আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বিশ্ব উষ্ণায়ন
“ধূ-ধূ করে মরুভূমি;
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছায়া ম’রে গেছে পদতলে।
আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই;
নির্বাক, নীল, নির্মম মহাকাশ।” – ‘উটপাখি’
ভূমিকা – শীতপ্রধান দেশের মানুষ বহু দুষ্প্রাপ্য এবং ক্রান্তীয় উদ্ভিদ কাচের ঘরে অর্থাৎ গ্রিন হাউসে রাখেন। ওই গাছগুলি থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড কাচের ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতে না পেরে একটি আস্তরণ তৈরি করে, যা সূর্যরশ্মি থেকে প্রাপ্ত তাপের বিকিরণকে বাধা দেয় ফলে এই কাচের ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। গোটা বিশ্বে আজ মাত্রাছাড়া দূষণ এবং সভ্যতার অনিয়ন্ত্রিত অগ্রগতির ফলে CO₂ -এর পরিমাণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তা গ্রিন হাউসে পরিণত হয়েছে, যার উষ্ণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। একেই আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming বলে থাকি।
উষ্ণায়নের সূত্রপাত – 1896 খ্রিস্টাব্দে নোবেলজয়ী সুইডিশ বিজ্ঞানী অরথেনিয়াম বায়ুমণ্ডলে CO₂ -এর পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি একে ‘গ্রিন হাউস এফেক্ট’ নাম দেন। অথচ শীতপ্রধান দেশের ওই কাচের ঘরের মতোই স্বাভাবিক মাত্রার CO₂ -এর পরিমাণ পৃথিবীর পক্ষে ক্ষতিকর নয়। কারণ এই প্রভাব না থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা তাপবিকিরণের ফলে সর্বত্র প্রায় 0°C-এ পরিণত হত।
উষ্ণায়নের কারণ – মানুষের বিলাসবহুল জীবন, শক্তির অপচয়, অরণ্য ধ্বংস, শিল্পবিপ্লব, জ্বালানি খরচ, বাতাসে CO₂, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC), নাইট্রাস অক্সাইডের মাত্রাবৃদ্ধি, সর্বোপরি জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। ফলত বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমান বিশ্বের একটি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। Inter governmental panel on climate change (IPCC) -এর মতে বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি এবং 1980 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে তার মাত্রা দ্রুত হয়েছে। NASA-র God-dard Institute for space studies (GISS) এবং National Climate Centre -এর মতে 2005-2010 খ্রিস্টাব্দগুলি বিশ্বের উষ্ণতম সময়।
প্রকৃতিতে উষ্ণায়নের প্রভাব – পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি এইরকমভাবে বাড়তে থাকে তাহলে 2040 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মেরুপ্রদেশের সমস্ত বরফ গলে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অতিবৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ, সুনামি, তুষারপাত, ঋতু পরিবর্তনে অসাম্য পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। যেখানে আমাদের কৃষিকাজ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানের ওপর নির্ভরশীল সেখানে বিশ্ব উষ্ণায়ন কৃষিকাজের ক্ষতিসাধন করে গোটা বিশ্বকে খাদ্যসংকটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 2050 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যদি 3°C বাড়ে সেক্ষেত্রে কানাডা ও রাশিয়ার বৃহৎ গম উৎপাদন অঞ্চলগুলির গম উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মানবজীবনে উষ্ণায়নের প্রভাব – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে তাপমাত্রার হেরফের বা ঋতুপরিবর্তনের অসাম্য, তা স্বাস্থ্যহানির বড়ো কারণ। এর ফলে খাদ্য ও জলবাহিত রোগ এবং ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাল এনসেফ্যালাইটিস প্রভৃতি রোগ বৃদ্ধি পাবে। তাপপ্রবাহ যেমন জীবন হানিকর হবে তেমনি তাপমাত্রার দ্রুত হেরফের মানুষের সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গিয়ে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনও ঘটাবে। লুপ্ত হবে বহু কীটপতঙ্গ, প্রাণী-যা ecological balance-কে নষ্ট করবে।
প্রতিকারের উপায় – শিল্পায়ন ও অরণ্য ধ্বংস বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ হলেও আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রাও এর জন্য দায়ী। এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটার থেকে নির্গত মিথেন, যানবাহন থেকে নির্গত CO₂ এই উষ্ণায়নের বড়ো কারণ। আমাদের বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় রোধ করতে হবে। কারণ যত জ্বালানি খরচ কম হবে, CO₂ উৎপাদন কম হবে।
উপসংহার – উষ্ণায়নের ফলে যেমন মেরুপ্রদেশের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়িয়ে দিয়ে প্লাবিত করবে বিশ্বের বহু দেশ তেমনি এর ফলে পৃথিবীর ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণও কমে যাবে। সুতরাং বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষতি মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। 2005 খ্রিস্টাব্দে ‘কিয়োটা প্রোটোকল’-এ CO₂ গ্যাস নিঃসারণ চুক্তি হলে উন্নত দেশগুলি তা মেনে নেয়নি। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে এ নিয়ে একটা বিরোধ রয়েছেই, যা আদতে ক্ষতি করছে সার্বিক মানবসমাজের। আশা করা যায়, আগামী দিনে মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ নির্ণয়ে এবং তা প্রতিকারে মানবসমাজ অনেক বেশি সচেতন হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন