এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- সংকর ধাতু হল দুই বা ততোধিক ধাতুর সাধারণ মিশ্রণ।
- সংকর ধাতু সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব হতে পারে।
- সংকর ধাতুর কাঠিন্য তার উপাদানগুলির কাঠিন্য থেকে বেশি হয়।
- সংকর ধাতুর ক্ষয় কম হয়।
- সংকর ধাতুর ধর্ম তার উপাদানগুলির থেকে ভিন্ন হয়।
- অনেকক্ষেত্রে ধাতুসংকরে অধাতু থাকতে পারে।
- ধাতুসংকর একক ধাতুর চেয়ে বেশি নমনীয়, প্রসারণশীল হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সংকর ধাতু বলতে কী বোঝায়?
সংকর ধাতু হল দুই বা ততোধিক ধাতুর (বা একটি ধাতু ও একটি অধাতুর) সমসত্ত্ব ও একজাতীয় মিশ্রণ, যার ধর্ম তার উপাদান ধাতুগুলির থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়।
সংকর ধাতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কী কী?
সংকর ধাতুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে –
1. উপাদান ধাতুর চেয়ে বেশি কাঠিন্য ও শক্তি।
2. সাধারণ ধাতুর তুলনায় ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
3. গলনাঙ্ক উপাদান ধাতু থেকে ভিন্ন হতে পারে।
3. বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা সাধারণত বিশুদ্ধ ধাতুর চেয়ে কম হয়।
সংকর ধাতু কেন বিশুদ্ধ ধাতুর চেয়ে শক্তিশালী হয়?
সংকর ধাতুতে বিভিন্ন আকারের পরমাণু থাকে। এই ভিন্ন আকারের পরমাণুগুলি ধাতব কেলাসের মধ্যে অবস্থান নিয়ে কেলাসের স্লিপ বা পিছলানো প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এই বাধার কারণে সংকর ধাতুকে বিকৃত করতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, ফলে এটি বেশি শক্ত ও মজবুত হয়।
সংকর ধাতুর ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয় কেন?
কিছু সংকর ধাতু (যেমন স্টেইনলেস স্টিল) তৈরিতে ক্রোমিয়াম ব্যবহার করা হয়। ক্রোমিয়াম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ধাতুর পৃষ্ঠে একটি অদৃশ্য, শক্তিশালী ও স্থায়ী Cr₂O₃ অক্সাইড স্তর তৈরি করে, যা ভেতরের ধাতুকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এই প্রক্রিয়াকে প্যাসিভেশন (Passivation) বলে।
সকল সংকর ধাতু কি সমসত্ত্ব হয়?
না, সকল সংকর ধাতু সমসত্ত্ব নয়। সংকর ধাতু দুই ধরনের হতে পারে —
1. সমসত্ত্ব সংকর – যেখানে উপাদানগুলি সম্পূর্ণভাবে মিশে একক ফেজ তৈরি করে।
উদাহরণ – পিতল (তামা ও দস্তা)।
2. অসমসত্ত্ব সংকর – যেখানে উপাদানগুলি সম্পূর্ণভাবে মিশে না এবং আলাদা ফেজে থাকে।
উদাহরণ – সোল্ডার (Solder) — সীসা ও টিনের মিশ্রণ।
সংকর ধাতুর বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা কীভাবে প্রভাবিত হয়?
সাধারণত সংকর ধাতুর বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বিশুদ্ধ ধাতুর তুলনায় কম হয়। কারণ সংকর ধাতুতে ভিন্ন ধরনের পরমাণু থাকে, যা মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে রোধকতা (resistance) বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই বৈদ্যুতিক তারে বিশুদ্ধ তামা (Cu) ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সংকর নয়।
“ধাতুসংকরে অধাতু থাকতে পারে” — এই বৈশিষ্ট্যটি উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
হ্যাঁ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংকর ধাতুতে অধাতু উপাদান থাকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল ইস্পাত। ইস্পাত মূলত লোহা (একটি ধাতু) ও কার্বন (একটি অধাতু) -এর সংকর। কার্বনের উপস্থিতি ও এর পরিমাণই লোহার কঠিনতা, শক্তি ও ভঙ্গুরতা নির্ধারণ করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন