একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী - সত্যেন্দ্রনাথ বসু - প্রবন্ধ রচনা

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু

ভূমিকা – জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনায় সমগ্র বাংলা তথা ভারতবর্ষকে বাঙালি বিজ্ঞানীরা আজ জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন দিতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। এই বাঙালি বিজ্ঞানসাধকদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজ্ঞানতপস্বী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবির্ভূত হয়ে এই বাঙালি মনীষী জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন ও কর্মসাধনায় যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন। ভারতের নবজাগরণের স্মরণীয় মুহূর্তে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

জন্ম ও বংশপরিচয় – বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে। পিতা সুরেন্দ্রনাথ চাকুরিজীবী হয়েও দেশপ্রেমী, দরদি ও উদার মনের মানুষ ছিলেন; মাতা আমোদিনী দেবী ছিলেন সংগীতসাধিকা। অসাধারণ মেধাশক্তির অধিকারী, সংগীত, দর্শন ও সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠ অনুরাগী বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ণতার সাধক।

শিক্ষাজীবন – সত্যেন্দ্রনাথ বসু 1909 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান ও 1911 খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এস সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এখানে শিক্ষক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে। 1913 খ্রিস্টাব্দে গণিতে অনার্স-সহ প্রথম স্থান এবং 1915 খ্রিস্টাব্দে মিশ্র গণিতে এমএসসি-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

কর্মজীবন – 1917 খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতোষের আমন্ত্রণে বিজ্ঞানকলেজে পদার্থবিজ্ঞান ও মিশ্র গণিতের ‘লেকচারার’ হিসেবে তিনি যোগ দেন। 1921 খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডার পদে যোগ দেন, মনোনিবেশ করেন গবেষণার কাজে। ‘প্লাঙ্ক সূত্র ও আলোক তত্ত্বের কোয়ান্টাম প্রকল্প’ রচনা করে পাঠান বিলাতের ‘ফিলজফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশের জন্য। প্রবন্ধটির মৌলিকত্বে আইনস্টাইন মুগ্ধ ও বিস্মিত হন এবং লেখাটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে পদার্থবিদ্যার অন্যতম একটি জার্মান পত্রিকায় 1924 খ্রিস্টাব্দে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এরপরই এই প্রবন্ধ ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক হিসেবে বোসের নাম ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

সম্মান ও সংবর্ধনা – আইনস্টাইন-সহ বহু শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানীর মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যতম। জার্মানি ও ফ্রান্সের বিজ্ঞানীর সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে। 1929 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে তিনি পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। 1945 খ্রিস্টাব্দে খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময় ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধি এবং 1957-1958 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। 1959 থেকে আমৃত্যু তিনি ‘জাতীয় অধ্যাপক’ রূপে স্বীকৃতি পান। তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন 1958 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

88 বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তরুণ বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে তত্ত্ব কল্পনা করে গবেষণার বীজ বুনেছিলেন, সার্ন-এ আবিষ্কৃত কণাটি আজও সেই গণনার নীতি মেনে চলে। একারণেই হিগস কণাটি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে ‘বসু কণা’ বা ‘বোসন’ নামে পদার্থবিজ্ঞানে বিগত 45 বছর ধরে পরিচিত।

প্রতিভার বৈচিত্র্য – সত্যেন্দ্রনাথ জৈব রসায়ন ও আয়ুর্বেদ গবেষণায় আগ্রহী ছিলেন। বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সাহিত্যচর্চাতেও তিনি মনোযোগী ছিলেন। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার উদ্যোগ নিয়ে তিনি স্মরণীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। 1982 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পাট সংস্থার কৃষিগবেষণা উপসমিতিতে তিনি সদস্যরূপে মনোনীত হন। 1948 খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। তাঁর ‘বিজ্ঞানের সংকট’ গ্রন্থটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থখানি সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন – “a man of genius with a taste for literature and who is a scientist as well.” 1965 খ্রিস্টাব্দে ভাষাচর্চার অবদানস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করেন। 1974 খ্রিস্টাব্দের 4 ফেব্রুয়ারি এই মহাজীবনের মহাপ্রয়াণ ঘটে।

উপসংহার – বিশ্ববরেণ্য হয়েও তিনি ছিলেন একান্তভাবেই বাঙালি। তিনি ছিলেন হৃদয়বান, নিরহংকারি, ঋষিতুল্য মানুষ ও ছাত্রবৎসল শিক্ষক। সারল্য ও মমত্ববোধ ছিল তাঁর জন্মগত। বাংলার জল, মাটি, সংস্কৃতি, ভাষা ছিল তাঁর একান্ত প্রাণের সামগ্রী। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। এ প্রসঙ্গে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য হল – “যারা বলেন যে, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয়তো বিজ্ঞান জানেন না।”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বইমেলা - প্রবন্ধ রচনা

বইমেলা – প্রবন্ধ রচনা

পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা - প্রবন্ধ রচনা

পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা – প্রবন্ধ রচনা

বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব - প্রবন্ধ রচনা

বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বইমেলা – প্রবন্ধ রচনা

পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা – প্রবন্ধ রচনা

বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব – প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় বই – প্রবন্ধ রচনা

বাংলার মেলা – প্রবন্ধ রচনা