আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কম্পিউটার ও আধুনিক পৃথিবী’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

কম্পিউটার ও আধুনিক পৃথিবী – প্রবন্ধ রচনা
নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র।
ভূমিকা –
মানবসভ্যতার গতিপথকে পালটে দেওয়া বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হল কম্পিউটার। মানুষের জ্ঞান এবং প্রচেষ্টার সীমানাকে বহুদূর অবধি বিস্তৃত করে দিয়েছে কম্পিউটার। পুরোনো পৃথিবীর সঙ্গে নতুনের সীমাহীন ব্যবধান তৈরি করে মানবসভ্যতার সামনে এই কম্পিউটারই হাজির করেছে এক শিহরণ জাগানো ভবিষ্যতের ছবি, যা কিছু বছর আগেও মানুষের ভাবনাচিন্তার বাইরে ছিল।
আবিষ্কার –
অনেকে মনে করেন খ্রিস্টের জন্মেরও আগে ‘অ্যাবাকাস’ নামে যে গণনাপদ্ধতি প্রচলিত ছিল তার মধ্যেই নিহিত আছে কম্পিউটারের আদি ইতিহাস। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজকে ‘কম্পিউটারের জনক’ বলা হয়। 1930 -এ হওয়ার্ড আইকেন এবং গ্রেস হপার সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী কম্পিউটার তৈরি করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে, ব্রিটেনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের দ্রুত বিবর্তন ঘটে। সেখান থেকে এখন মানবসভ্যতা এসে পৌঁছেছে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে।
ভারতে কম্পিউটার –
ভারতে 1955 খ্রিস্টাব্দে প্রথম কম্পিউটার আসে। কিন্তু আটের দশক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় স্তরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পৃথিবীতে কম্পিউটার উৎপাদনে ভারত যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে তেমন কম্পিউটার গবেষণায় ন্যাশনাল সেন্টার ফর সফটওয়্যার টেকনোলজি, টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠানগুলি নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
কম্পিউটারের প্রয়োগ –
আধুনিক সভ্যতায় কম্পিউটারের প্রয়োগ সর্বত্র। যে-কোনো হিসাবনিকাশে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মুদ্রণ শিল্পে কম্পিউটারের ব্যবহার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উপগ্রহ যোগাযোগ, যান চলাচলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা সবই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। আবার রেল-বিমানের আসন সংরক্ষণ থেকে টেলিফোন, ইলেকট্রিক বিল প্রদান-ব্যক্তিগত জীবনেও কম্পিউটারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কম্পিউটারের সাহায্যেই আন্তর্জাতিক সংযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডার চলে আসে ঘরের মধ্যে। তাই হাটে-বাজারে, অফিসে-আদালতে, স্কুল-কলেজে কম্পিউটারের আজ সর্বাত্মক ব্যবহার ঘটছে। ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, পামটপ ইত্যাদি নানা চেহারায় কম্পিউটার আজ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনযাপনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
অন্য কথা –
কম্পিউটার অসম্ভবের সীমারেখাকে প্রায় মুছে দিয়েছে। কিন্তু এই কম্পিউটারই মানুষের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়ে মানবসম্পদের সংকট তৈরি করেছে। কম্পিউটার মানুষকে শুধু যন্ত্রনির্ভরই করেনি, জীবনযাপনের অন্য উপকরণগুলি যেমন, বইপড়া, ছবি আঁকা এসব থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সিনেমা, গান ইত্যাদিকে কম্পিউটার এতটাই সহজলভ্য করে দিয়েছে যে, এদের কেন্দ্র করে যে ব্যাবসা হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘকালীন কম্পিউটারের ব্যবহার নানা শারীরিক সমস্যাকেও ডেকে আনছে।
উপসংহার –
কম্পিউটার ব্যবহারের ইতিবাচক দিকগুলি দেখলে কম্পিউটার সম্পর্কে বিরূপ ধারণাগুলিকে নিতান্তই ছোটো মনে হয়। একুশ শতকের গতিশীল পৃথিবীর কম্পিউটার কোনো অলংকার নয়, মস্তিষ্ক। তাই এর সার্থক ব্যবহার এবং উন্নতিতে আত্মনিয়োগই আধুনিক মানবসভ্যতার অনিবার্য নিয়তি। মার্কিন লেখক যোশেফ ক্যাম্পবেল হয়তো যথার্থই বলেছেন – “Computers are like Old Testament Gods; lots of rules and no mercy.”
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কম্পিউটার ও আধুনিক পৃথিবী’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘কম্পিউটার ও আধুনিক পৃথিবী’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন