অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা, এটি একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা, এটি একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা, এটি একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা, এটি একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

একটি অ্যামোনিয়া পূর্ণ গ্যাসজার নিয়ে ঢাকনা সরিয়ে এর উপর একটি বায়ুপর্ণ গ্যাসজার উপুড় করে রাখা হল। কিছুক্ষণ পর ওপরের গ্যাসজারটিকে সোজা করে রেখে একটি জলে সিক্ত লাল লিটমাস কাগজ গ্যাসজারের মুখে ধরা হল। দেখা যায় যে, লাল লিটমাস কাগজের বর্ণ নীল হয়ে যায়।

ব্যাখ্যা – পরীক্ষা শুরুর মুহূর্তে নীচের গ্যাসজারে অ্যামোনিয়া ও ওপরের গ্যাসজারে বায়ু উপস্থিত ছিল। কিন্তু কিছু সময় পরে অ্যামোনিয়া, বায়ুর চেয়ে হালকা হওয়ায় ভারী বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা অ্যামোনিয়া ওপরের গ্যাস জারে প্রবেশ করে এবং বায়ু নীচের গ্যাসজারে প্রবেশ করে অ্যামোনিয়া ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় সিক্ত লাল লিটমাস কাগজ ওপরের গ্যাসজারের মুখে ধরলে সেটি নীল বর্ণে পরিণত হয়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ু অপেক্ষা হালকা – এই কথাটি কীভাবে বলতে পারি?

কোনো গ্যাসের আণবিক ভর যত কম হয়, তা সাধারণত তত হালকা হয়। বায়ু মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের মিশ্রণ, যার গড় আণবিক ভর প্রায় 29। অন্যদিকে অ্যামোনিয়ার (NH₃) আণবিক ভর 14 + (3 × 1) = 17। যেহেতু 17, 29 -এর চেয়ে কম, তাই অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা এবং এটি সহজেই বায়ুতে উপরের দিকে উঠে যেতে পারে।

পরীক্ষায় শুধু লাল লিটমাস কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে, নীল লিটমাস কাগজ ব্যবহার করা হয়নি কেন?

অ্যামোনিয়া একটি ক্ষারীয় গ্যাস। ক্ষারীয় পদার্থ লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে। এই রংয়ের পরিবর্তনই প্রমাণ করে যে গ্যাসজারটিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস পৌঁছেছে। নীল লিটমাস কাগজ ব্যবহার করলে কোনো রং পরিবর্তন হতো না, কারণ ক্ষারীয় গ্যাস নীল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন করতে পারে না। তাই শুধুমাত্র লাল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তনই এখানে যথেষ্ট।

লিটমাস কাগজটি জলে সিক্ত করে নেওয়া হয়েছিল কেন? শুকনো লিটমাস কাগজ ব্যবহার করলে কী হতো?

লিটমাস কাগজটি জলে সিক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামোনিয়া গ্যাস সরাসরি লিটমাস কাগজের রং খুব ভালোভাবে পরিবর্তন করতে পারে না। যখন এটি জলের (H₂O) সংস্পর্শে আসে, তখন অ্যামোনিয়া দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH₄OH) তৈরি করে, যা একটি ক্ষার। এই ক্ষারীয় দ্রবণই লাল লিটমাস কাগজকে নীল রঙে পরিবর্তিত করে। শুকনো লিটমাস কাগজ ব্যবহার করলে রঙের পরিবর্তন খুব ধীরে বা অস্পষ্টভাবে ঘটত।

“ভারী বায়ুর নিম্ন অপসারণ” বলতে কী বোঝায়?

এটি গ্যাস সংগ্রহ করার একটি পদ্ধতি। যে গ্যাস বায়ু অপেক্ষা হালকা, তাকে সংগ্রহ করতে পাত্রটিকে উপুড় করে রাখা হয়। হালকা গ্যাস (এক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া) উপরের দিকে উঠে যায় এবং পাত্রের নিচের দিক থেকে ভারী বায়ুকে বের করে দেয়। এটাই ভারী বায়ুর নিম্ন অপসারণ। বিপরীতে, যদি গ্যাস বায়ুর চেয়ে ভারী হয় (যেমন – CO₂), তবে পাত্র সোজা রাখা হয়, গ্যাসটি নিচে জমা হয় এবং হালকা বায়ুকে উপরে ঠেলে দেয়।

অ্যামোনিয়া গ্যাসের অন্য কোনো ধর্মের মাধ্যমে কি একই প্রমাণ করা যেত?

হ্যাঁ, অন্য পরীক্ষার মাধ্যমেও এর হালকা প্রকৃতি প্রমাণ করা যেত। যেমন, একটি বেলুনে অ্যামোনিয়া গ্যাস ভরে ছেড়ে দিলে সেটি সোজা উপরে উঠে যেত, যা প্রমাণ করে এটি বায়ুর চেয়ে হালকা। তবে প্রদত্ত পরীক্ষাটি একইসাথে অ্যামোনিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম—হালকা হওয়া এবং ক্ষারীয় প্রকৃতি—খুব সহজ ও স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।

অ্যামোনিয়া গ্যাস যদি বায়ু অপেক্ষা হালকা না হয়ে ভারী হতো, তাহলে এই পরীক্ষার ফলাফল কী হতো?

যদি অ্যামোনিয়া ভারী হতো, তাহলে তা নিচের গ্যাসজারেই থেকে যেত এবং উপরের গ্যাসজারে উঠতে পারত না। ফলে উপরের গ্যাসজারের মুখে লিটমাস কাগজ ধরলে কোনো রঙ পরিবর্তন হতো না। লিটমাস কাগজ তার লাল রঙ-ই ধরে রাখত।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া বায়ু অপেক্ষা হালকা, এটি একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুটি বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় একটি ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাস উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন গ্যাসটি লঘু HCl -এ সিক্ত কাচদণ্ডের সংস্পর্শে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। গ্যাস তিনটিকে শনাক্ত করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

অ্যামোনিয়ার প্রধান ভৌত ধর্মগুলি লেখো। অ্যামোনিয়ার ব্যবহার উল্লেখ করো।