আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার উৎসব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার উৎসব
ভূমিকা – উৎসব মানুষের মিলন ঘটায়। তাকে একাকিত্ব থেকে, গতানুগতিক জীবনের একঘেয়েমি ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয়। উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষ বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রবেশ করে আনন্দের স্পর্শে নতুন প্রাণশক্তি পায়।
উৎসবের বৈচিত্র্য – বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। তার বারো মাসে তেরো পার্বণ। শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, বৈচিত্র্যেও এইসব উৎসব কম নয়। ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে ঋতু উৎসব, জাতীয় উৎসবও বাঙালির কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস এই বাংলায়। ধর্মীয় উৎসবও তাই বিচিত্র। হিন্দুদের নববর্ষের শুরু সিদ্ধিদাতা গণেশের পুজো দিয়ে। তারপর দশহরা-রথযাত্রা-মনসা-বিশ্বকর্মা পুজোর পর আসে দুর্গোৎসব। বাঙালি হিন্দুর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবে অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও এমনভাবে যোগ দেন যে এটি কেবলমাত্র দুর্গাপুজো থাকে না, শারদীয়া উৎসব হয়ে ওঠে সব ধর্মের, জাতির, বর্ণের মানুষের কাছেই। দুর্গাপুজোর বিশ্বজনীন ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিতেই 2022 -এ এই উৎসব পেল ইউনেসকো হেরিটেজ সম্মান। এরপর আসে একে একে লক্ষ্মী-কালী-কার্তিক-জগদ্ধাত্রী-সরস্বতী-অন্নপূর্ণা পুজো। এইসব পুজো শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বহুজনের, বিশেষ করে ক্লাবগুলির চাঁদা তুলে পুজো করার মধ্য দিয়ে এইসব উৎসবে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষই অংশ নিতে পারেন। বাঙালি মুসলমান সমাজ মেতে ওঠেন মহরম, ইদুজ্জোহা, ঈদ-উল-ফিতর উৎসবে। বৌদ্ধদের আছে বুদ্ধপূর্ণিমা, জৈনদের পরেশনাথ। খ্রিস্টানদের জন্য বড়োদিন, ইস্টার স্যাটারডে, গুড ফ্রাইডে। এগুলি ধর্মীয় উৎসব হলেও কোনো উৎসবেই অন্য কোনো ধর্মের মানুষের উপস্থিতি বারণ তো নয়ই বরং বাঞ্ছিত।
সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব – সামাজিক ও পারিবারিক উৎসবগুলির মধ্যে অন্নপ্রাশন, বিবাহ, উপনয়ন, জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটা, অতিপরিচিত। এই আচার-অনুষ্ঠানগুলি মূলত পরিবারকেন্দ্রিক হলেও বহু মানুষের সমাগমে, আন্তরিক শুভকামনায় এগুলি উৎসব হয়ে ওঠে। হিন্দু মেয়েদের গানে-ছড়ায়-আলপনায় ব্রত উৎসব উদ্যাপিত হয়, যেমন – পুণ্যিপুকুর ব্রত, ইতুপুজো। এগুলি সামাজিক উৎসবের মধ্যে পড়ে। গানে-ছড়ায়-আলপনায় মেয়েদের নিজস্ব উৎসব।
ঋতু উৎসব – বাংলার উৎসবের জগতে ঋতুপরিক্রমার এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বৈশাখে নববর্ষের উৎসব দিয়ে তার শুরু। ধানরোপণ, বৃক্ষরোপণ, বর্ষামঙ্গল, হলকর্ষণ ইত্যাদি বর্ষার উৎসব। শরৎ -এর শারদীয় উৎসবের পর অগ্রহায়ণে নতুন ধানের ও ‘নবান্ন’ উৎসব উদ্যাপিত হয় ঘরে ঘরে। পৌষে পৌষ সংক্রান্তি, পিঠে পার্বণ, ফাল্গুনে বসন্ত-উৎসব। চৈত্রে বর্ষবিদায়ে বাজে গাজনের বাজনা। প্রকৃতির পরিবর্তনকে বাঙালি এভাবেই উৎসবের মধ্যে দিয়ে স্বাগত ও বিদায় জানায়।
জাতীয় উৎসব – প্রভাতফেরি, কুচকাওয়াজ, সভা, পদযাত্রা ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় উৎসবের দিনগুলিকে সমগ্র ভারতের সঙ্গে বাঙালিও উদ্যাপন করে। 15 আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস, 26 জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস-এই দিনগুলিতে জাতীয়তাবোধ ও ঐক্যের নতুন উদ্দীপনা জন্ম নেয়। 25 বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন, 23 জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি গর্ব অনুভব করে বাঙালি হিসেবে, ভারতীয় হিসেবে।
লৌকিক উৎসব – এ ছাড়াও গ্রামবাংলার নানা স্থানীয় লৌকিক উৎসব নানাভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। যেমন – শীতলা পুজো, চড়ক, সত্যনারায়ণ পুজো, বনবিবির পুজো। এসবই বাংলার লোকসাধারণের নিজস্ব উৎসব।
উপসংহার – উৎসবের মূল কথা আনন্দ এবং মিলন। এখন অনেক সময়ই উৎসবে গুরুত্ব পাচ্ছে সাজসজ্জার বহর, বাহ্যাড়ম্বর। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাইরের সমারোহ দরকার ঠিকই, কিন্তু তাতে উৎসবের অন্তরের দিকটি, সবাইকে ভালোবেসে কাছে টানার দিকটি যেন অবহেলিত না হয়, তবেই উৎসব সত্যিকারের উৎসব হয়ে উঠবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার উৎসব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন