আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

কন্যাশ্রী প্রকল্প
নারীশিক্ষার সেকাল-একাল – প্রাচীন ভারতের গার্গী, মৈত্রেয়ী, অপালা, ঘোষার ন্যায় বিদুষী নারীরা সেযুগের সমাজে নারীদের বিদ্যাশিক্ষার প্রসারতা, সমাজে তাদের গুরুত্ব-মর্যাদার কথাই প্রমাণ করেন। কিন্তু তারপর তাঁরা মধ্যযুগের তমসাচ্ছন্ন প্রেক্ষাপটে গৃহের চার দেয়ালের মধ্যে পর্দার আড়ালে বন্দি হয়ে পড়েন, লুপ্ত হয় তাঁদের শিক্ষার অধিকার। তারপর রেনেসাঁর যুগে সমাজে প্রচলিত পর্দাপ্রথা ছিন্ন করে নারীসমাজকে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায় প্রমুখ মনীষীগণ। তাঁদের জীবনভর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজকের সমাজে বহু নারী শিক্ষিতা, স্বাবলম্বী এবং প্রকৃত অর্থেই আধুনিক। গৃহস্থালির দায়িত্ব সামলে কর্মক্ষেত্রেও তারা সমান পারদর্শী। কিন্তু দেশ তো শুধু কিছু মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তকে নিয়ে গঠিত নয়, অগণিত দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারই এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর সমাজের এই অংশে নারীশিক্ষার হাল আজও শোচনীয়। আজও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই বিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়। তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ সংসারের নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের খুঁটিনাটি – নারীশিক্ষার এমন প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও যেসব মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়, তাদের উৎসাহদানের জন্য তাদের বাবা-মা, পরিজন, প্রতিবেশীদের নারীশিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার ‘কন্যাশ্রী’ নামক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
লক্ষ্য – পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী-উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণদপ্তর প্রণীত এই প্রকল্পটির লক্ষ্য ‘বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়’। যথা –
- মেয়েরা যাতে নিয়মিত ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক স্তর অবধি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার চেষ্টা করা।
- দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা যারা অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা।
- বাল্যবিবাহ প্রথাকে সমাজ থেকে দূর করা।
সুযোগসুবিধা – প্রকল্পের লক্ষ্যগুলির সার্থক রূপায়ণের উপযোগী বেশ কিছু সুযোগসুবিধা ছাত্রীদের দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। যথা –
- বার্ষিক বৃত্তি – 13 থেকে 18 বছর পর্যন্ত অবিবাহিতা মেয়েরা নিয়মিত পাঠরত হলে বার্ষিক 1000 টাকা হারে বৃত্তি পাবে।
- এককালীন অনুদান – যে সমস্ত অবিবাহিতা মেয়েদের বয়স 18 থেকে 19 -এর মধ্যে তারা সরকারের থেকে এককালীন 25000 টাকা অনুদান পাবে। (শুধুমাত্র 01/04/1995 -এর পরে যাদের জন্ম তারাই এই সুবিধা পাবে।)
প্রকল্পের যোগ্যতামান – 121কোটির দেশ ভারতের যথার্থ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই যাতে প্রকল্পটির সদ্ব্যবহার হয় তাই এর কিছু যোগ্যতামান নির্ধারিত হয়েছে। যথা –
- বাবা-মা-এর বার্ষিক আয় 1 লক্ষ 20 হাজার টাকার কম হতে হবে।
- যে-কোনো স্বীকৃত বিদ্যালয়, মুক্ত বিদ্যালয় বা সমতুল্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নথিবদ্ধ ও নিয়মিত পাঠরত হতে হবে।
- মেয়েটি ‘জে-জে’ হোমের আবাসিক হলে বা বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়ে থাকলে অথবা ছাত্রী প্রতিবন্ধকতাযুক্ত হলে পারিবারিক আয়ের শর্তটি প্রযোজ্য হবে না।
এই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাবলি ও নির্দিষ্ট ফর্ম পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার সরকারি, মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বি ডি ও, এস ডি ও অফিস ও মেয়র পারিষদের কাছে পাওয়া যাবে। এইরূপ যে-কোনো জটিল শর্ত বিরহিত, সহজ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার সকল নারীর শিক্ষা সুনিশ্চিতকরণে দেশের অন্যান্য রাজ্য তথা পৃথিবীর অন্যান্য – দেশের তুলনায় অধিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আজ প্রমাণিত হয়েছে, “What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.” তাই এই প্রকল্পটি 2017 সালে UNPSA (United Nations Public Service Award) পেয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মানিত হয়েছে। প্রতি বছর 14 আগস্ট পশ্চিমবঙ্গে ‘কন্যাশ্রী দিবস’ পালিত হয়।
প্রকল্প সম্বন্ধে ভবিষ্যতের আশা – এই সুচিন্তিত প্রকল্প সমাজকে নারীশিক্ষার উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতন করবে। ছাত্রীরাও অপরিণত বয়সে বিবাহের অপচেষ্টা রুখে নিজেদের জীবনগঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবার সাহস পাবে। ‘মাতৃরূপেণ সংস্থিতা’ নারী গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ মুক্ত উদার এক সমাজ। তবেই এদেশের বুকে ‘বিদুষী, মৈত্রেয়ী, খণা, লীলাবতীরা’ আবার জন্ম নেবে। দেশ এগিয়ে চলবে প্রগতির পথে। এমন একদিন আসবে যেদিন দেশের প্রতি প্রান্তের প্রত্যেক ছাত্রী বলে উঠবে – “আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ/মোদের স্বর্গপথের আভাস দেখায় আকাশ ছায়াপথ”। – তাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের এমন সুদূরপ্রসারী গভীর প্রভাব উপলব্ধি করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এই রাজ্য আজ সারা দেশের নারীসমাজকে নতুন ভারতের আত্মশক্তিতে বলীয়ান সমাজগঠনের আহ্বান জানিয়ে বলছে – ‘Study and Smile’.
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন