এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।
ফোয়ারা পরীক্ষা – একটি লম্বা মুখওয়ালা গোলতল ফ্লাস্কের মধ্যে শুষ্ক অ্যামোনিয়া গ্যাস পূর্ণ করে ফ্লাস্কটির মুখে কর্কের মাধ্যমে একটি স্টপককযুক্ত লম্বা কাচনল (যার অগ্রভাগ সূঁচালো) লাগানো হয়। ফ্লাস্কটিকে উপুড় অবস্থায় স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকে কাচনলের বাইরের প্রান্তটি একটি লাল লিটমাস দ্রবণযুক্ত জলের পাত্রে ডোবানো থাকে। স্টপকক খোলা অবস্থায় ফ্লাস্কের ওপর কিছু ইথার ঢেলে বা বরফ চাপা দিয়ে ফ্লাস্কটিকে ঠান্ডা করলে ওর ভিতরের অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংকোচন হয়ে চাপের হ্রাস হয় এবং তখন বায়ুর চাপে লাল লিটমাস জল ধীরে ধীরে কাচনল দিয়ে ওপরের ফ্লাস্কে প্রবেশ করে। ফ্লাস্কের মধ্যে সামান্য জল প্রবেশ করলেই ফ্লাস্কের মধ্যের অ্যামোনিয়া ওই জলে দ্রবীভূত হয় ফলে ফ্লাস্কের ভিতর শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন বায়ুর চাপে নীচের পাত্রের লাল লিটমাস দ্রবণ দ্রুতগতিতে ফোয়ারার আকারে ফ্লাস্কের মধ্যে প্রবেশ করে এবং লাল লিটমাস নীল হয়ে যায়, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় অ্যামোনিয়া জলে খুব দ্রাব্য এবং এটির জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ফোয়ারা পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী?
এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল দুটি বিষয় প্রমাণ করা –
1. অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রবণীয়।
2. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী (ক্ষারকীয়)।
ফোয়ারা পরীক্ষায় লাল লিটমাস দ্রবণ ব্যবহার করা হয় কেন?
লাল লিটমাস একটি অম্ল নির্দেশক। ক্ষারকীয় দ্রবণের সংস্পর্শে এলে এটি নীল বর্ণ ধারণ করে। অ্যামোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষারকীয় অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH₄OH
) গঠন করায় লিটমাস লাল থেকে নীল হয়, যা এর ক্ষারকীয় প্রকৃতি প্রমাণ করে।
ফোয়ারা পরীক্ষায় ফ্লাস্কে ইথার ঢালা বা বরফ দিয়ে ঠান্ডা করা হয় কেন?
ইথার দ্রুত বাষ্পীভূত হয় বা বরফ তাপ শোষণ করে, ফলে ফ্লাস্কের ভিতরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। এর ফলে ফ্লাস্কের অভ্যন্তরে থাকা অ্যামোনিয়া গ্যাসের চাপ হ্রাস পায় (চার্লসের সূত্র অনুসারে)। এই চাপ হ্রাসের কারণে বাইরের বায়ুচাপ ফ্লাস্কের ভিতরে জল ওঠাতে বাধ্য করে।
ফোয়ারা সৃষ্টি হয় কীভাবে?
যখন ফ্লাস্কের ভেতরে অল্প পরিমাণ জল প্রবেশ করে, তখন অ্যামোনিয়া গ্যাস তাৎক্ষণিকভাবে সেই জলে দ্রবীভূত হয়। এর ফলে ফ্লাস্কের ভেতরে একটি আংশিক শূন্যতা (vacuum) সৃষ্টি হয়। বাইরের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ তখন পাত্রের লিটমাস দ্রবণকে দ্রুতগতিতে কাঁচনল দিয়ে ফ্লাস্কের ভেতরে ঠেলে দেয়, যেটি ফোয়ারা আকারে দেখা দেয়।
অ্যামোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়?
অ্যামোনিয়া জলের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড গঠন করে, যা একটি ক্ষারক। NH3(g) + H2O(l)→NH4OH(aq)
এই NH₄OH দ্রবণে OH⁻ আয়ন মুক্ত করে, যার কারণে দ্রবণটি ক্ষারধর্মী হয়।
ফোয়ারা পরীক্ষায় ফ্লাস্কটি উপুড় করে রাখা হয় কেন?
অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর চেয়ে হালকা (আণবিক ভর 17)। তাই ফ্লাস্কটি উপুড় রাখলে গ্যাসটি নিচের দিকে উড়ে যেতে পারে না এবং ফ্লাস্কের ভেতরেই থাকে। এতে পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
অ্যামোনিয়া গ্যাসের উচ্চ দ্রাব্যতার কারণ কী?
অ্যামোনিয়া (NH₃) অণু ও জল (H₂O) অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন গঠিত হয়, যা অ্যামোনিয়াকে জলে খুব সহজে দ্রবীভূত হতে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন