আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
ভূমিকা – ভারতবর্ষ যাঁকে ‘ভারতের নাইটিংগল’, ‘ক্যুইন অফ মেলডি’ বা ‘ভয়েস অফ দ্য মিলেনিয়াম’ ইত্যাদি অভিধায় এক চিরস্থায়ী শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অভিষিক্ত করেছে, তিনি এক ও অনন্য লতা মঙ্গেশকর। তাঁর গানের জাদুতে তিনি কেবল ভারতবাসীকেই নয় মুগ্ধ করেছেনে সমগ্র উপমহাদেশ তথা বিশ্বের সংগীতপ্রিয় মানুষকে।
জন্ম ও পরিচয় – দীননাথ মঙ্গেশকর ও তাঁর পত্নী শেবন্তির প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম হয় 28 সেপ্টেম্বর, 1929 তৎকালীন ইন্দোর প্রদেশে, এখন যা মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত। শিশু কন্যাটির নাম রাখা হয় হেমা মঙ্গেশকর। পরে তারই নাম হয় লতা মঙ্গেশকর। বাবা দীননাথ ছিলেন বিখ্যাত মারাঠি ও কোঙ্কণি সংগীতজ্ঞ ও মঞ্চাভিনেতা। তিনিই ছিলেন লতার সংগীতের প্রথম গুরু। লতার তিন বোন-মীনা, আশা ও উষা এবং এক ভাই হৃদয়নাথ-সকলেই সুদক্ষ গায়ক ও সংগীতজ্ঞ। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লতা তাঁর বাবার গীতিনাট্যে অভিনয় শুরু করেন। তেরো বছর বয়সে লতা বাবাকে হারান। সেই বয়স থেকেই সদ্যকিশোরী লতা পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় প্রায় সাত দশকব্যাপী এক অভাবনীয় স্বর্ণময় কর্মজীবন।
কর্মজীবন – 1942 সালে বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক বন্ধু ও ‘নবযুগ চিত্রপট মুভি কোম্পানি’-র মালিক বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি লতাকে গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে সাহায্য করেন। 1948 সালে বিনায়ক দামোদরের মৃত্যুর পর সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দর লতা মঙ্গেশকরকে প্রথম বড়োসড়ো সুযোগ দেন ‘মজবুর’ (1948) ছবিতে। সেই ছবির ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কহি কা না ছোড়া’ লতার প্রথম সমাদৃত গান। 1949 সালে ‘মহল’ ছবির ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটির তুমুল জনপ্রিয়তা লতাকে ‘প্লেব্যাক’ গায়িকা হিসেবে অবিসংবাদিত স্বীকৃতি দেয়। তিনি একদিকে যেমন নৌশাদের সুরে গেয়েছেন ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া’ বা ‘বিস সাল বাদ’ ছবিতে হেমন্ত কুমারের সুরে ‘কহি দীপ জ্বলে কহি দিল’, অন্যদিকে গেয়েছেন ‘আল্লা তেরো নাম’ বা ‘প্রভু তেরো নাম’ -এর মতো গান। 1963 সালের 27 জানুয়ারি ভারত-চিন যুদ্ধের পটভূমিতে দেশাত্মবোধক গান ‘অ্যায় মেরে বতন কে লোগো’ গেয়ে লতা মঙ্গেশকর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চোখে জল এনেছিলেন। নৌশাদ, খৈয়াম, শচিন দেববর্মন, হেমন্ত কুমার, শংকর জয়কিষন, সলিল চৌধুরী প্রমুখ প্রবীণ সুরকারদের সুরে অসামান্য সব গান গেয়ে সংগীতজগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। তবে তাঁর সবথেকে বেশিসংখ্যক জনপ্রিয় গানের সুরকার ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল এবং যে সুরকারের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের জোটবন্ধন সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়, তিনি মদন মোহন। পরবর্তী প্রজন্মের সংগীত পরিচালকদের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর কাজ করেছেন তাঁরা হলেন রাহুল দেববর্মণ, রাজেশ রোশন, অনু মালিক, আনন্দ-মিলিন্দ, শিব-হরি, নদীম-শ্রাবন, যতিন-ললিত, এ আর রহমান প্রমুখ।
বাংলা গানের জগতে লতা মঙ্গেশকরের আবির্ভাব 1956 সালে। প্রথম গান সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’। ভূপেন হাজারিকা, সুধীন দাশগুপ্ত, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেক সংগীত পরিচালকের সুরে বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গান মিলিয়ে প্রায় 200টি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর, যার মধ্যে রয়েছে ‘যারে উড়ে যারে পাখি’, ‘না যেওনা’, ‘ওগো আর কিছুতো নয়’, ‘সাত ভাই চম্পা’ প্রভৃতি কালজয়ী গান।
মাতৃভাষা মারাঠি অথচ হিন্দি ও বাংলা-সহ তিনি তিরিশটির বেশি ভাষায় গান গেয়েছেন- যার মধ্যে ইংরেজি, রাশিয়ান, ওলন্দাজ, এমনকি সোয়াহিলিও রয়েছে। সবমিলিয়ে তিনি গেয়েছেন প্রায় – 30,000 গান।
পুরস্কার ও সম্মান – সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে লতা মঙ্গেশকর সংগীতপ্রেমী মানুষের অকুণ্ঠ সমাদর, ভালোবাসা ছাড়াও পেয়েছেন বহু পুরস্কার। তিনি ‘পদ্মভূষণ’ (1969), ‘পদ্মবিভূষণ’ (1999), ‘ভারতরত্ন’ (2001), ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ (1989), একাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-সহ আরও বহু খেতাব অর্জন করেন। 2009 সালে লাভ করেন ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজিয়ন অব অনর’। 2012 সালে ‘আউটলুক ইন্ডিয়া’-র ‘দ্য গ্রেটেস্ট ইন্ডিয়ান’ দের তালিকায় তিনি দশম স্থান অধিকার করেন।
উপসংহার – দিলীপ কুমার বলেছিলেন, লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠস্বর ঈশ্বরের চমৎকার! গায়িকা নিজেই একবার বলেছিলেন, তাঁর গানের 75% সহজাত প্রতিভা, বাকিটুকু সাধনা। বিরল প্রতিভাময়ী মহান গায়িকা কোভিড সংক্রমণের ফলে ও বয়সজনিত রোগব্যাধির কারণে 92 বছর বয়সে 2022 সালের 6 ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন