আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রাত্যহিক জীবনে জল‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

প্রাত্যহিক জীবনে জল
ভূমিকা – বিশ্বপ্রকৃতির এক অনবদ্য দান জল। জীবজগতে প্রাণপ্রবাহের অন্যতম উপাদান হল জল। জীবনধারণের জন্য বায়ুর পরেই তার স্থান। জল ব্যতীত এ জীবন অচল, তা বলাই বাহুল্য। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে জলের অনিঃশেষ উপযোগিতা বিদ্যমান। তাই তো জলের অপর নাম জীবন।
প্রাত্যহিক জীবনে জলের ব্যবহার – প্রাত্যহিক জীবনে জল একটি নিত্য উপযোগী উপকরণ। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে, প্রকৃতির অন্যান্য উপকরণ অপেক্ষা জল সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। প্রোটোপ্লাজমের শতকরা 60-90 ভাগ জল। আমাদের রক্তে শতকরা 90-92 পরিমাণ জল থাকে, পেশীতে থাকে প্রায় 50%। জলের মাধ্যমেই কোশে নানান বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটে। জলের সাহায্যেই কোশ থেকে কোশান্তরে বিভিন্ন অণুর ব্যাপন ও অভিস্রবণ ঘটে। জীবদেহের তাপশোষণ, তাপ পরিবহন এবং তাপ হ্রাস প্রভৃতি ভৌত প্রক্রিয়াগুলি মূলত জলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রাত্যহিক জীবনে কেবল পানের জন্যই নয়, স্নান করা, কাপড় কাচা, বাসনপত্র ধোয়া-মাজা, রান্নার কাজে জলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরোক্ষভাবে আমাদের নিত্যব্যবহার্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ খাদ্যসমূহ জলের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদদেহে খাদ্য প্রস্তুতিতে সর্বোপরি জীবনধারণের জন্য জল একটি অমূল্য সম্পদ। জল বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থলস্বরূপ। জল ব্যতীত এই জগৎ রুক্ষ, শুষ্ক মরুতে পরিণত হবে। প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহে ধূসর ধরণীবক্ষে নবপ্রাণের সঞ্চার ঘটায় সজল বর্ষা। পিপাসার্তের তৃষ্ণা নিবারিত হয়ে সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে ধরিত্রী মা।
এ ছাড়া কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তিতেও জলের প্রয়োজনীয়তা লক্ষণীয়। জলসেচ ব্যতিরেকে যেমন – ভূমিবক্ষে সোনার ফসল ফলে না, তেমনি কলকারখানার উৎপাদনকার্যে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
জল সংকট – সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের মানোন্নয়ন, উগ্রনগরায়ণ বিশ্বপ্রকৃতির বুকে অভিশাপস্বরূপ নেমে এসেছে। জীবনদায়ী জল আজ প্রকৃতিব্যাপী দূষণ লীলায় দূষিত হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। সমুদ্রগামী জাহাজ নিক্ষিপ্ত তেল ও নানাবিধ আবর্জনায় বিপন্ন হচ্ছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন। উপকূলবর্তী অঞ্চলে পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থের নির্গমনে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সমুদ্রবক্ষ নদনদীসমূহ এ ছাড়া তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণেও দূষিত হচ্ছে পৃথিবীর জলসম্পদ। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে, আবহাওয়ার পালাবদলে ক্রমবর্ধমান অনাবৃষ্টি, খরা বিশ্বের জল ভান্ডারে অপ্রতুলতা সৃষ্টি করছে। জলবাহিত রোগ মাত্রা ছাড়াচ্ছে শহর-গঞ্জের মাটিতে। আর্সেনিক দূষণের শিকার হয়ে অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।’
উপসংহার – সময় এসেছে জনজাগরণের। যে জলবিন্দু আমাদের প্রাণবিন্দুস্বরূপ, সেই জলকে দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব আমাদেরই। কেবল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা প্রশাসনিক সতর্কবার্তায় ক্ষণিকের চেতনাপ্রাপ্তি নয়, জলকে নির্মল ও সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে আপামর জনসাধারণকে। নচেৎ পৃথিবীব্যাপী জলের অপ্রতুলতা জীব ও জগৎকে কালসলিলে নিমজ্জিত করবে অদূর ভবিষ্যতে-এ কথা নিশ্চিত।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রাত্যহিক জীবনে জল‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন