এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, ‘ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)’ অধ্যায়ের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

মিশরকে ‘নীলনদের দান’ বলা হয় কেন?

প্রাচীন মিশর সভ্যতা একটি নদীমাতৃক সভ্যতা। এই সভ্যতা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দ বা তারও আগে নীলনদ উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল।

নীলনদের দান মিশর

  • কৃষির উন্নতি – মিশরের মধ্যদিয়ে নীলনদ প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী উপত্যকা বরাবর জমি ছিল পলিমাটি সমৃদ্ধ। তাই এখানকার জমি ছিল খুবই উর্বর। আবার সারাবছর নদীতে জল থাকায় এখানকার চাষিরা জমিতে জলসেচ করতে পারত। ফলে মিশর সভ্যতার চাষবাস ছিল খুবই উন্নত।
  • পশুপালন – নীলনদের অববাহিকা ও মোহানা জুড়ে অনেক বদ্বীপ ছিল। এই অঞ্চলে ঘাসের অভাব ছিল না। তাই এখানে মিশরবাসী অনায়াসে পশুপালন করতে পারত।
  • অন্যান্য দান – মিশর দেশের মাঝখান দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর নীলনদ প্রবাহিত হওয়ায় মিশরের সুদীর্ঘ এলাকা মরুভূমির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশরকে ‘নীলনদের দান’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
প্রাচীন মিশর অঞ্চল ও মিশরীয় সভ্যতার মানচিত্র
প্রাচীন মিশর অঞ্চল ও মিশরীয় সভ্যতার মানচিত্র

ভারত ও বহির্বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের যে-কোনো। একটি মাধ্যম আলোচনা করো।

অথবা, উপমহাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন কীভাবে হয়েছিল ব্যাখ্যা করো।

ভারত ও বহির্বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ছিল। যথা – রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম, অর্থনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম, সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম। নীচে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম – সাংস্কৃতিক বিনিময় উপমহাদেশের সঙ্গে বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম ছিল। বিভিন্ন জাতি-উপজাতির মেলামেশার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছিল।
  • পারস্যের সঙ্গে যোগাযোগ – পারসিক সাম্রাজ্যে প্রচলিত আরামীয় ভাষা ও লিপি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। সম্ভবত আরামীয় লিপি থেকে খরোষ্ঠী লিপি প্রচলিত হয়। দুটি লিপিই ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হত। পারসিপোলিস নগরীর পতনের পর অনেক পারসিক শিল্পী উপমহাদেশে চলে আসে এবং সম্ভবত তাদের হাত ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্দো-পারসিক স্থাপত্য রীতির বিকাশ ঘটে।
  • গ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ – আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশে বেশ কয়েকটি নগর তৈরি করেছিলেন। সেগুলিতে গ্রিকরা বসবাস করত। ধীরে ধীরে ভারতীয় উপমহাদেশের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সঙ্গে গ্রিকদের সংমিশ্রণ ঘটে। ইন্দো-গ্রিকরা উপমহাদেশে সোনার মুদ্রা চালু করে। শিল্পক্ষেত্রে গ্রিক-ভারতীয় শিল্পকলার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে গন্ধার শিল্প।
  • শক-পহ্লব ও কুষাণ সংস্কৃতি – ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের জীবনযাত্রায় শক-পহ্লব ও কুষাণদের জীবনযাপন রীতি প্রভাব ফেলেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্ম থেকে যেমন শক-পহ্লব ও কুষাণরা অনেক কিছু শিখেছিল তেমনই যুদ্ধরীতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘরবাড়ি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিনিময়ের নজির চোখে পড়ার মতো ছিল।
  • বৌদ্ধধর্ম – ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বাইরের জগতের অপর এক মাধ্যম ছিল বৌদ্ধধর্ম। এদেশ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বহু পণ্ডিত বিভিন্ন দেশে যেতেন। বাইরের দেশ থেকেও বহু শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধধর্ম ও শিক্ষার চর্চা করতে এদেশে আসতেন। এক্ষেত্রে চিনা পণ্ডিত ফাসিয়ান এবং সুয়ান জাং -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে চিন দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ঘটে এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে বৌদ্ধিক বিকাশ সম্পন্ন হয়।

ভারতে পারসিক আক্রমণের ফল কী হয়েছিল?

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকেই কাইরাস বা কুরুষের নেতৃত্বে ভারতে পারসিক আক্রমণের সূচনা হয়। তবে প্রথম দরায়বৌষই উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রকৃত পারসিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারতে পারসিক আক্রমণের ফল

  • বাণিজ্যিক সম্পর্ক – এই আক্রমণের ফলে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
  • ভাষার সমৃদ্ধি – অনেক পারসিক শব্দ ভারতীয় ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।
  • শিল্পকলার উন্নতি – ভারতীয় স্থাপত্যকলায় পারসিক রীতি প্রবেশ করে এদেশের শিল্পকলাকে উন্নত করেছে।
  • সাম্রাজ্য গঠনের ধারণা – ভারতীয় রাজারা তাদের কাছ থেকেই বড়ো সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ধারণা লাভ করে।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফল কী হয়েছিল?

অথবা, এই আক্রমণের ফলে ভারতে গ্রিক প্রভাব কী পড়েছিল?

খ্রিস্টপূর্ব 300 অব্দ নাগাদ আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। যদিও তিনি ভারতের ভিতর প্রবেশ করেননি। তবুও উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রিক আধিপত্য স্থাপিত হয়।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফল

  • গ্রিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা – উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রিক সেনাপতি সেলিউকাসের নেতৃত্বে গ্রিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • পারসিক প্রভাব বিনষ্ট – এর ফলে ভারতবর্ষে পারসিক প্রভাব বিনষ্ট হয়।
  • সাংস্কৃতিক যোগাযোগ – ভারতে গ্রিক আধিপত্যের সূত্র ধরে পাশ্চাত্যের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
  • গ্রিক ও পারসিক শিল্পের প্রভাব – কুষাণ যুগে গড়ে ওঠা গন্ধার শিল্পে গ্রিক ও পারসিক শিল্পরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মৌর্য শাসনের শেষ দিক থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বিকশিত হয়েছিল। এই যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ছিল, যথা – অর্থনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম। নীচে যোগাযোগের এই বিভিন্ন মাধ্যমগুলির পরিচয় দেওয়া হল।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম

  • অর্থনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম – খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বিশেষত মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ বিস্তৃত হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব 200 থেকে খ্রিস্টীয় 300 অব্দ সময়কালের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্থলপথ ও সমুদ্রপথে বাণিজ্য চলত। স্থলপথের বাণিজ্যিক দ্রব্যগুলির মধ্যে প্রধান ছিল রেশম। সমুদ্রপথে পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষিত হত। সমুদ্র বন্দরগুলির মধ্যে ভৃগু কচ্ছ, কোঙ্কন উপকূলবর্তী বন্দর কল্যাণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মালাবার উপকূলের বন্দরগুলি দিয়ে গোলমরিচ ও অন্যান্য মশলার বাণিজ্য চলত।
  • সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম – সাংস্কৃতিক যোগাযোগের পরিধি ছিল বহুধা বিস্তৃত। ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন জাতি-উপজাতির মেলামেশার ফলে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছিল। এ ছাড়া ভাষা ও লিপির ব্যবহার, মুদ্রার প্রচলন, ধর্ম, সমাজ-সংস্কৃতি, যুদ্ধরীতি, পোশাক প্রভৃতি সবক্ষেত্রেই মেলবন্ধন সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রক্ষা করেছিল।

ভারতে ইন্দো-গ্রিক ও শক শাসনের পরিচয় দাও।

সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সাম্রাজ্যের দ্রুত পতন হয়। এই সুযোগে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ক্রমাগত বিদেশি জাতির অনুপ্রবেশ ঘটে। এই বিদেশি জাতিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ইন্দো-গ্রিক ও শকরা।

ভারতে ইন্দো-গ্রিক ও শক শাসন

  • ইন্দো-গ্রিক শাসন – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 250 অব্দ নাগাদ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে ব্যাকট্রীয়-গ্রিক ও ইন্দো- গ্রিক শাসন শুরু হয়। গ্রিক শাসক ডিমিট্রিয়াস প্রথম দক্ষিণ আফগানিস্থান, পাঞ্জাব ও নিম্ন সিন্ধুদেশে ব্যাকট্রীয়-গ্রিক রাজত্বের সূচনা করেন। সম্ভবত ইন্দো-গ্রিক শাসক মিনান্দার, ছিলেন তাঁর পরিবারভুক্ত। মিনান্দার এর সাম্রাজ্য কাবুল ও পাঞ্জাব থেকে গুজরাটের কাথিয়াবাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাঁর রাজধানী ছিল সাকল (শিয়ালকোট)। মিলিন্দপঞহো গ্রন্থের প্রণেতা নাগসেনের কাছে তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন।
  • শক শাসন – যাযাবর শকগণ ব্যাকট্রিয়া দখল করে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি এবং পরে ভারতের অংশবিশেষে রাজত্ব শুরু করে। শক রাজারা ক্ষত্রপ ও মহাক্ষত্রপ নামে পরিচিত ছিলেন। এদের দুটি বংশ ছিল-একটি হল তক্ষশিলা ও মথুরার ক্ষত্রপ এবং অপর শাখাটি ছিল সৌরাষ্ট্রের পশ্চিমি ক্ষত্রপ। ভারতের প্রথম শক্তিশালী শক রাজা ছিলেন মোয়েস বা মোগ। তাঁর পরবর্তী শাসক ছিলেন আজেস। পশ্চিমি ক্ষত্রপদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন নহপান। উজ্জয়িনীর ক্ষত্রপদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রুদ্রদামন।

মীনান্দার – টীকা লেখো।

মিনান্দার ছিলেন একজন ইন্দো-গ্রিক শাসক। তিনি ব্যাকট্রিয়া অঞ্চলে শাসন করতেন। তিনিই ছিলেন ইন্দো-গ্রিক শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর রাজত্ব কাবুল ও পাঞ্জাব থেকে গুজরাটের কাথিয়াবাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাঁর রাজধানী ছিল সাকল বা বর্তমান শিয়ালকোট। বৌদ্ধ সাহিত্যে তাঁকে মিলিন্দ বলা হয়। বৌদ্ধপণ্ডিত নাগসেনের নিকট তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা। নেন জানা যায় যে, তিনি নাগসেনকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। সেই প্রশ্নোত্তরই ইতিহাসে মিলিন্দপঞহো নামে পরিচিত।

পহ্লব রাজা গন্ডোফারনেসের সময় কে উপমহাদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন? ভারতীয় যুদ্ধে শক, পহ্লব ও নাট্যচর্চায় গ্রিকদের কী প্রভাব পড়েছিল?

পহ্লব রাজা গন্ডোফারনেসের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন সেন্ট থমাস।

ভারতীয় যুদ্ধে শক, পহ্লব ও নাট্যচর্চায় গ্রিকদের প্রভাব

  • যুদ্ধরীতিতে শক-পহ্লবদের প্রভাব – ভারতীয়রা শক-পহ্লবদের কাছ থেকে অনেক নতুন নতুন যুদ্ধরীতি শিখেছিল। শক-পহ্লবরা যুদ্ধে ঘোড়ার ব্যবহারকে উন্নত করেছিল। তাদের হাত ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে ঘোড়ার লাগাম ও জিনের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ভারতীয়রা পহ্লব শাসকদের কাছ থেকেই চলন্ত ঘোড়ায় বসে পিছনে ঘুরে তির ছোড়ার কায়দা শিখেছিল।
  • নাট্যচর্চায় গ্রিকদের প্রভাব – ভারতীয় উপমহাদেশের নাট্যচর্চায় গ্রিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট। গ্রিকদের কাছ থেকে ভারতীয়রা নাটকের মঞ্চ বানানো, পর্দার ব্যবহার প্রভৃতি শিখেছিল। নাটকে পর্দা ফেলার প্রথা গ্রিকরাই প্রথম চালু করেছিল।

দূত বিনিময় করে কীভাবে প্রাচীন ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক গড়ে ওঠে?

প্রাচীন ভারতের অনেক রাজা ও বিদেশের বিভিন্ন রাজা পারস্পরিক দূত বিনিময় করেন। ফলে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান হয় এবং সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

দূত বিনিময়ের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক

  • গ্রিক শাসক – গ্রিক শাসক সেলিউকাস মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজদরবারে মেগাস্থিনিসকে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন।
  • মিশরের সম্রাট – মিশরের সম্রাট টলেমি ডায়োনিসিয়াসকে মৌর্য দরবারে দূত হিসেবে পাঠান। অপরপক্ষে মৌর্য সম্রাটও মিশরের রাজদরবারে দূত পাঠিয়েছিলেন।
  • সিরিয়ার শাসক – জানা যায় বিন্দুসার সিরিয়ার শাসক অ্যান্টিয়োকসের সঙ্গে এইভাবে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।
  • অন্যান্য দেশ – সম্রাট অশোক সিরিয়া, ম্যাসিডন ও সিংহলে দূত পাঠিয়েছিলেন।
  • চিনের সঙ্গে সম্পর্ক – জানা যায় হর্ষবর্ধন চিনের সঙ্গে দূত বিনিময় করেছিলেন।

মৌর্য যুগে বিদেশের সঙ্গে ভারতের কীভাবে দূত বিনিময় হত?

ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল দূত বিনিময়। দূত বিনিময় মূলত মৌর্য শাসকদের সময় থেকে শুরু হয়েছিল।

মৌর্য যুগে বিদেশের সঙ্গে ভারতের দূত বিনিময়

  • চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে দূত বিনিময় – মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে গ্রিক শাসক সেলিউকাসের দূত হিসেবে ভারতে আসেন মেগাস্থিনিস। এ ছাড়া আরেক দূত ডায়ামাকাসও মৌর্য রাজদরবারে এসেছিলেন। মৌর্য সম্রাটরাও বিদেশি শাসকদের সভায় দূত পাঠাতেন।
  • বিন্দুসারের রাজত্বে দূত বিনিময় – মৌর্য সম্রাট বিন্দুসারের সঙ্গে সিরিয়ার শাসক প্রথম অ্যান্টিয়োকসের যোগাযোগ ছিল। জানা যায়, বিন্দুসার গ্রিক রাজার কাছে কিছু জিনিস ও একজন পণ্ডিত চেয়েছিলেন। সিরিয়ার শাসকও নাকি মৌর্য সম্রাটকে উপঢৌকন স্বরূপ প্রচুর জিনিসপত্র পাঠিয়েছিলেন।
  • বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে অশোকের দূত বিনিময় – বৌদ্ধ-ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মৌর্যসম্রাট অশোক সিরিয়া, মিশর, ম্যাসিডন, সিংহল প্রভৃতি জায়গায় দূত পাঠিয়েছিলেন।

ভারতে হুন আক্রমণের পরিচয় দাও।

ভারতে হুন আক্রমণের বিশদ বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হল।

ভারতে হুন আক্রমণ

  • স্কন্দগুপ্তের সময় – আনুমানিক 458 খ্রিস্টাব্দে স্কন্দগুপ্তের রাজত্বকালে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হুনরা ভারত আক্রমণ করে। কিন্তু স্কন্দগুপ্তের তৎপরতায় হুনরা সফল হয়নি।
  • ভানুগুপ্তের সময় – পরবর্তীকালে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষ দিকে শ্বেত হুননেতা তোরমান গন্ধার, পাঞ্জাব ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ দখল করেন। রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরে তাঁর রাজত্ব শুরু করেন। তাঁর রাজধানী ছিল শিয়ালকোট। সম্ভবত 510 খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত সম্রাট ভানুগুপ্ত হুন সম্রাট তোরমানকে পরাজিত করেন।
  • যশোধর্মনের সময় – এর পরে তোরমানের পুত্র মিহিরকুল শিয়ালকোটের সিংহাসনে বসেন। তিনিও পিতার মত নিষ্ঠুর ছিলেন। মান্দাসোর লিপি থেকে জানা যায় যে, মালবরাজ যশোধর্মন মিহিরকুলকে পরাজিত করেছিলেন। তবে 533 খ্রিস্টাব্দে তিনি গুপ্তরাজ বালাদিত্যের নিকট সম্পূর্ণ পরাজিত হন এবং কাশ্মীরে পলায়ন করেন।

ভারতে হুন আক্রমণ – টীকা লেখো।

হুনরা ছিল মধ্য এশিয়ায় বর্বর রক্তপিপাসু যাযাবর জাতি। এদের দুটি ভাগ ছিল। একটি পীত হুন এবং অপরটি শ্বেত হুন। তবে শ্বেত হুনরাই ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল। এরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে তির-ধনুক নিয়ে আক্রমণ করত। গুপ্তরাজ স্কন্দগুপ্তের সময় হুনরা গুপ্ত সাম্রাজ্য আক্রমণ করে। তবে তিনি শক্তহাতে তা প্রতিরোধ করেন। এজন্য তাঁকে ‘ভারতের রক্ষাকারী’ বলা হয়। তারপর অনেকদিক উপমহাদেশে হুন অভিযান হয়নি। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষ দিকে হুন নেতা তোরমান পাঞ্জাব ও রাজপুতানায় প্রথম হুন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ভানুগুপ্তের তৎপরতায় তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর তোরমানের পুত্র মিহিরকুল ভারতে হুন আধিপত্য লাভে সচেষ্ট হন। জানা যায় যে, মিহিরকুলের এই প্রয়াস ব্যর্থ করেন মালবরাজ যশোধর্মন। এই মিহিরকুল ভারতের ইতিহাসে ‘অ্যটিলা’ নামে পরিচিত। 535 খ্রিস্টাব্দে মিহিরকুলের মৃত্যুর পর হুনগণ দুর্বল হয়ে পড়ে।

ভারতে হুন আক্রমণের ফল কী হয়েছিল?

নানা কারণে ভারতে হুন আকমণের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

ভারতে হুন আক্রমণের ফল

  • গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন – বারংবার হুন আক্রমণের ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের দ্রুত পতন হয়।
  • সম্পদধ্বংস – নিষ্ঠুর ও রক্তপিপাসু হুনদের আক্রমণে ভারতের বহু মন্দির, মঠ তথা স্থাপত্য-ভাস্কর্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
  • আঞ্চলিক রাজ্যের উদ্ভব – হুন আক্রমণের সূত্র ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে কিছু আঞ্চলিক রাজ্যের উদ্ভব হয়।
  • মিশ্রজাতির উদ্ভব – পরবর্তী সময়ে এই হুনরা ভারতীয় জনজীবনে মিশে যাওয়ার ফলে এক মিশ্রজাতির উদ্ভব হয়। যারা রাজপুত জাতি নামে খ্যাত।
  • রাজপুত শাখার উদ্ভব – ফলস্বরূপ উত্তর ভারতের নানা স্থানে প্রতিহার, পারমার, চৌহান, গাহড়বাল, চান্দেল, শোলাঙ্কি প্রভৃতি রাজপুত শাখার উদ্ভব হয়।

রাজপুত কাকে বলে?

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে খুন, গুর্জর প্রভৃতি বিদেশি জাতি ভারতীয় জনসমাজে মিশে যায়। তার ফলে যে-নতুন জাতির উদ্ভব হয় তাদের বলা হয় রাজপুত।

লিপি এবং স্থাপত্যশিল্প কীভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়েছিল?

বিভিন্ন জাতি-উপজাতিগুলির মেলামেশার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এই যোগাযোগের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হল লিপি ও স্থাপত্য।

লিপি ও স্থাপত্যশিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ

  • লিপি – বিভিন্ন জাতি একে অপরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য ঘটে। পারসিক সাম্রাজ্যে আরামীয় ভাষা ও লিপির ব্যবহার ছিল। সম্রাট অশোক ওই একই ভাষা ও লিপির ব্যবহার করতেন। খরোষ্ঠী লিপি -এর উৎপত্তি আরামীয় লিপি থেকেই হয়েছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
  • স্থাপত্য – আলেকজান্ডারের আক্রমণের ফলে পারসিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে চলে আসে। এই পারসিকদের কাছ থেকেই মৌর্যরা পাথরের উঁচু স্তম্ভ বানানোর কৌশল আয়ত্ত করেছিল। পারসিক শিল্পীদের হাতে সৃষ্টি হয় ইন্দো- পারসিক স্থাপত্যশিল্প।

প্রাচীন ভারতের কোথায় এবং কখন গন্ধার শিল্পের উদ্ভব হয়? এই শিল্পের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, ভারতীয় উপমহাদেশে গান্ধার শিল্পের বর্ণনা দাও।

খ্রিস্টপূর্ব 50 অব্দ থেকে 500 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জালালাবাদ, গন্ধার, বেগ্রাম, সোয়াট, তক্ষশীলা প্রভৃতি অঞ্চলে গন্ধার শিল্পের উদ্ভব হয়।

গন্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য

  • বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ – এই শিল্পরীতিতে সাধারণত ভগবান বুদ্ধের মূর্তি ও অন্যান্য গ্রিক দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করা হত।
  • গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় ভাস্কর্য – এর সংমিশ্রণ – এই শিল্প গড়ে উঠেছিল গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় ভাস্কর্য শিল্পীরীতির সংমিশণে।
  • বিষয়বস্তু – এই শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় বৌদ্ধধর্ম তথা বুদ্ধের মূর্তি।
  • মূর্তি নির্মাণে উপকরণ – মূর্তি নির্মাণে গন্ধার শিল্পীরা চুন, বালি, প্লাস্টার অব্ প্যারিস, পোড়ামাটি ও কালো পাথর ব্যবহার করত।
  • মূর্তির প্রকৃতি – মূর্তিগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মসৃণতা ও প্রাণবন্ততা।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, “ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন