এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধাতব লবণ শনাক্তকরণে H₂S গ্যাসের প্রয়োগ উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ধাতব লবণ শনাক্তকরণে H₂S গ্যাসের প্রয়োগ উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।
ব্যবহারিক রসায়নে অজৈব লবণের গুণগত ও পরিমাণগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে H₂S গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন ধাতব লবণের জলীয় দ্রবণ লঘু HCl দ্বারা আম্লিক করে সামান্য গরম করে দ্রবণে H₂S গ্যাস পরিচালনা করলে কেবলমাত্র যেসব ধাতব সালফাইডের জলে দ্রাব্যতা কম যেমন— PbS, CuS, As₂S₃ ইত্যাদি সেগুলি অধঃক্ষিপ্ত হয়। এই অধঃক্ষিপ্ত সালফাইডের লবণগুলির বিভিন্ন বর্ণ দেখে এইসব ধাতব আয়নগুলিকে সহজে শনাক্ত করা যায়।
- আবার কিছু ধাতব আয়নের মিশ্রণ থেকে প্রতিটি ধাতব আয়নকে H₂S ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথক করা যায়। যেমন – কোনো মিশ্রণে CuSO₄ ও ZnSO₄ লবণ থাকলে, মিশ্রণটিকে জলে দ্রবীভূত লঘু HCl এবং H₂S গ্যাস যোগ করে ফিল্টার করলে অবশেষরূপে CuS -এর কালো অধঃক্ষেপ পাওয়া যায়। আবার পরিশ্রুত হিসেবে যেটি পড়ে থাকে, সেটিতে NH₄OH ও পুনরায় H₂S গ্যাস যোগ করে ফিল্টার করলে অবশেষ রূপে ZnS -এর সাদা অধঃক্ষেপ পাওয়া যায়। এইভাবে ধাতব লবণের আয়নগুলিকে শনাক্ত করা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ধাতব লবণ শনাক্তকরণে H₂S গ্যাস ব্যবহারের মূল নীতিটি কী?
H₂S গ্যাস একটি দুর্বল ডাইপ্রোটিক অ্যাসিড যা জলে দ্রবণীয় ধাতব আয়নগুলির সাথে বিক্রিয়া করে তাদের সংশ্লিষ্ট ধাতব সালফাইডের অধঃক্ষেপ তৈরি করে। বিভিন্ন ধাতুর সালফাইডের দ্রাব্যতা (Ksp মান) এবং রং ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায়, এই অধঃক্ষেপের রং দেখে মৌলিক দ্রবণে উপস্থিত ধাতব আয়ন শনাক্ত করা যায়।
H₂S গ্যাস পরিচালনার আগে দ্রবণটি লঘু HCl দ্বারা আম্লিক করা হয় কেন?
লঘু HCl যোগ করার মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রবণের pH নিয়ন্ত্রণ করা।
1. খুব অম্লীয় মাধ্যমেও (pH ≈ 0–1) কেবলমাত্র Group-II (যেমন – CuS, PbS, HgS ইত্যাদি) এর মতো অতি কম দ্রবণীয় সালফাইডগুলোই অধঃক্ষিপ্ত হয়।
2. যদি দ্রবণ নিরপেক্ষ বা ক্ষারকীয় হয়, তাহলে Group-IV (ZnS, MnS, NiS ইত্যাদি) ধাতুগুলোর সালফাইডও অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, ফলে ধাতুগুলির সঠিক পৃথকীকরণ সম্ভব হবে না।
3. এছাড়াও, অম্লীয় মাধ্যম Fe³⁺, Al³⁺, Cr³⁺ এর মতো আয়নগুলোর হাইড্রোক্সাইড তৈরি রোধ করে।
H₂S গ্যাস ব্যবহারের সময় দ্রবণটি হালকা গরম করার পরামর্শ দেওয়া হয় কেন?
দ্রবণটি হালকা গরম করলে –
1. বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায় এবং অধঃক্ষেপ দ্রুত গঠিত হয়।
2. কোলয়ডাল অধঃক্ষেপ (যেমন – As₂S₃) সহজে জমাট বাঁধে এবং ফিল্টার করা সহজ হয়।
Cu²⁺ এবং Zn²⁺ আয়নের মিশ্রণ থেকে H₂S ব্যবহার করে কীভাবে তাদের পৃথক করা যায়?
নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয় –
1. CuS অধঃক্ষেপণ – মিশ্রণটিকে লঘু HCl সহ মিশিয়ে H₂S গ্যাস চালনা করা হয়। CuS (কালো) অধঃক্ষিপ্ত হয়, Zn²⁺ দ্রবণে থেকে যায় কারণ অম্লীয় মাধ্যম ZnS -এর ক্ষেত্রে অধঃক্ষেপ তৈরি করে না।
2. ফিল্টারেশন – CuS কে ফিল্টার করে আলাদা করা হয়।
3. ZnS অধঃক্ষেপণ – ফিল্ট্রেটে NH₄OH যোগ করে ক্ষারকীয় করা হয় (কারণ ZnS ক্ষারকীয় মাধ্যমেই কেবল অধঃক্ষিপ্ত হয়)। এরপর আবার H₂S গ্যাস চালনা করলে ZnS (সাদা) অধঃক্ষিপ্ত হয়।
H₂S গ্যাসের পরিবর্তে অন্য কোন যৌগ ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে (H₂S অত্যন্ত বিষাক্ত) কখনও কখনও থিওঅ্যাসিটামাইড (CH₃CSNH₂) ব্যবহার করা হয়। গরম করলে বা অম্ল/ক্ষারকের সাথে এটি ধীরে ধীরে H₂S গ্যাস নির্গত করে, যা একই কাজ করে।
H₂S গ্যাস ব্যবহারে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
H₂S গ্যাস অত্যন্ত বিষাক্ত, দাহ্য এবং বায়ু থেকে ভারী। তাই —
1. ব্যবহার অবশ্যই ভালভাবে বায়ু চলাচলকারী স্থান বা ফিউম হুডে করতে হবে।
2. গ্যাস লিক হচ্ছে কিনা তা সতর্কভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
3. গ্যাস যেন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ না করে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
CuS এবং ZnS -এর দ্রাব্যতার মধ্যে এত পার্থক্য হওয়ার কারণ কী?
CuS এবং ZnS -এর দ্রাব্যতার মধ্যে এত পার্থক্য হওয়ার মূল কারণ হলো দ্রাব্যতা গুণফল (Ksp) -এর পার্থক্য।
1. CuS এর Ksp ≈ 6 × 10⁻³⁶ — অর্থাৎ এটি অত্যন্ত কম দ্রবণীয়, এমনকি অম্লীয় মাধ্যমেও অধঃক্ষিপ্ত হয়।
2. ZnS এর Ksp ≈ 2 × 10⁻²⁵ — এটি তুলনামূলকভাবে বেশি দ্রবণীয়, তাই এটি শুধুমাত্র ক্ষারকীয় মাধ্যমে অধঃক্ষিপ্ত হয়।
অম্লীয় মাধ্যমে H⁺ আয়ন S²⁻ আয়নকে H₂S -এ পরিণত করে, ফলে ZnS অধঃক্ষিপ্ত হয় না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধাতব লবণ শনাক্তকরণে H₂S গ্যাসের প্রয়োগ উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন