এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কর্দমাক্ত জলাভূমিতে যে আলেয়া দেখা যায়, সেটি কী? অথবা, আলেয়া কীভাবে উৎপন্ন হয়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কর্দমাক্ত জলাভূমিতে যে আলেয়া দেখা যায়, সেটি কী?
অথবা, আলেয়া কীভাবে উৎপন্ন হয়?
কর্দমাক্ত জলাভূমিতে উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর মৃতদেহ পচনের ফলে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসের সঙ্গে ফসফিন (PH3) এবং ফসফরাস ডাইহাইড্রাইড (P2H4) গ্যাস মিশে থাকে। ফসফরাস ডাইহাইড্রাইড বায়ুর সংস্পর্শে এলে নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে। এর ফলে মিথেন ও ফসফিন গ্যাসে আগুন ধরে যায় এই আগুনকে আলেয়া বলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আলেয়া কীভাবে সৃষ্টি হয়?
আলেয়া সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ —
1. প্রথমে, জলাভূমিতে জৈব পদার্থ পচে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
2. এই মিথেন গ্যাসের সাথে সামান্য পরিমাণে ফসফিন (PH₃) এবং ডাইফসফিন (P₂H₄) গ্যাস মিশে থাকে।
3. ডাইফসফিন গ্যাস বাতাসে এলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্বলে ওঠে।
4. এর ফলে আশেপাশের মিথেন ও ফসফিনেও আগুন ধরে যায় এবং একটি মৃদু জ্বলন্ত আলোর সৃষ্টি হয় — এটাই দূর থেকে আলেয়া হিসেবে দেখা যায়।
আলেয়া কেন চলমান বা ভেসে বেড়াতে দেখা যায়?
গ্যাসগুলো জলাভূমির নিচ থেকে বুদবুদের মতো ফুঁড়ে ওঠে। বাতাসের হালকা প্রবাহে এর অবস্থান বদলে যায়। আবার একটি স্থানে গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের আরেকটি গ্যাস জ্বলে উঠতে পারে। তাই দূর থেকে মনে হয় আলোটি নড়ছে বা ভেসে বেড়াচ্ছে।
আলেয়া দেখতে সাধারণত কী রঙের হয়?
আলেয়া সাধারণত নীলচে, সবজেটে বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়। এর রঙ নির্ভর করে কোন গ্যাস কতটা পরিমাণে আছে এবং তার দহনের ধরন কেমন তার উপর।
আলেয়া কি বিপজ্জনক?
সাধারণত আলেয়া খুব বেশি বিপজ্জনক নয়। এটি একটি ক্ষণস্থায়ী ও কম তাপমাত্রার দহন প্রক্রিয়া। তবে কোনো স্থানে যদি প্রচুর পরিমাণে দাহ্য গ্যাস জমে থাকে, তাহলে সেখানে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকতে পারে।
আলেয়ার সাথে ভূত-প্রেত বা অশরীরী আত্মার সম্পর্ক কী? লোককাহিনীতে এর ব্যাখ্যা কী?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানা না থাকায় আগে আলেয়াকে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভূত-প্রেত, প্রেতাত্মা বা রাক্ষস-খুল্লুশের আলো বলে মনে করা হতো। বাংলার লোককাহিনীতে বিশ্বাস ছিল—এই আলো ভ্রমণকারীদের পথভ্রষ্ট করে। এজন্যই একে “আলেয়ার আলো” বা “ভূতের বাতি” বলা হয়।
আলেয়া শুধু কি জলাভূমিতেই দেখা যায়?
মূলত হ্যাঁ, তবে যে কোনো স্থানে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে দাহ্য গ্যাস (বিশেষ করে মিথেন) উৎপন্ন হয় ও বাতাসের সংস্পর্শে এসে জ্বলে উঠতে পারে, সেখানেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন – পুরনো কয়লার খনি, সমাধিক্ষেত্র, জঙ্গলের ফাঁপা গর্ত।
ফসফিন গ্যাস কী?
ফসফিন (PH₃) একটি দাহ্য, বর্ণহীন গ্যাস, যার গন্ধ পচা মাছের মতো। অক্সিজেন ছাড়া পচন (Anaerobic decomposition) প্রক্রিয়ায় এটি স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হয়। ডাইফসফিনের সঙ্গে মিশে এটি আলেয়া জ্বলে উঠতে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কর্দমাক্ত জলাভূমিতে যে আলেয়া দেখা যায়, সেটি কী? অথবা, আলেয়া কীভাবে উৎপন্ন হয়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন