জিব্বেরেলিন হরমোনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জিব্বেরেলিন হরমোনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জিব্বেরেলিন হরমোনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।

জিব্বেরেলিন হরমোনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।

জিব্বেরেলিন হরমোনের ব্যাবহারিক প্রয়োগ –

  • গাছের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি – টম্যাটো, লেটুস শাক, আখ, ওট্স প্রভৃতির উদ্ভিদের পর্বমধ্যের বৃদ্ধি ঘটাতে জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগ করা হয়।
  • বংশগত খর্বতা দূরীকরণ – মটর, ধান, ভুট্টা প্রভৃতি উদ্ভিদের বংশগত খর্বতা দূরীকরণে জিব্বেরেলিন সাহায্য করে।
জিব্বেরেলিন প্রয়োগের মাধ্যমে বংশগত খর্বতা দূরীকরণ
  • ফলের সংখ্যা ও আকার বৃদ্ধি – স্ট্রবেরি, আঙুর, কলা প্রভৃতি গাছের ফলের থোকাতে ফলের সংখ্যা ও আকার বৃদ্ধিতে GA3 প্রয়োগ করা হয়।
  • বীজবিহীন ফল উৎপাদন – আপেল, নাসপাতি, আঙুর স্ট্রবেরি প্রভৃতি গাছে নিষেক ছাড়া বীজহীন ফল উৎপাদনে GA3 প্রয়োগ করা হয়।
  • ফুলের প্রস্ফুটন ও আকার বৃদ্ধি – ক্যামেলিয়া, জিরানিয়া প্রভৃতি ফুলের আকার বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করা হয়।
  • দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটানো – বীজের সুপ্তদশা দূরীকরণে জিব্বেরেলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অঙ্কুরোদগমে পূর্বে বীজের মধ্যে জিব্বেরেলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ভুট্টা, বার্লি, লেটুস প্রভৃতি বীজের দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করা হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জিব্বেরেলিন মূলত কীসের জন্য ব্যবহৃত হয়?

জিব্বেরেলিনের প্রাথমিক ব্যবহার হলো গাছের পর্বমধ্য (Internode) দ্রুত প্রসারিত করে গাছের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা, বংশগতভাবেই খর্বাকৃতির উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা, ফলের আকার ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটানো।

জিব্বেরেলিন কীভাবে বীজবিহীন ফল উৎপাদনে সাহায্য করে?

জিব্বেরেলিন (বিশেষত GA3) ফুলের ডিম্বাশয়কে নিষেক ছাড়াই (অর্থাৎ পরাগরেণু না লাগিয়েই) বিকশিত হতে উদ্দীপিত করে। এই প্রক্রিয়াকে “অপুষ্পিত ফলধারণ” (Parthenocarpy) বলে। এভাবে আঙুর, আপেল, স্ট্রবেরি ইত্যাদিতে বীজবিহীন ফল পাওয়া যায়।

কোন ধরনের ফসলের ফলন বাড়াতে জিব্বেরেলিন কার্যকর?

আঙুর, স্ট্রবেরি, কলা, আপেল, নাসপাতি ইত্যাদি ফলের আকার ও থোকায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফলন বাড়াতে; এবং আখ, ভুট্টা, টমেটো, লেটুসের মতো সবজির দৈর্ঘ্য ও সামগ্রিক বৃদ্ধি বাড়িয়ে ফলন বাড়াতে জিব্বেরেলিন খুবই কার্যকর।

জিব্বেরেলিন প্রয়োগে কি সবসময় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়?

না, সবসময় নয়। জিব্বেরেলিনের প্রয়োগ মাত্রা, উদ্ভিদের প্রজাতি ও প্রয়োগের সময়ের উপর ফলাফল নির্ভর করে। অত্যধিক বা অসময়ে প্রয়োগ করলে ফসলের গুণগত মান কমে যাওয়া, গাছ দুর্বল হয়ে পড়া, বা অনাকাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে।

জিব্বেরেলিন এবং অক্সিন হরমোনের ব্যবহারের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

উভয়ই বৃদ্ধিজাত হরমোন, কিন্তু তাদের কাজ আলাদা।
1. অক্সিন মূলত কাণ্ড ও শিকড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, কোষ প্রসারণ, প্রকট প্রকৃয়ায় (Apical Dominance) এবং কৃত্রিমভাবে ফল ধারণে সাহায্য করে।
2. জিব্বেরেলিন মূলত পর্বমধ্যের দ্রুত প্রসারণে, বীজের সুপ্ততা ভাঙতে, বীজবিহীন ফল তৈরিতে এবং বংশগত খর্বতা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর।

বীজের অঙ্কুরোদ্গমে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা কী?

অনেক বীজে (যেমন – লেটুস, বার্লি, ভুট্টা) অঙ্কুরোদ্গমের জন্য বিশেষ পরিবেশ (আলো, ঠাণ্ডা ভিজানো ইত্যাদি) প্রয়োজন হয় যা সুপ্ততা দূর করে। জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করলে এই সুপ্তাবস্থা দ্রুত কেটে যায় এবং বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়। এটি বীজের মধ্যে থাকা এনজাইমকে সক্রিয় করে খাদ্যবস্তু ভাঙতে সাহায্য করে, যা অঙ্কুরোদ্গমের শক্তি জোগায়।

জিব্বেরেলিন প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশগত বৈশিষ্ট্য কি স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করা যায়?

না, জিব্বেরেলিনের প্রভাব শারীরবৃত্তীয় এবং অস্থায়ী। এটি জিনের বৈশিষ্ট্য বা বংশগতির গঠন (DNA) পরিবর্তন করে না। এটি শুধুমাত্র হরমোন প্রয়োগকৃত গাছটির বৃদ্ধি ও বিকাশ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। পরবর্তী প্রজন্মে এই প্রভাব স্থানান্তরিত হয় না, যদি না বীজ উৎপাদনের উপর এর কোনো পরোক্ষ প্রভাব থেকে থাকে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জিব্বেরেলিন হরমোনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি সংক্ষেপে লেখো। অথবা, নিয়ন্ত্রকরূপে হরমোনের ভূমিকা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।