এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – জেলখানার চিঠি – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের পঞ্চবিংশ অধ্যায়জেলখানার চিঠি’-এর ভিত্তিতে ব্যাখ্যামূলক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরের ওপর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ, এই প্রশ্নগুলো প্রায়ই বাংলা পরীক্ষায় বা চাকরির পরীক্ষায় আসতে পারে।

Table of Contents

জেলখানার চিঠি – বাংলা  – অষ্টম শ্রেণি – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নেতাজি ভবিষ্যতের কোন্ কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা-শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?

নেতাজি ভবিষ্যতে কারাসংস্কার করাকে নিজের একটা কর্তব্য বলে মনে করেছেন।

তাঁর এমন কর্তব্য স্থির করার কারণ – অনেকদিন জেলে বাস করার পর কারাশাসনের একটা আমূল সংস্কারের একান্ত প্রয়োজনের দিকে তাঁর চোখ খুলে গিয়েছিল।

কারাশাসনের প্রণালী নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশ-প্রণালীর অনুসরণের পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেট্স-এর মতো উন্নত দেশগুলির ব্যবস্থাই অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেন। কারণ ভারতীয় কারাশাসন প্রণালী অর্থাৎ ব্রিটিশ-প্রণালী একটা খারাপ আদর্শের অনুসরণমাত্র।

সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি। – বক্তা কে? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?

প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটির বক্তা ‘জেলখানার চিঠি’ রচনাটির লেখক স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু।

তাঁর খুশি হয়ে ওঠার কারণ, তাঁর প্রিয় বন্ধু দিলীপ রায় ২৪/৩/২৫ তারিখে তাঁকে যে পত্র প্রেরণ করেছিলেন, তা প্রাপ্তির আনন্দ। তা ছাড়া পত্রপ্রেরণের আশঙ্কা অনুযায়ী এবারের চিঠিটিকে ‘double distillation’ -এর ভিতর দিয়ে আনতে হয়নি।

আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন। – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?

সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর প্রিয় বন্ধু দিলীপ রায়কে পত্রের মধ্যে প্রশ্নে প্রদত্ত কথাটি বলেছেন।

বন্ধুর চিঠি পেয়ে সুভাষচন্দ্র যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলেন। সেই চিঠি তাঁর হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমলভাবে স্পর্শ করেছিল এবং তাঁর চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল – যার উত্তর দেওয়া অত্যন্ত সুকঠিন ছিল তাঁর পক্ষে।

পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যে জন ভুক্তভোগী। – উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাও?

উপরিউক্ত উদ্ধৃতিটির সমার্থক যে বাক্য পত্রমধ্যে রয়েছে, তা হল – “আমার মনে হয় না, আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।”

পত্রমধ্যে খুঁজে পাওয়া বাক্য থেকে লেখক অর্থাৎ সুভাষচন্দ্র বসুর অপরাধীদের প্রতি সহানুভূতির মানসিকতার পরিচয় লক্ষ করা যায়। কারাবাসের সমস্ত আবহাওয়া মানুষকে অনেকাংশে বিকৃত, অমানুষ করে তোলে। অপরাধীদের প্রবৃত্তিগুলি অধিকাংশেই মানসিক ব্যাধি এমন ধারণার প্রয়োজন। বাক্যটি থেকে লেখকের উক্ত মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

Martyrdom শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?

Martyrdom শব্দটির অর্থ হল – শহিদত্ব।

বন্ধু দিলীপ রায় তাঁর চিঠিতে সুভাষচন্দ্রের অকারণ বন্দিত্বকে ‘Martyrdom’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সুভাষচন্দ্র স্বীকার করে নেন তাঁর প্রতি বন্ধুর গভীর অনুভূতি ও প্রাণের মহত্বকে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে বলেন – তাঁর যেটুকু humour এবং proportion জ্ঞান আছে, তাতে নিজেকে Martyr বলে মনে করার মতো স্পর্ধা নেই। যদিও স্পর্ধা বা আত্মম্ভরিতা জিনিসটা তিনি এড়িয়ে চলতেই চান। তাই তাঁর মনে হয়েছে ‘Martyrdom’ জিনিসটা তাঁর কাছে এক মহৎ আদর্শ ছাড়া আর কিছু নয়।

এই ব্যবস্থার যেটি সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন – প্রয়োজনটি কী?

প্রশ্নে প্রদত্ত মন্তব্যটিতে প্রয়োজনটি হচ্ছে – একটা নতুন প্রাণ, একটা নতুন মনোভাব এবং বন্দি অপরাধী বা জেলের আবাসিকদের প্রতি একটা সহানুভূতির মনোভাব। এজন্য অপরাধীদের প্রবৃত্তিগুলিকে ‘মানসিক ব্যাধি’ বলেই ধরতে হবে এবং সেদিক থেকেই তাদের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষেধকমূলক দণ্ডবিধিকে সংস্কারমূলক নতুন দণ্ডবিধিতে উন্নীত করতে হবে।

আমার মনে হয় না, – প্রসঙ্গক্রমে লেখক কী কী বলেছেন?

জেলখানায় বন্দি আবাসিকদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর গভীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে লেখক জানাচ্ছেন – জেলে না এলে তিনিও হয়তো কারাবাসী বা অপরাধীদের সহানুভুতির চোখে নাও দেখতে পারতেন। তাঁর আরও মনে হয়েছে – এ দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদেরও যদি এমনতরো কারাভিজ্ঞতা থাকত তবে শিল্প উপকৃত হত। যেমন কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য উপকৃত হয়েছে।

আমরা সচরাচর তা বুঝতে পারি না – বক্তব্য পরিস্ফুট করো।

জেলখানায় বন্দি থাকাকালে মানুষের মন ধীরে ধীরে মরতে শুরু করে। স্বয়ং লেখক বন্দি থেকে তা অনুভব করেছেন বলে, তাঁর মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে বাইরের কিছু কিছু ব্যাপার জেলজীবনেও টেনে আনা উচিত। এ সমস্ত বিষয় আমাদের জীবনকে সর্বদাই সরস ও সমৃদ্ধ করে তোলে। সেগুলি হল – পিকনিক, বিশ্রম্ভালাপ, সংগীতচর্চা, সাধারণ বক্তৃতা, খোলা স্থানে খেলাধুলা করা, কাব্যসাহিত্যের চর্চা ইত্যাদি।

জেলের মধ্যে বন্ধুর কাছ থেকে বই পেয়ে লেখক কেমন অনুভব করেছিলেন?

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে দেশসেবার অপরাধে অনেকবারই কারাবরণ করতে হয়। বলাবাহুল্য এই অকারণ কারাবরণ থেকে মানসিক মুক্তির পথে বই তাঁর কাছে ছিল একটি উপযুক্ত সঙ্গী। বন্ধু দিলীপ রায় তাঁকে বেশ কিছু বই পাঠিয়েছিলেন। সেগুলি তাঁকে যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছিল। তবে সেগুলির আরও অনেক পাঠক তৈরি হওয়ায় তিনি সেগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি।

এই দৃশ্য তোমাকে প্রতিদিন গভীর ও বিষণ্ণ করে তুলেছে। – প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

বন্ধু দিলীপ রায় তাঁর চিঠিতে মানুষের অকারণ অশ্রু প্রসঙ্গে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তার উত্তরে লেখক জানাচ্ছেন – ‘এই অশ্রু সবটুকুই দুঃখের অশ্রু নয়। তার মধ্যে করুণা ও প্রেমবিন্দু আছে।’ তাঁর ধারণা কোনো সমৃদ্ধতর ও প্রশস্ততর আনন্দস্রোতে পৌঁছোতে হলে এমন ছোটো ছোটো দুঃখের ঢেউ পার হয়ে যেতেই হয়। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, কোনো দুঃখ-যন্ত্রণা উন্নততর কাজ ও উচ্চতর সাফল্যের অনুপ্রেরণা।

জেলখানার আবহাওয়া বন্দি মানুষের উপর কীরকম প্রভাব ফেলে?

জেলখানার অভ্যন্তরের ব্যাপারস্যাপার অনেকটা অস্বাভাবিক। মুক্ত জীবনের মতো ঘটনাপ্রবাহ সেখানে থাকা সম্ভব নয়। কারাশাসন প্রণালীর ত্রুটিবিচ্যুতি তার উপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই জেলখানার সমস্ত আবহাওয়া বা পরিস্থিতি যেন বন্দি মানুষকে বিকৃত অমানুষ করে তোলার উপযোগী। সব জেল প্রসঙ্গেই এমন ধারণা করা যেতে পারে।

অপরাধীদের অধিকাংশেরই কারাবাস কালে নৈতিক উন্নতি হয় না – এ প্রসঙ্গে লেখকের আরও বক্তব্য কী?

কারাবাসকালে অপরাধীদের নৈতিক উন্নতি তো হয়ই না, বরং তারা যেন আরও হীন হয়ে পড়ে। নিজে কারাবাস করে লেখকের মনে হয়েছে কারাশাসনের একটা আমূল সংস্কারসাধন প্রয়োজন। ভবিষ্যতে সুযোগ এলে এ কর্তব্য তিনি সাধন করবেন। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ-প্রণালীর খারাপ আদর্শের অনুসরণ না করে, তিনি আমেরিকার মতো উন্নত ব্যবস্থা অনুসরণকে গুরুত্ব দিতে চান।

সাধারণত একটা দার্শনিক ভাব বন্দিদশায় মানুষের অন্তরে শক্তির সঞ্চার করে। – লেখকের এমন অভিমতের পিছনে নিজস্ব উপলব্ধি কী?

লেখক সুভাষচন্দ্র বসু উচ্চশিক্ষিত, বিদেশ থেকে প্রত্যাগত এবং পরাধীন ভারতের এক উচ্চস্তরীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। দর্শনশাস্ত্র সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব পাঠাভ্যাস ছিল। দেশের কাজে লিপ্ত থাকার অপরাধে অকারণ ও অযৌক্তিকভাবে তিনি বন্দি বলে তাঁর মধ্যে একটা দার্শনিক ভাব কাজ করত। এ ক্ষেত্রে যেন জেলখানাই তাঁর ভাবনালোকের আশ্রয় ছিল। তা ছাড়া তিনি ফিলোজফি বা দর্শন বিষয়ে পড়াশোনাও করেছিলেন অনেক। তিনি বুঝেছিলেন – ‘মানুষ যদি তার নিজের অন্তরে ভেবে দেখবার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায়, বন্দী হলেও তার কষ্ট নেই।’

মহারাষ্ট্রের স্বনামধন্য নেতা লোকমান্য তিলক সম্বন্ধে লেখকের ধারণা কী?

লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন একজন সর্বভারতীয় নেতা ও বিপ্লববাদী। স্বয়ং সুভাষচন্দ্র তাঁকে অন্তর থেকে গভীর মান্যতা দিতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল – লোকমান্য তিলক অন্তরে যত শক্তিমান ছিলেন দেহে তত দৃঢ়তা ছিল না তাঁর। দীর্ঘ কারাবাসকালে গীতার আলোচনা লেখার সময় মনের সুখ তাঁর মানসিক শক্তির পরিচায়ক এবং মান্দালয় জেলে ছ-বছরের বন্দিত্বের ধকল তাঁর দেহ সহ্য করতে পারেনি বলেই সম্ভবত তাঁর অকালমৃত্যু হয়।

লেখক কীভাবে জেলখানার রাজনৈতিক ও সাধারণ বন্দিদের মধ্যে তুলনা করেছেন?

লেখক মনে করেন – নিজের লোক, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব বা সর্বসাধারণের সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা জেলের মধ্যেও মানুষকে অনেকটা সুখী করতে পারে। এভাবেই সাধারণ ও রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে ভাগ্যের একটা তফাত ঘটে যায়। রাজনৈতিক অপরাধী মুক্তি পেলে সমাজ তাকে সাদরে বরণ করে নেবে, কিন্তু সাধারণ অপরাধী তার বাড়ি ছাড়া কোথাও কোনো সহানুভূতি আশাই করতে পারে না। এজন্যই সে মুক্তি পেলে সাধারণের কাছে আত্মপ্রকাশে লজ্জিত হয়।

সুতরাং এ-দিকে তার বিশেষ সতর্ক থাকাই উচিত। – কেন সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে?

কোনো মানুষ যদি বেশ কিছু সময় ধরে কারাজীবন যাপন করে থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তি দৈহিকভাবে ও মানসিকভাবে অকালবৃদ্ধ হয়ে পড়ে। বন্দিজীবন ধীরে ধীরে মানুষের মনের উপর চরম প্রভাব ফেলে থাকে। একদিকে জেলখানার খারাপ খাদ্য, ব্যায়াম বা আনন্দের অভাব যেমন দায়ী, তেমনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা, বন্ধুদের অভাব সর্বোপরি জীবনে বেঁচে থাকার স্পৃহা না থাকার বোধ ধীরে ধীরে মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। যার দরুণ ব্যক্তিমানুষটির স্বাভাবিক উচ্ছলতা কমে আসে এবং নিজস্ব এক জগতের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। আর এই সমস্ত কারণেই তাঁর দেহে ও মনে অকালবার্ধক্য দেখা যায়।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের পঞ্চবিংশ অধ্যায়, ‘জেলখানার চিঠি,’ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তরগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা মতামত জানাতে চান, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত থাকব। পোস্টটি ভালো লাগলে, এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন