পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা - প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা

“শ্যামল সুন্দর সৌম্য, অরণ্যভূমি
মানবের পুরাতন বাসগৃহ তুমি;
তুমি দাও ছায়াখানি, দাও ফুল ফল
দাও বস্ত্র, দাও শয্যা, দাও স্বাধীনতা
নিশিদিন মর্মরিয়া বহু কত কথা
অজানা ভাষার মন্ত্র;”

ভূমিকা – মহাবিশ্বে মাটি, জল, বাতাস, অরণ্য, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদি ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলি নিয়েই পার্থিব পরিবেশ। এই পার্থিব পরিবেশের প্রভাবে আমাদের জীবনধারা প্রভাবিত হয়েছে। মানুষ গড়ে তুলেছে তার নতুন সভ্যতা, নিজের পরিবেশ। মানুষের এই যে পরিবেশ তাই সভ্যতার প্রকৃত স্বরূপ। জীবনকে সুখী ও সুন্দর করার জন্য ছড়িয়ে থাকা উপকরণকে মানুষ আয়ত্ত করতে শিখেছে। এই আয়ত্ত করা সম্ভব হয়েছে বুদ্ধি, পরিশ্রম ও দক্ষতাকে মূলধন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায়। কিন্তু এইভাবে পরিবর্তিত হতে হতেই বর্তমানের পরিবেশ হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। মানুষের চারপাশে মাটি, জল, বাতাস এমনই দূষিত হয়েছে যে বিশ্ববাসী আজ সচেতন হয়ে সেই পরিবেশদূষণ প্রতিকারে উদ্যোগী হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদেরকেও পরিবেশরক্ষায় এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের কারণ – মানুষের চারপাশের পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হয়ে পড়েছে। এই কারণগুলিকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. প্রাকৃতিক কারণ এবং
  2. কৃত্রিম কারণ।

দুশো বছর ধরে পৃথিবীর জনসংখ্যায় প্রবল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ হয়েছে ভীষণভাবে দূষিত। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে ধূলিঝড়, বালিঝড়, দাবাগ্নি, অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় পরিবেশে পারদ, সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদির অনুমোদনযোগ্য মাত্রার অতিক্রমণ। এর মধ্যে আবার কতকগুলি বিভিন্ন প্রাণীর মল, মূত্র ও শরীরের পচন থেকে উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে পরিবেশদূষণের কৃত্রিম কারণগুলি মানুষেরই সৃষ্টি। যেমন – কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ, কলকারখানার ধোঁয়া, নদীনালাতে পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা ফেলা, মহাশূন্যে রকেট উৎক্ষেপণ ইত্যাদি। তাই সামগ্রিকভাবে পরিবেশদূষণের কারণ হিসেবে বায়ুদূষণ, জলদূষণ ও শব্দদূষণ তিনটিরই প্রভাবকে খোঁজার চেষ্টা করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।

বায়ু বিভিন্নভাবে দূষিত হয়ে চলেছে। যেমন – ঝুল জাতীয় কার্বনকণা থেকে শুরু করে ভারী ধাতু, জটিল যৌগ, তেল, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে বাতাসে CO₂ ছড়াচ্ছে। এই বায়ুদূষণে মানুষের মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার প্রভৃতি রোগ হচ্ছে।

আজ সমুদ্র, নদনদী, খালবিল, পুকুর প্রভৃতির জল নানাভাবে হচ্ছে দূষিত। অসংখ্য কলকারখানা থেকে আগত বিষাক্ত নোংরা বর্জ্য পদার্থ পুকুর ও নদীর জলকে দূষিত করছে। জলদূষণের ফলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে মানুষের অপমৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া মাইক, মোটরগাড়ি, কলকারখানা, পটকা প্রভৃতির বিকট শব্দ নানাভাবে শব্দদূষণ ঘটানোর ফলে মানুষ হারিয়ে ফেলছে শ্রবণশক্তি, এমনকি বেড়ে যাচ্ছে রক্তচাপ ও মানসিক অস্থিরতা।

পরিবেশরক্ষা – পরিবেশরক্ষা কেবলমাত্র সরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সমাজের, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের একটা বৃহৎ দায়িত্ব রয়েছে। নবীন বয়সে উদ্যম মানুষের অপরিসীম। তাই পরিবেশ রক্ষায় তারাই সর্বাগ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের পরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। গ্রামে-গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায়, পরিবেশসচেতনতা সম্পর্কে শিবির তৈরি করে এবং গ্রীষ্মের বা পুজোর ছুটির মতো দীর্ঘকালীন ছুটিতে ছাত্ররা দলবেঁধে বিভিন্ন অঞ্চলে সেমিনার বা আলোচনাচক্র করে নাগরিককে পরিবেশদূষণের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে। এতে পরিবেশসচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের আনন্দও পাওয়া যায়, গ্রামবাসী বা শহরবাসীদের সঙ্গে পরিচয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ে, সেইসঙ্গে পালিত হয় মানবিকতার ব্রত। আসলে পরিবেশদূষণ প্রতিকারের দায়িত্ব গোটা সমাজের হলেও সেই দায়িত্ব মূলত ছাত্রছাত্রীদের নিতে হবে। ছাত্রদের এই কর্মসূচিতে যোগদান করা উচিত শিক্ষকদেরও। অবশ্য পরিকল্পনা আরও বাস্তবসম্মত হতে পারে যদি পরিবেশ দপ্তরকে এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

উপসংহার – মানুষের সামনে খোলা আছে দুটি পথ – সুস্থসবলভাবে জীবন অতিবাহিত করা অথবা পরিবেশদূষণের শিকার হয়ে রোগজ্বালায় ভুগতে ভুগতে মৃত্যুবরণ করা। পরিবেশদূষণ তাকে ক্রম-অবলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। হিরোসিমা-নাগাসাকির বিস্ফোরণ থেকে মানুষ যদি শিক্ষা না নেয় তাহলে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য। এই বিস্ফোরণ শুধু এক মুহূর্তে অনেক মানুষের মৃত্যুই ঘটায়নি, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পঙ্গু বা অচল করে দিয়েছে। তাই পরিবেশরক্ষায় মানুষ তথা বৃহত্তর ছাত্রসমাজকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে –

“চলে যাব তবু আজ যতক্ষণ দেহে
আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে
যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘পরিবেশরক্ষায় ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ - প্রবন্ধ রচনা

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার - প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় - প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় – প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের প্রকৃতি – প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন – প্রবন্ধ রচনা