আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার ক্রীড়াসাহিত্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার ক্রীড়াসাহিত্য
ভূমিকা – বাঙালির ক্রীড়াসাহিত্যের সূচনা ঠিক কবে এবং কীভাবে হয়েছিল সঠিকভাবে বলা যায় না। প্রাচীনকালের সাহিত্যে (এমনকি বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ -এও আমরা দাবাখেলার বর্ণনা পেয়েছি) বিভিন্ন খেলাধুলার বর্ণনা থাকলেও ক্রীড়াসাহিত্যের প্রসার ঘটেনি। হিন্দুমেলায় বাঙালির খেলার বর্ণনা বা সার্কাসে বাঙালির ক্রীড়ার প্রসার আমাদের আকর্ষণ করলেও এ বর্ণনাগুলিও ক্রীড়াসাহিত্য হয়ে ওঠেনি। যেমন – রামায়ণ-মহাভারতে তিরন্দাজি এবং মল্লক্রীড়ার বর্ণনা থাকলেও তারা ক্রীড়াসাহিত্য নয়।
ক্রীড়াসাহিত্যের ধারা – ক্রীড়াসাহিত্য রচনার ধারা বাংলায় দুটি ভাগে প্রচলিত। প্রথমত খেলোয়াড়দের আত্মকথন, দ্বিতীয়ত ক্রীড়াভিত্তিক সাহিত্যরচনা। খেলোয়াড়দের আত্মকথার মধ্যে প্রসিদ্ধ হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাঁদের ‘গোল’, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উইং থেকে গোল’, চুনী গোস্বামীর ‘খেলতে খেলতে’ বাঙালি পাঠকের মনে চিরকালীন সম্পদ হয়ে আছে। গৌতম ভট্টাচার্যের পঙ্কজ রায় থেকে সচিন, সৌরভ-কে নিয়ে রচনা, রূপক সাহা, রূপায়ণ ভট্টাচার্য, সব্যসাচী ভট্টাচার্যদের ক্রীড়া ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক অসামান্য লেখনী বাংলা ক্রীড়াসাহিত্যকে সম্পদশালী করে তুলেছে এবং বর্তমানেও করছে।
রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের খেলা বা তারাশঙ্করের রচনায় লোকক্রীড়ার বর্ণনার পাশাপাশি পাঠক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার কাছে ক্রিকেটকে ঝিঁঝিখেলা হয়ে উঠতে দেখে গোলকিপার প্যালার কচুবনে লুকোনোর স্মৃতিই বা কম কী? রূপদর্শীর ব্রজদার খেলোয়াড়ি মনোবৃত্তিও উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের তারিণী খুড়োর মহারাজা রণজির ব্যাটে ক্রিকেট খেলার অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা বাঙালি ক্রীড়াসাহিত্যে টুকরো টুকরো মণিকণা।
বাংলায় ক্রীড়াসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচয়িতা – বাঙালিকে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াসাহিত্যের আস্বাদন করান মতি নন্দী। সাঁতারু কোচ ক্ষিদার স্বপ্ন এবং হতদরিদ্র এক মেয়ের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনবদ্য কাহিনি ‘কোনি’। এ কাহিনি চলচ্চিত্রেও সাফল্য পেয়েছে। স্ট্রাইকার, স্টপার, ময়দানের অসামান্য চরিত্রায়ণ ‘ননীদা নট আউট’ ইত্যাদি রচনায় মতি নন্দী বাংলা ক্রীড়াসাহিত্যের পাঠককে এক অনাস্বাদিত জগতে নিয়ে যান। ‘ক্রিকেটার কলাবতী’ তাঁর আর-এক অনবদ্য সৃষ্টি। এই কিশোরীর ক্রিকেট-দক্ষতায় মুছে যায় দুই গ্রামের শত্রুতা।
বাংলা ক্রীড়াসাহিত্যের আরও দুই উল্লেখ্য রচয়িতা শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্করীপ্রসাদ বসু। শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ক্রিকেট খেলার আইনকানুন’, ‘ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল’, ‘ক্লাবের নাম মোহনবাগান’ ইত্যাদি রচনা এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘বল পড়ে ব্যাট নড়ে’, ‘ক্রিকেট সুন্দর ক্রিকেট’ ইত্যাদি রচনা খুবই খ্যাতি পায়। দিব্যেন্দু পালিতের ‘ইয়াসিন’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘বক্সার রতন’ বাংলা ক্রীড়াসাহিত্যের দুটি অনবদ্য সৃষ্টি।
উপসংহার – দুঃখের কথা, বাংলা ভাষায় ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়াসাহিত্য রচনার প্রচলন নেই। বর্তমান সময়ে কুন্তল মিত্র, শুভজিৎ গুপ্ত, সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন খেলা নিয়ে গল্প-উপন্যাস লিখলেও তা খুবই বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। বাংলার প্রাণজুড়ে ক্রীড়া, বাঙালিও ক্রীড়াপাগল। তাই আগামীতে বাংলা ক্রীড়াসাহিত্যের প্রসারও নিয়মিত বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হবে এমন স্বপ্ন দেখাই যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার ক্রীড়াসাহিত্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন