আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘গাছপালা আমাদের বন্ধু‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

গাছপালা আমাদের বন্ধু
ভূমিকা – পৃথিবীতে মানবসৃষ্টির বহু আগেই বৃক্ষের আবির্ভাব হয়েছিল। আদিম মানুষ ছিল অরণ্যচারী। তাই গাছই তাকে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান জুগিয়েছিল। গাছই ছিল তার প্রাণরক্ষক। সৃষ্টির প্রথম লগ্ন থেকেই গাছের সঙ্গে মানুষের নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব। অন্তহীন প্রাণের প্রতীক এই গাছ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চির পথিক।”
বন্ধু কে? – সংস্কৃতে একটি শ্লোক রয়েছে, “আতুরে ব্যসনে প্রাপ্তে দুর্ভিক্ষে শত্রুসঙ্কটে/রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ।” অর্থাৎ রোগজ্বালায়, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুসংকটে, কারাগারে, শ্মশানে যে সাহায্য করে সে-ই প্রকৃত বন্ধু। সুখে-দুঃখে যে একে অপরের সাথি হয় তাকেই বলা হয় প্রকৃত বন্ধু। তাই আমাদের উচিত বন্ধুর সঙ্গে যথাযথ ব্যবহার করা, তাকে বাঁচিয়ে রাখা, তা না হলে আমরাই বিপন্ন হয়ে পড়ব। গাছ আমাদের এমনই এক বন্ধু।
বন্ধুত্বের স্বরূপ – গাছ মানুষের প্রাণের বন্ধু। গাছের সঙ্গে মানুষের সখ্য সৃষ্টির লগ্ন থেকেই। অক্সিজেন জোগান দিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে গাছ। বন্যা, খরা, ভূমিক্ষয় রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বনভূমিতে বন্যপ্রাণী বাস করে। শুকনো লতাপাতায় জল আটকে মাটির জলধারণক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বহু সামগ্রী তৈরিও গাছ থেকেই হয়। চিত্তবৃত্তির দিক থেকেও গাছ আমাদের শেখায় ত্যাগ, সহনশীলতা।
গাছের প্রয়োজনীয়তা – একটি গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ও পরিবেশের বিবিধ ক্ষতি হয়। গাছ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে। পাখি ও অন্যান্য জীবের আশ্রয়স্থল গাছ। বায়ুর চাপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। ভূমিক্ষয় রোধ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। যে গাছ আমাদের বন্ধু তার সঙ্গেই আমরা শত্রুর মতো আচরণ করি। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমরা নির্বিচারে গাছ কাটছি। গাছ কাটার ফলে বন ও বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, ফলে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা ব্যাধিতে।
উপসংহার – আধুনিক সভ্যতার ইট-কাঠ-পাথরের নিষ্প্রাণ পরিবেশে মানুষ আজ হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই কবিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, “দাও ফিরে তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি, গ্লানিহীন অতীতের দিনগুলি”। প্রকৃত সভ্যতা এবং গাছ ও অরণ্যের সহাবস্থান নিশ্চয়ই সম্ভব। এরজন্য চাই সচেতনতা ও সঠিক কর্মসূচির বাস্তবায়ন। শুধু আইনপ্রণয়ন করে নয় সরকারি পদক্ষেপে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। সেজন্য চাই স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া, তা করা সম্ভব হলেই গাছও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে। সেই বন্ধুত্বের সহযোগিতায় আমাদের জীবনধারণ সুস্থ ও সুন্দর হয়ে উঠবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘গাছপালা আমাদের বন্ধু‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন