আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রিয় সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

প্রিয় সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব
ভূমিকা – শুধুমাত্র লেখক হিসেবে নন, বাংলা সাহিত্যকে নানাদিক থেকে উপকৃত করেছেন এমন বর্ণময় চরিত্রের মানুষই আমার কাছে প্রিয়তর। বহুমুখী প্রতিভার ঝলকে বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির জগৎকে যিনি আলোকময় করে তুলতে পারেন তিনিই একমুহূর্তে আকর্ষণ করে নিতে পারেন আমাদের মতো শিশু-কিশোর মনকে- তিনি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 23 মে 1863 খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম, আর মৃত্যু 20 ডিসেম্বর 1915 খ্রিস্টাব্দে।
পারিবারিক ইতিহাস – শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক, চিত্রশিল্পী, অলংকরণশিল্পী, সুরকার, বেহালাবাদক, মুদ্রণশিল্প বিশেষজ্ঞ-এসবই উপেন্দ্রকিশোরের নামের আগে যথাযোগ্য শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হয়। এই প্রতিভাধর মানুষটির জন্ম অবিভক্ত বাংলাদেশের মসূয়া গ্রামে, বিখ্যাত রায় পরিবারে। পিতা কালীনাথ রায়, মাতা জয়তারা। পাঁচ ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মধ্যম। পিতৃদত্ত নাম ছিল কামদারঞ্জন। তাঁর চারবছর বয়সে জ্ঞাতিকাকা জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন। তিনিই নামকরণ করেন উপেন্দ্রকিশোর। ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে এনট্রান্স পাস করে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন তিনি। পরে বি এ পাশ করেন 1884 খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউট থেকে। তাঁর বিয়ে হয় ব্রাহ্মনেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা বিধুমুখী দেবীর সঙ্গে। সুখলতা, সুকুমার, পুণ্যলতা, সুবিনয় ও শান্তিলতা – এই পাঁচ পুত্র-কন্যাদের নিয়ে তাঁর সংসার সুখময় হয়ে ওঠে। পরবর্তী বাংলা শিশুসাহিত্যে এঁদের অবদানে রায়চৌধুরী পরিবারের একটি ধারা তৈরি হয়।
সাহিত্যিক কৃতিত্ব – উপেন্দ্রকিশোরের সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ মূলত শিশুসাহিত্যকে কেন্দ্র করে। 1883 খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি কলেজ-ছাত্র তখনই শিশুদের পত্রিকা ‘সখা’-য় তাঁর প্রথম রচনা প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে সখা ও সাথী, মুকুল, বালক প্রভৃতি পত্রিকাতেও। প্রথমদিকের প্রকাশিত লেখার অনেকগুলিই ছিল কিশোরদের উপযোগী জীববিজ্ঞান বিষয়ক রচনা। পরে তাঁর চিত্র অলংকরণযুক্ত গল্প প্রকাশিত হতে শুরু করে।
সম্পাদকের ভূমিকা – 1895 খ্রিস্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘সিটি বুক সোসাইটি’ থেকে তাঁর প্রথম বই ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রকাশিত হয়। কিন্তু ছাপা নিয়ে অতৃপ্ত উপেন্দ্রকিশোর ওই বছরই প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজের মুদ্রণ সংস্থা ‘ইউ রয় অ্যান্ড সন্স’। এরপর সেখান থেকেই তিনি প্রকাশ করলেন তাঁর অবিস্মরণীয় বইগুলি – ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘সেকালের কথা’, ‘টুনটুনির বই’। ছড়া, রূপকথা, লোককথা, পুরাণ, ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গল্প, কল্পকাহিনি-শিশু সাহিত্যের সবদিকেই তাঁর ছিল অবাধ সাবলীল বিচরণ। ভারতীয় মহাকাব্যের জটিল দীর্ঘ কাহিনিকে তিনি যেভাবে ছোটোদের মন ও বুদ্ধির পক্ষে বোধগম্য ও আনন্দজনক করে পরিবেশন করেছেন তা অতুলনীয়। তাঁর ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘বোকা জোলা’, ‘ঘ্যাঁঘাসুর’ -এর মতো চরিত্রগুলি আজও সমান চিত্তাকর্ষক-শুধু ছোটোদের নয়, বড়োদেরও।
1913 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ করলেন সচিত্র মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’। গল্প-কবিতা-গান-জীবনী-ভ্রমণকাহিনি, ভূগোল-ইতিহাস-বিজ্ঞান, ধাঁধা-বিচিত্র বিষয়বস্তুর পরিবেশন, সঙ্গে নতুন ধরনের ইলাস্ট্রেশান এবং মুদ্রণের পারিপাট্য দিয়ে উপেন্দ্রকিশোর শিশু-কিশোর সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনাতেও নতুন ধারার সৃষ্টি করলেন। হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে তাঁর পরীক্ষানিরীক্ষায় উপকৃত বাংলা সাহিত্যের অলংকরণ ও মুদ্রণ শিল্প।
উপসংহার – এই জনপ্রিয় সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে ধারার সৃষ্টি করে গেলেন, তাঁর পুত্রকন্যারা, বিশেষত সুকুমার রায় তাকে একটি তুঙ্গে স্থাপন করেছিলেন। বাংলা শিল্প-সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, রায়চৌধুরী পরিবারের অবদান বহুবিধ, বহুমাত্রার-যার পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘প্রিয় সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন