সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান - প্রবন্ধ রচনা

সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান

ভূমিকা – উনিশ শতকের একজন প্রবাদপ্রতিম পুরুষ হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, পাণ্ডিত্য, দয়াপরায়ণতা এবং তেজস্বিতায় তিনি ছিলেন সমকালীন যুগের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মানবদরদী এই মহান পণ্ডিত দেশের কল্যাণমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। বাংলা সাধুগদ্যের প্রকরণ নির্মাণের জন্য তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

রচিত গ্রন্থসমূহ – বিদ্যাসাগর বাংলা সাহিত্যে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন –

  1. অনুবাদমূলক রচনা – ‘বাসুদেব চরিত’, ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘বাংলার ইতিহাস’, ‘জীবনচরিত’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ ইত্যাদি।
  2. পাঠ্যপুস্তক জাতীয় রচনা – ‘বোধোদয়’, ‘কথামালা’, ‘আখ্যানমঞ্জরী’।
  3. সমাজসংস্কারমূলক রচনা – ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার’।
  4. ব্যঙ্গমূলক রচনা – ‘অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল’, ‘ব্রজবিলাস’, ‘রত্নপরীক্ষা’।

লেখনী প্রতিভার স্বরূপ – অনুবাদমূলক গ্রন্থগুলিতে বিদ্যাসাগরের মৌলিক সৃজনশীল ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অলৌকিকতা ও আদিরসকে সংযত করেছেন। বিদ্যাসাগরের পাঠ্যপুস্তকমূলক রচনায় তাঁর শিশুমনস্তত্ত্ব ও পরিবেশসচেতনতা, বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও রসচেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজসংস্কারমূলক প্রবন্ধে পাণ্ডিত্য, যুক্তি ও তর্কের গাম্ভীর্য ছাড়াও সমস্ত নারীজাতির প্রতি তাঁর দরদ ও সহানুভূতির পরিচয় পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগরের প্রধান কৃতিত্ব হল তিনি বাংলা গদ্যকে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও লালিত্য দান করেছেন। বাক্যে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন প্রভৃতি প্রয়োগ করে বাংলা গদ্যকে সর্বজনীন ও অর্থপূর্ণ করে তোলার অপরিসীম কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বিদ্যাসাগর নিজের নাম গোপন করে রসিকতাপূর্ণ যে প্রহসনমূলক ব্যঙ্গরচনাগুলি লিখেছেন তা অতুলনীয়। এই রচনাগুলিতে ধরা পড়েছে সমাজের তথাকথিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মূঢ়তা, ত্রুটিবিচ্যুতি, অজ্ঞতা-অসংগতি, সংস্কারাচ্ছন্নতা ও নীচতা, লোভ ও স্বার্থপরতা।

উপসংহার – বিদ্যাসাগরের ভাষা ছিল সংস্কৃতনির্ভর। তাঁর ভাষা মাঝে মাঝে দুর্বোধ্য মনে হলেও গ্রহণীয় ছিল। বাংলা সাধুগদ্যের বীজটি অঙ্কুরিত হয়েছিল রামমোহনের হাতে কিন্তু বিদ্যাসাগর সেই অঙ্কুরিত গাছকে লালনপালন করে মহিরুহে পরিণত করেছিলেন। তাই তাঁকে প্রকৃত ‘বাংলা গদ্যের জনক’ বলা হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন – “বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী। তৎপূর্বে বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূত্রপাত হয়েছিল কিন্তু তিনিই প্রথম কলানৈপুণ্যের অবতারণা করেন।”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সমাজজীবনে চলচ্চিত্র - প্রবন্ধ রচনা

সমাজজীবনে চলচ্চিত্র – প্রবন্ধ রচনা

চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা - প্রবন্ধ রচনা

চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

কমনওয়েলথ গেমস 2022 - প্রবন্ধ রচনা

কমনওয়েলথ গেমস 2022 – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সমাজজীবনে চলচ্চিত্র – প্রবন্ধ রচনা

চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

কমনওয়েলথ গেমস 2022 – প্রবন্ধ রচনা

বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবল – প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবন ও খেলাধুলা – প্রবন্ধ রচনা