আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার
ভূমিকা – মঙ্গলের অভিযান সফল হলেও অমঙ্গলের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ এখনও কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। মানবসভ্যতার যতই অগ্রগতি হোক-না-কেন একবিংশ শতকেও বিজ্ঞান ও কুসংস্কার নামক দুটি বিপরীতার্থক শব্দ সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছে। এর ফলস্বরূপ সমাজসভ্যতা একধাপ এগোচ্ছে তো সঙ্গে সঙ্গে একধাপ পিছিয়েও পড়ছে। এর হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে গেলে মানবিকতাবোধ ও সমাজসচেতনতাবোধে আগ্রহী হতে হবে, নাহলে আমাদের সমাজ-অঙ্গনে অমঙ্গলের কালো ছায়া ঘনাবে।
কুসংস্কারের সূচনা – অরণ্যচারী বা গুহাবাসী মানুষ ছিল প্রকৃতির হাতের পুতুল। তারা তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মূল কারণ অনুধাবন করতে না পেরে ভূতপ্রেত বা অপদেবতার চোখরাঙানিকে দায়ী করত। একারণে তাদেরকে তুষ্ট করার জন্য শুরু হয়েছিল অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড আর তখনই সূচনা হয় কুসংস্কার নামক অভিশপ্ত লোকাচারটির। বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিল মানুষের আগুন জ্বালানোর মধ্য দিয়ে। মানুষ তখন থেকেই প্রয়োজনের তাগিদে নতুন নতুন ব্যাবহারিক বস্তু আবিষ্কার করতে শিখল। ক্রমে ক্রমে গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হতে থাকে। এরপর থেকেই মানুষ নিজেদেরকে বাঁচানোর উপায় উদ্ভাবন করতে থাকে, যা বিজ্ঞানের জয়যাত্রার নিদর্শন।
কুসংস্কারের পিছনে স্বার্থান্বেষী মানুষের ভূমিকা – সংস্কারের নাম করে ধর্মের নামাবলি গায়ে চাপিয়ে কতিপয় সমাজপতি কুসংস্কারগুলিকে সমাজে গেঁথে রেখেছে, যা থেকে বেরোনো খুবই কঠিন কাজ। ভণ্ড ব্যক্তিরা ধর্মের নাম করে গঙ্গাজলে সন্তান বিসর্জন, সতীদাহপ্রথা, দেবদেবীর স্বপ্নাদেশ, তাবিজকবচের মতো বহু কিছু পালনে বাধ্য করে সমাজের সহজসরল মানুষদের। একারণেই মানবজাতির অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় –
“যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”
কুসংস্কারের প্রতিবিধান – কুসংস্কারের হাত থেকে সমাজসভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে দরকার প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ও বিজ্ঞানচেতনার বিস্তার। বিজ্ঞানই পারে কুসংস্কারকে চিরতরে বিনাশ করতে। আর যেখানে নিরক্ষরতা সেখানেই ধর্মান্ধতা ও অন্ধবিশ্বাসের রাজত্ব। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যদি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদকে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় তাহলেই ঘুচে যাবে মানুষের মনের কালো অন্ধকার। আর এসবের জন্য চাই সমাজের সকল মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। যুবসমাজ বিশেষ করে ছাত্রসমাজ যদি এগিয়ে আসে তাহলে বিজ্ঞানের সাহায্যে কুসংস্কারকে জয় করা অবশ্যই সম্ভব হবে।
উপসংহার – পৃথিবী ছাড়িয়ে অন্য গ্রহ, উপগ্রহ বা আটলান্টিক মহাসাগরে নিমজ্জিত পাহাড়ে, পর্বতের ওপরে মানুষ বা মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পৌঁছে গেছে। তবু এ কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে, মানুষ এখনও কুসংস্কারের বেড়াজাল পুরোপুরি ছিন্ন করতে পারেনি। তাই আমাদের সমবেত প্রয়াসে কুসংস্কার সমূলে দূর করে সভ্যতা ও সমাজকে আরও সার্থক ও সুন্দর করে তুলতে হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন