আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জন্মশতবর্ষে সত্যজিৎ রায়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

জন্মশতবর্ষে সত্যজিৎ রায়
ভূমিকা – বাংলা সাহিত্য ও শিল্পজগতের একজন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়। তিনি একইসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রশিল্পী, লেখক, সংগীত পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী। বাংলা শিল্প ও সাহিত্যের স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়ের নাম অবিস্মরণীয়।
জন্ম ও বংশ পরিচয় – সত্যজিৎ রায় 1921 সালের 2 মে উত্তর কলকাতার 100 নং গড়পাড় রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। শিল্প ও সাহিত্যে উজ্জ্বল রায় বংশে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও মা সুপ্রভা দেবী। তাঁর পিতামহ বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। এ ছাড়াও শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার, সুখলতা রাও, পুণ্যলতা চক্রবর্তী প্রমুখ সম্পর্কে তাঁর পিসি হন। সত্যজিৎ রায়ের উত্থানের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই বংশধারাও কাজ করেছিল – এই কথা বলা যায়।
শিক্ষাজীবন – সত্যজিৎ রায় 1930 সালে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে ভরতি হন এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন। ছোটোবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে সাহিত্য, সংগীত, অঙ্কন ও চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ ছিল। 1940 সালে তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে অঙ্কনচর্চার জন্য ভরতি হন। তবে হঠাৎই সেখানকার পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে চিত্রনাট্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
প্রথম কর্মজীবন – কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডি জে কেমারে ‘জুনিয়ার ভিজুয়ালাইজার’ হিসেবে যোগদান করেন। তবে তাঁর রক্তের মধ্যে ছিল সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি গভীর টান, সেইসঙ্গে শান্তিনিকেতনে গিয়ে তিনি দু-চোখে ভরে নিয়েছিলেন শিল্পবোধের গভীর স্পর্শ। এই দুইটি বিষয় তাঁকে প্রথম চাকরিতেই আজীবন সন্তুষ্ট থাকতে দেয়নি। তাই এরপরই তিনি সিগনেট প্রেসে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার কাজে যুক্ত হন। আবার 1947 সালের 5 অক্টোবর তিনি ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে সিনেমা পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করে তিনি সন্তুষ্টি লাভ করেন।
চলচ্চিত্র নির্মাণ – সত্যজিৎ রায়ের প্রথম পরিচয়- তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্পর্শে বাংলা চলচ্চিত্র আঞ্চলিকতার গণ্ডি ও দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাকুল তাড়নায় নিজেকে প্রায় নিঃস্ব করে এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি সৃষ্টি করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্ররূপ – যা এক লহমায় ভারতীয় চলচ্চিত্রকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা দেয়। এরপর তাঁর হাত ধরে একে একে আত্মপ্রকাশ করে ‘অপু ট্রিলজি’ (‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’) -এর বাকি দুটি, ‘তিন কন্যা’, ‘চারুলতা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘পরশপাথর’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’ ইত্যাদির মতো বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র। তাই বলা যায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান অসামান্য।
সাহিত্যসাধনা – চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি বহু সাহিত্যও রচনা করেন। 1961 সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যুগ্ম-সম্পাদনায় ‘সন্দেশ’ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হতে থাকে। বলাবাহুল্য, এই পত্রিকায় তাঁর রচিত সাহিত্যগুলি প্রকাশিত হত। তাঁর সাহিত্যসাধনাকে মূলতঃ চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- গোয়েন্দা কাহিনি,
- কল্পবিজ্ঞাননির্ভর শঙ্কুকাহিনি,
- গল্প,
- অনুবাদ।
তাঁর লেখা সাহিত্যগুলি সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ও অলংকারবিহীন হওয়ায় তা আপামর জনসাধারণের প্রিয় হয়ে ওঠে। লিয়রের ছড়া অবলম্বনে তিনি প্রথম রচনা করেন ‘পাপাঙ্গুল’। ‘প্রোফেসর শঙ্কু’, ‘বাদশাহী আংটি’, ‘তারিণী খুড়োর গল্প’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’, ‘মোল্লা নাসিরউদ্দিনের গল্প’ ইত্যাদি তাঁর রচিত বিখ্যাত সাহিত্য।
পুরস্কারপ্রাপ্তি – তিনি আজীবন বহু পুরস্কারে ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। 1967 সালে তিনি ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ গ্রন্থের জন্য ‘অকাদেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (1958), পদ্মবিভূষণ সম্মান (1976), ভারতরত্ন (1922 ) ইত্যাদি পান। 1992 সালে সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘অস্কার’ পুরস্কার পান।
উপসংহার – এই মহান ব্যক্তিত্ব ও শিল্পী 1992 সালের 23 এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। বাংলা সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান সূর্যালোকের মতোই অমোঘ ও অনিবার্য -এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জন্মশতবর্ষে সত্যজিৎ রায়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন