আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার সংস্কৃতি‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার সংস্কৃতি
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
-দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”
ভূমিকা – সংস্কৃতি বা কালচার প্রকৃত অর্থে কোনো জাতির প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরে। সংস্কৃতির মধ্যেই ধরা পড়ে কোনো জাতির সাহিত্য, শিক্ষা, সংগীত, শিল্পকলা, ভাস্কর্য ও নৃত্য প্রভৃতি নানা শিল্পরূপের মেলবন্ধন। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানবজীবনে সংস্কৃতিরও পরিবর্তন ঘটছে। সংস্কৃতি জীবনাচরণের এক বিশেষ অঙ্গ। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন জাতির আচার-আচরণ, চলাফেরা, শিক্ষাদীক্ষার মধ্যে স্বতন্ত্র এক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে, আর এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে তার সংস্কৃতি।
বাঙালির উদ্ভব, তার ভাষা ও সংস্কৃতি – বহু জাতি ও উপজাতির সংমিশ্রণে ভারতীয় জনজীবন গড়ে উঠেছে। আসমুদ্র-হিমাচল নানান সম্প্রদায়ের নানা জাতির লোক বাস করে, তবে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে এক বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে বাংলা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। বাংলা যাদের মাতৃভাষা, তারা সকলেই বাঙালি। এদের শিক্ষাদীক্ষা, আচার-আচরণ, পূজাপার্বণের মধ্যে ধরা পড়ে অন্যান্য রাজ্যের থেকে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নানান সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বাস করে, তাদের সকলকে নিয়েই গড়ে উঠেছে বঙ্গসংস্কৃতি।
বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য – ভারতীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। আর বাঙালি জাতির বয়স প্রায় হাজার বছরের। ভারতের নানান প্রদেশে বাঙালি থাকলেও, পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে বাঙালি। তাদের নিজস্বতা ও স্বাতন্ত্র্যে পৃথিবীর নানান জাতির কাছে আজ বাঙালি সমাদৃত। বঙ্গদেশের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বহুশতাব্দীর জীবনচর্যা, শিল্প-সাহিত্য-ভাষা, শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মীয় চেতনা, দেশাত্মবোধ, আচার-আচরণের বিকাশ ও বিন্যাসের মধ্য দিয়ে। এখানকার নদ-নদীবিধৌত সমভূমি, পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চল, বন-বনানী, সমুদ্র এদেশের সংস্কৃতির নিয়ামক। মধ্যযুগে ভারতীয় সভ্যতার সংস্কৃতির মূলে ছিল গ্রামীণ জীবন। কৃষিকাজ ছিল গ্রামীণ মানুষের প্রধান জীবিকা। গ্রামীণ মানুষের জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, রীতিনীতি ধর্মাচরণ নিয়েই গড়ে ওঠে তার সংস্কৃতি। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে চৈতন্যদেবের আগমনে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম বঙ্গদেশে প্রসারলাভ করে ভক্তি আন্দোলনের মহিমায়। অস্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজের পদসঞ্চার বঙ্গসংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে। কলকাতা শহরের সৃষ্টি ও বিকাশের মধ্য দিয়ে বাঙালির জীবনে নানা ধরনের নতুন সংস্কৃতি ধরা পড়ল।
বাঙালির সংস্কৃতির নিজস্ব ধারা – বাংলা লোকসংস্কৃতির ধারাটি আজও অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। পাঁচালি, ব্রতকথা, পূজাপার্বণ, কীর্তন, কবিগান, যাত্রাপালা আজও গ্রামজীবনে উন্মাদনা আনে। মধ্যযুগে বঙ্গসংস্কৃতির সার্থক প্রকাশ ঘটেছিল মঙ্গলকাব্যে, বৈষ্ণব পদাবলিতে, আরাকান রাজসভার কবিদের মধ্যে এমনকি আগমনী ও বিজয়ার গানে। ইংরেজদের আগমনে ইউরোপীয় সাহিত্য বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। এ ছাড়া রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ প্রমুখ বাঙালিরা বাঙালি জাতির সংস্কৃতিকে বিশ্বসংস্কৃতির ঐতিহ্যের সমতুল্য করে তুলেছিলেন।
উপসংহার – শহুরে সভ্যতার দাপটে গ্রাম্য সংস্কৃতি আজ কিছুটা বিপন্ন। সংস্কৃতির স্বাভাবিক উপকরণসমূহ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে সংস্কৃতি কখনও হারিয়ে যায় না, কালের সঙ্গে তারও পরিবর্তন ঘটে। বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে আজ সেই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। জাতি বেঁচে থাকলে তার সভ্যতা-সংস্কৃতি বেঁচে থাকবেই। বাঙালি জাতির সংস্কৃতিও চির অক্ষুণ্ণ থাকবে এই আমাদের আশা।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার সংস্কৃতি‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন