ও দুর্বল ক্ষারক আংশিক বিয়োজনের কারণে জলে খুব কম সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে, তাই এরা মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য। যেমন, অ্যামোনিয়া (NH₃) জলে দ্রবীভূত হয়ে আংশিকভাবে NH₄⁺ ও OH⁻ আয়ন তৈরি করে।

অ্যাসিড বা ক্ষারকই কি তড়িৎবিশ্লেষ্য? লবণগুলো কী?

না, শুধু অ্যাসিড বা ক্ষারক নয়। অধিকাংশ লবণও তড়িৎবিশ্লেষ্য।
1. যেমন – NaCl, KBr, AgNO₃, CuSO₄—এগুলো জলে দ্রবীভূত হয়ে সম্পূর্ণরূপে আয়নে বিয়োজিত হয়, তাই এগুলো তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য।
2. তবে কিছু স্বল্প-দ্রবণীয় লবণ (যেমন – PbCl₂, AgCl) তাদের দ্রবণে আয়নের ঘনত্ব খুবই কম থাকে বলে মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের মতো আচরণ করে।

তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য দ্রবণের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা কি সবসময় একই হয়?

না, সবসময় এক নয়। তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা নির্ভর করে —
1. আয়নের ঘনত্ব – দ্রবণ যত বেশি সঙ্ঘনিত, আয়নের সংখ্যা তত বেশি (একটি সীমা পর্যন্ত)।
2. আয়নের আধান – আয়নের আধান যত বেশি, পরিবহন ক্ষমতাও তত বেশি।
3. আয়নের গতিশীলতা – ছোট ও হালকা আয়ন (যেমন – H⁺, OH⁻) দ্রুত গতিশীল হয়, তাই এদের পরিবহন ক্ষমতা বেশি।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাসিটিক অ্যাসিড মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য। কিন্তু সিলভার নাইট্রেট, সোডিয়াম হাইড্রাইড – এরা তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহার দ্রব্যে তামার প্রলেপ দিতে হলে ক্যাথোড ও অ্যানোডরূপে কী কী ব্যবহার করা হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও।

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

তড়িৎলেপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ও তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।