আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার কুটিরশিল্প‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার কুটিরশিল্প
ভূমিকা – সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই বঙ্গে কৃষিকাজের সমান্তরালে সমৃদ্ধ কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য বিরাজমান। নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যই হোক কিংবা শৌখিন বস্তু, বাংলার কুটিরশিল্পের সেই বৈচিত্র্যময় পসরা সমাদৃত হত প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বাজারে। এই Cottage Industry-র সঙ্গে আজও জড়িয়ে আছে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা।
বাংলার বৈচিত্র্যময় কুটিরশিল্প – বাংলার চিরাচরিত অগণ্য অনন্য কুটিরশিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির মৃৎশিল্প, খাগড়া-বহরমপুর-নবদ্বীপের কাঁসাশিল্প, বীরভূমের বাটিক, সূচি ও কাঁথাশিল্প, বাঁকুড়ার টেরাকোটাশিল্প, পুরুলিয়ার পট ও মুখোশ শিল্প, শান্তিপুর-ফুলিয়া-ধনেখালি-সমুদ্রগড়ের তাঁতশিল্প, মন্দির বাজারের শোলাশিল্প, অলংকারশিল্প, গুড়শিল্প ইত্যাদি।
কুটিরশিল্পের ইতিহাস – বহুশতাব্দী-প্রাচীন বাংলার কুটিরশিল্পের ইতিহাসপরিক্রমায় উঠে আসে তার স্বর্ণালি অধ্যায় ও পাশাপাশি বিপর্যয়ের করুণ কাহিনি। অতীতের স্বর্ণযুগে বঙ্গের কুটিরশিল্পের সৌন্দর্য, নৈপুণ্য ও মৌলিকতার জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল। সপ্তদশ শতকে বাংলার বস্ত্র ও রেশমশিল্পের চাহিদা ছিল গগনচুম্বী। ‘রবিনসন ক্রুশো’র স্রষ্টা ড্যানিয়েল ডেফোর উক্তি, ‘ইংল্যান্ডের ঘরে ঘরে, বসবার ঘরে, শোবার ঘরে সর্বত্রই ভারতীয় বস্ত্র ঢুকে পড়েছে।” এই বস্ত্রের মধ্যে আছে বাংলার তন্তুজও।
কুটিরশিল্পের উজ্জ্বল অধ্যায়কে কালিমালিপ্ত করে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা। সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারের শিল্পবিপ্লবজাত সস্তা অথচ উন্নতমানের পণ্যে ছেয়ে যায় বাংলাসহ ভারতের বাজার। যন্ত্রশিল্পের সাথে কুটিরশিল্পের অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর সঙ্গে ব্রিটিশদের অবাধ বাণিজ্যনীতি, দেশীয় রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পক্ষপাতমূলক শিল্পসংরক্ষণনীতি হারিয়ে দেয় গ্রামীণ কুটিরশিল্পকে। বস্ত্রশিল্পের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুটিরশিল্পের অন্যান্য শাখাগুলি।
স্বাধীনতাপরবর্তী কুটিরশিল্প উন্নয়নের উদ্যোগসমূহ – এরপর আসে বহুপ্রার্থিত স্বাধীনতা। স্বাধীন ভারত সরকার বৃহৎশিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উন্নয়নে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। 1955 খ্রিস্টাব্দে গঠিত ‘হার্ভে কমিশন’ এব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। বিভিন্ন সময়ে গঠিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলি কুটিরশিল্পের উন্নয়নে অন্যান্য রাজ্যের ন্যায় বাংলাতেও অর্থবরাদ্দ, সুলভ ঋণদান, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, রিবেটপ্রদান, বিপণন ক্ষেত্রের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাঁতশিল্প, খাদি-গ্রামোদ্যোগশিল্প, রেশমশিল্প-বোর্ডগুলি সমবায় আন্দোলন দ্বারা বিশেষ উপকৃত।
কুটিরশিল্পের অপরিহার্যতার কারণ – বর্তমানে বাংলার আর্থিক বুনিয়াদকে দৃঢ় করতে কুটিরশিল্পের উন্নয়ন অবশ্য কর্তব্য। কারণ –
- গ্রামবাংলার কৃষকেরা চাষের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বছরের অবসর সময়কে কুটিরশিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে কর্মমুখী করে তুলতে পারবে। তাদের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন ঘটবে।
- পরিবারের মহিলা ও বৃদ্ধরাও ঘরে বসে উপার্জন করতে পারবে।
- কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হবে।
কুটিরশিল্পের অনুন্নয়নের কারণ – বাংলার কুটিরশিল্পের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে উঠে আসে কয়েকটি তথ্য –
- শিল্পীদের পুঁজির অভাব,
- বাধ্য হয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণগ্রহণ,
- আধুনিক যন্ত্রব্যবহারের অজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব,
- উপযুক্ত বিপণন কেন্দ্রের স্বল্পতা,
- শিল্পীদের শিক্ষার অভাব।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগসমূহ – রাজ্য সরকার বস্ত্র ও চর্মশিল্পের ন্যায় কুটিরশিল্প বিপণনের জন্য মেলার আয়োজন করছে ও প্রায় বিনামূল্যেই স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণে স্টল ভাড়া দিচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুচারু শৈল্পিক ভাবনাকে জনতার দরবারে তুলে ধরার আয়োজন করছে।
উপসংহার – সরকারি, বেসরকারি সহায়তা ও সচেতন জনগণের উদ্যোগেই দেশীয় কুটিরশিল্প দেশ-বিদেশের হারানো বাজার আবার অধিকার করতে পারবে। চিন, জাপান প্রভৃতি দেশের মডেলে যদি কুটিরশিল্পকে কৃষিকাজ ও বৃহৎ শিল্পের সহযোগীরূপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে কুটিরশিল্প নবজীবন লাভ করবে এবং পুনরায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার কুটিরশিল্প‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন