আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়
ভূমিকা – জীবনধারণের লক্ষ্যে যে মানবজাতি তার বুদ্ধিমত্তার জোরে প্রকৃতির সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, আপন ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থতায় আজ তাকেই আঘাতে আঘাতে ধ্বংস করতে উদ্যত। ‘দস্যুপায়ের কাঁটামারা জুতোর তলায়’ হত নিষ্পাপ প্রাণেরা। সবুজের চিহ্ন আজ বিলুপ্ত; পাখিদের কলকাকলি আজ নিস্তব্ধ। নিসর্গ সৌন্দর্যকে পদদলিত করে উড়ছে আজ প্রকৃতি বিজয়ের পতাকা।
‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো’ – না, প্রকৃতি তাদের ক্ষমা করেনি। আঘাতের প্রতি প্রত্যাঘাত হেনে প্রকৃতি আজ তাণ্ডবলীলায় উন্মত্ত। বসুধার নিদারুণ যন্ত্রণার মর্মান্তিক অভিব্যক্তিরূপে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর বন্যা, সামুদ্রিক ঝড়, সুনামি। দেখা দিচ্ছে খরা, ভূমিকম্প।
সাম্প্রতিক বিপর্যয়সমূহ – 2020 সালের শুরুতেই সমগ্র বিশ্বে আঘাত করেছিল কোভিড-19। কোভিড বিধি, লকডাউনের প্রতিকূলতার মাঝেই সমগ্র বাংলা সাক্ষী থাকল এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের – আম্ফান। পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যও প্রকৃতির রোষ থেকে রেহাই পায়নি। অতিবর্ষণে তলিয়ে গেছে প্রায় ত্রিশটি জেলা। এখানেই শেষ নয়, সেইসব স্মৃতিকেই আবার উসকে দিতে 2021-এ ধেয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় যশ। ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় – 2020 সালের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হয় একুশ শতকের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। 20 মে বিকেল 5টা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল অঞ্চলে এটি প্রথম স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। ঘণ্টায় প্রায় 185 কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালিয়ে আম্ফান ওড়িশা এবং বাংলাদেশেও প্রবেশ করে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ আরও অনেক জেলা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে, বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয় এবং কলকাতা-সহ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে বিদ্যুৎ-জল-যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী-সহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।
আম্ফানের স্মৃতিকে উসকে দিয়েই 2021 সালের 26 মে ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়ে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। প্রত্যক্ষ প্রভাব না পড়লেও পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর অন্যদিকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন-সহ একাধিক অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় 15,04,506 জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 134টি বাঁধ ভেঙে গিয়ে বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক বন্যা – ভারতবর্ষের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির মধ্যে আসাম অন্যতম। নিরন্তর বর্ষণে 2020 সালে ভয়ংকর বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা রাজ্য। সরকারি সূত্রে খবর, লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শতাধিক মানুষ নিহত হয় এই দুর্যোগে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে প্রায় পঁচাত্তর হাজার সাতশো হেক্টর কৃষিজমি। এমনকি রেহাই পায়নি কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণীরাও।
নদীমাতৃক পশ্চিমবঙ্গ প্রায় প্রতিবছরই বন্যাকবলিত হয়। কিন্তু বিগত দশকের স্মৃতিকে পিছনে ফেলেছে 2021। বারংবার ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, অতিবর্ষণে প্লাবিত পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ডিভিসি, পাঞ্চেত, মাইথন, তিলপাড়া – একাধিক লকগেট খুলে দেওয়ায় জলের তলায় হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, মুরশিদাবাদের বহু অঞ্চল। সঠিক নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে প্রতিবছর বিপর্যস্ত হয় হুগলির গোঘাট-আরামবাগ-খানাকুল। দামোদর, মুন্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ এই চার নদী প্লাবিত হয়ে এবারও সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি, ক্ষতিগ্রস্ত সারাবছরের ফসল।
অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, পিংলা, সবং ইত্যাদি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাড়ি। জলমগ্ন হয়েছে প্রায় 207টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরওয়ার্ড। আবার দামোদরের জলে প্লাবিত উদনারায়ণের 9টি পঞ্চায়েতের 85টি গ্রাম। সরকারি উদ্যোগে ত্রাণশিবিরের আশ্রয়ে লক্ষাধিক মানুষ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিপর্যস্ত মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
উপসংহার –
“এসো যুগান্তের কবি,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে,
বলো ‘ক্ষমা করো’-“
হ্যাঁ, সংশোধনের সময় এখনই। প্রকৃতির রুদ্ররূপকে শান্ত করতে সচেষ্ট হতে হবে আমাদেরই। প্রকৃতির উপর স্বেচ্ছাচার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রকৃতি সুস্থির হলে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরবে আমাদের জীবনেই। স্নেহের সন্তান আবার ফিরে পাবে প্রকৃতি মাতার স্নেহাঞ্চল।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন