আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বইমেলা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বইমেলা
ভূমিকা – বর্তমান যান্ত্রিক জীবনের কর্মব্যস্ততা আর প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে দিশাহারা মানুষ মাঝেমধ্যে ক্লান্তি দূরীকরণের জন্য বিনোদন চায়। বিনোদনের মাঝে উপরি পাওনা স্বরূপ যদি জ্ঞানসংগ্রহ করা যায় তাতে মন্দ কী। আর এই দুটিকে একসঙ্গে পাওয়া যায় বইমেলায়, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার জ্ঞানরাজি সংগৃহীত হয়। বর্তমান যুগে কৃষিমেলা, শিল্পমেলা, বাণিজ্যমেলার মতো বইমেলাও মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
বইমেলার স্বরূপ – সহস্রাধিক বছর ধরে মানুষ বিশেষ বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করে আসছে। কোনো ঠাকুরদেবতা, পিরবাবা কিংবা বিশেষ কোনো মাসকে উপলক্ষ্য করে মেলা বসে। যেমন – রথের মেলা, বৈশাখী মেলা, গাজনের মেলা, চৈত্রমেলা ইত্যাদি নানা মেলায় মানুষ সমবেত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। বইমেলাও এইরকম একটি মেলা, যেখানে কেবল তাৎক্ষণিক আনন্দ নয়, সেই আনন্দকে ব্যাগে করে বাড়িতেও বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। বইমেলায় বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন দেশের প্রকাশকগণ তাঁদের মূল্যবান পুথি বিক্রয়ের জন্য উপস্থিত হন। নিজস্ব স্টল তৈরি করে তাঁরা তাঁদের প্রকাশনার বইগুলি জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
কলকাতার বইমেলা – ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’ -এর উদ্যোগে 1965 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রসদনের বিপরীত দিকের মাঠে প্রথম কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই যাত্রা শুরু, তারপর বইমেলা স্থানান্তরিত হয়ে আসে আউট্রাম রোডের কাছে ময়দানে। সেই জায়গাও বদলে গিয়ে মিলনমেলাপ্রাঙ্গণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে 2018 সাল থেকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে করুণাময়ী বাস টার্মিনাস সংলগ্ন প্রাঙ্গণে। প্রতিবছর শীতকালে এই মেলা হয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, বাংলাদেশ, চিলি, সুইডেন, নেপাল ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকাশকগণ কলকাতার বইমেলায় বই বিক্রির উদ্দেশে আসেন। বই কেনার পাশাপাশি মেলার আনন্দও মানুষ উপভোগ করেন। প্রতি বছর মেলায় কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। উপচে পড়া ভিড় দেখে মনে হয় “ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটো সে তরী।”
রাজ্যের অন্যান্য স্থানে বইমেলা – রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দূরদূরান্তের সকল মানুষ কলকাতা বইমেলায় অনেক সময় আসতে পারেন না। তাঁদের কথা ভেবে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলায় বইমেলা বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বইপ্রেমী মানুষ সেই সকল মেলা থেকে বই সংগ্রহ করেন।
বইমেলার প্রয়োজনীয়তা – কলকাতার কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে ছুটির দিন ব্যতীত প্রায় প্রতিদিন বই কিনতে পাওয়া গেলেও সবসময় চাহিদামতো বই সেখানে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বইমেলাকে কেন্দ্র করে কিছু নতুন নতুন সাহিত্যিক নানা বই প্রকাশ করেন, অনেক দুষ্প্রাপ্য পুস্তকও বইমেলায় পাওয়া যায়। তা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকাশকগণ যেসকল পুস্তক নিয়ে আসেন সেগুলি সবসময় পাওয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া বইমেলা যেমন জ্ঞানের মেলা তেমনি মিলনমেলাও বটে।
বইমেলা সম্প্রসারণে অন্তরায় – রাজ্য সরকার কলকাতার বইমেলার আয়োজনে যতটা আন্তরিক ততটা জেলার বইমেলার ক্ষেত্রে নয়। তাই আপামর শিক্ষিত সমাজ বইমেলার উপযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়। মেলায় শিল্পী ও সাহিত্যিকদের আরও বেশি মাত্রায় উপস্থিতি বইপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে- যা প্রকৃত অর্থে তেমনভাবে চোখে পড়ে না। অনেক সময় বইমেলার উদ্দেশে দ্রুত প্রকাশিত বইগুলির মুদ্রণ এবং কাগজ নিম্নমানের হয়ে থাকে।
উপসংহার – কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বইমেলা তার উপযোগিতা হারায়নি। বর্তমান যান্ত্রিক যুগে মানুষের বই পড়ার প্রবণতা কমে গেলেও ভালো বই মানুষ এখনও পড়ে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে ভালো বই ও উন্নতমানের লেখকের প্রয়োজন, যা পাওয়া যায় বইমেলায়। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং গিল্ডের সদিচ্ছায় বইমেলা আরও জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বইমেলা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন