আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা
ভূমিকা – সৎচরিত্র হল মানবজীবনের প্রধান সম্পদ। অনেকেই বিত্তশালী বা ক্ষমতাবান হন, কিন্তু চরিত্রবান মানুষ সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। মানুষের চরিত্রগঠনের কাজটি শুরু হয় তার শিশুকাল থেকে। খেলাধুলা শিশুর স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। চরিত্রগঠনে খেলাধুলার বিশেষ ভূমিকা থাকে।
দেহ-মনের সুষম বিকাশ – খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শরীরচর্চা হয়, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের সঙ্গে মনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাই শারীরিক সক্ষমতা মানুষকে সুস্থ মনের অধিকারী করে তোলে এবং প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়। খেলাধুলার মাধ্যমে শরীর ও মনের সুষম বিকাশ ঘটে। মানসিক সুস্থতাই হল সৎ চরিত্রের ভিত্তি।
শৃঙ্খলা, সহমর্মিতা, সমাজবোধের জাগরণ – শরীর ও মনের সুস্থতার মধ্য দিয়ে শৈশব থেকেই মানুষের চরিত্র গঠিত হতে থাকে। বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে শিশুর চরিত্রে কতকগুলি গুণের সমাবেশ ঘটতে থাকে। নিজে নিজে খেলার মধ্যে শিশু নির্মল আনন্দ লাভ করে, কিন্তু সঙ্গী বা সঙ্গীদের নিয়ে খেলতে খেলতে সে শেখে সহমর্মিতা। দলগত খেলার মধ্য দিয়ে সহখেলোয়াড়দের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই শিক্ষা ভবিষ্যৎজীবনে মানুষের মধ্যে সমাজবোধের জন্ম দেয়, একসঙ্গে মিলেমিশে চলতে শেখায়। বিপক্ষের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করে।
ঐক্য, দৃঢ়তা, সহনশীলতার শিক্ষা – খেলাধুলা জাগায় ঐক্যচেতনা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সহনশীলতা। খেলায় জয়-পরাজয় অবধারিত। পরাজয়কে মেনে নেওয়ার এবং নতুন উদ্যমে পরবর্তী জয়ের জন্য নিজেকে সংশোধিত ও প্রস্তুত করার শিক্ষা দেয় খেলাধুলা। জীবনযুদ্ধে মানুষ যেমন অনেক সাফল্য অর্জন করে তেমনি বহু ব্যর্থতারও সম্মুখীন হয়। ব্যর্থতার গ্লানি যাতে তাকে বিমর্ষ না করে, যাতে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায়, সেই শিক্ষাটিরও বীজ শৈশব-কৈশোরের খেলাধুলার মধ্যে নিহিত থাকে।
সততার শিক্ষা – আলস্য মানুষের বড়ো শত্রু। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আঁতুড়ঘর। তাই শরীরচর্চা, খেলাধুলা বা অন্যান্য সক্রিয়তায় মানুষ নিজেকে ব্যস্ত রাখলে অসৎ চিন্তা ও কাজে মন যায় না। খেলাধুলা মানুষের মনকে সতেজ রাখে এবং সে অন্যায়-অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে।
খেলা যখন জীবিকা – আধুনিক যুগে খেলাধুলা কেবল শখ ও আনন্দের বিষয় নয়। বর্তমানে খেলাধুলা বহু মানুষের জীবিকা অর্জনের ভিত্তি। ক্রীড়াদক্ষতার জন্য কেউ চাকরি পান, কেউ ক্লাব বা দেশের জন্য খেলে অর্থ উপার্জন করেন। কেউ ক্রীড়াসাংবাদিকতার পেশায় নিযুক্ত, আবার কেউ খেলাকেন্দ্রিক অন্যান্য কাজে যুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতাবোধ – একই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে খেলোয়াড়রা পরস্পর ভিনরাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। এর ফলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মনে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে। এই জাতীয়তাবোধের প্রকাশ ঘটে আন্তর্জাতিক খেলাধুলার আসরে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করলে বা সেইসব প্রতিযোগিতার খবরাখবর রাখলে মানুষের মনে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের সঞ্চার হয়।
উপসংহার – জীবনযাপনে বৈচিত্র্য আনে খেলাধুলা। খেলাধুলার প্রকৃত চর্চা মানুষের মনকে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে। মানুষ হয়ে ওঠে দৃঢ়সংকল্প, বলিষ্ঠ এবং আদর্শ চরিত্রের অধিকারী।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন