এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া অণুর ইলেকট্রন ডট গঠন দেখাও। অথবা, লুইস -এর ধারণা অনুসারে সমযোজী বন্ধন কীভাবে গঠিত হয় একটি উদাহরণ দিয়ে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামোনিয়া অণুর ইলেকট্রন ডট গঠন দেখাও।
অথবা, লুইস -এর ধারণা অনুসারে সমযোজী বন্ধন কীভাবে গঠিত হয় একটি উদাহরণ দিয়ে লেখো।
অ্যামোনিয়া (NH3) অণুর গঠন – নাইট্রোজেন (7N) পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 5। N-পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 5টি ইলেকট্রন থাকে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যামোনিয়া (NH3) অণু কীভাবে গঠিত হয়?
অ্যামোনিয়া অণু গঠনের জন্য একটি নাইট্রোজেন (N) পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর প্রয়োজন হয়।
1. নাইট্রোজেনের (N) ইলেকট্রন বিন্যাস হলো 2, 5। এর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে 5টি ইলেকট্রন থাকে। অষ্টক পূরণের জন্য এর আরও 3টি ইলেকট্রন প্রয়োজন।
2. হাইড্রোজেনের (H) একটি মাত্র ইলেকট্রন থাকে। দ্বৈত পূরণের জন্য এর আরও 1টি ইলেকট্রন প্রয়োজন।
ফলে, একটি নাইট্রোজেন পরমাণু তার 3টি যোজক ইলেকট্রনকে তিনটি পৃথক হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে শেয়ার করে 3টি একক সমযোজী বন্ধন তৈরি করে। এর মাধ্যমে নাইট্রোজেনের অষ্টক এবং প্রতিটি হাইড্রোজেনের দ্বৈত পূর্ণ হয়, এবং একটি স্থিতিশীল অ্যামোনিয়া (NH3) অণু গঠিত হয়।
নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় (Lone Pair) কী?
সমযোজী বন্ধন গঠনের পর, পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষের যে ইলেকট্রন জোড় বন্ধনে অংশগ্রহণ করে না, তাকে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় বা লোন পেয়ার বলা হয়।
অ্যামোনিয়া অণুতে, নাইট্রোজেন পরমাণুর 5টি যোজক ইলেকট্রনের মধ্যে 3টি হাইড্রোজেনের সাথে বন্ধন তৈরি করে। বাকি 2টি ইলেকট্রন একটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় হিসেবে নাইট্রোজেন পরমাণুর উপর থেকে যায়। এই নিঃসঙ্গ জোড় অ্যামোনিয়ার রাসায়নিক ধর্মের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
অ্যামোনিয়া অণুর আসল আকৃতি কেমন?
অ্যামোনিয়া অণুর লুইস ডট গঠন সমতল দেখালেও, এর আসল ত্রি-মাত্রিক (3D) আকৃতি হলো ত্রিকোণীয় পিরামিডীয় (Trigonal Pyramidal)।
নাইট্রোজেন পরমাণুর উপর থাকা নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড়টি বন্ধনে থাকা ইলেকট্রন জোড়গুলোকে বিকর্ষণ করে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। এর ফলে, H-N-H বন্ধন কোণ আদর্শ চতুষ্তলকীয় কোণ (109.5°) থেকে কমে গিয়ে প্রায় 107° হয়।
অ্যামোনিয়াকে ক্ষার বলা হয় কেন?
অ্যামোনিয়া একটি ক্ষার কারণ এটি লুইস তত্ত্ব (Lewis theory) অনুযায়ী কাজ করে। লুইস তত্ত্ব অনুসারে, যে পদার্থ ইলেকট্রন জোড় দান করতে পারে, তাকে ক্ষার বলে।
অ্যামোনিয়ার নাইট্রোজেন পরমাণুর উপর একজোড়া নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন (lone pair) থাকে, যা এটি সহজেই কোনো ইলেকট্রন ঘাটতিযুক্ত পদার্থকে (যেমন – প্রোটন H+) দান করতে পারে। এই ইলেকট্রন জোড় দান করার ক্ষমতার জন্যই অ্যামোনিয়া ক্ষারধর্মী।
অ্যামোনিয়ার কয়েকটি প্রধান ব্যবহার কী কী?
অ্যামোনিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ। এর কয়েকটি প্রধান ব্যবহার হল –
1. সার উৎপাদনে – ইউরিয়া এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার তৈরিতে এটি প্রধান উপাদান।
2. শিল্পক্ষেত্রে – নাইট্রিক অ্যাসিড, নাইলন এবং বিভিন্ন প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
3. হিমায়ক হিসেবে – রেফ্রিজারেটর এবং কোল্ড স্টোরেজে হিমায়ক (refrigerant) গ্যাস হিসেবে এর ব্যবহার আছে।
4. পরিষ্কারক হিসেবে – এটি গৃহস্থালির বিভিন্ন পরিষ্কারক দ্রব্যে (household cleaner) ব্যবহৃত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়া অণুর ইলেকট্রন ডট গঠন দেখাও। অথবা, লুইস -এর ধারণা অনুসারে সমযোজী বন্ধন কীভাবে গঠিত হয় একটি উদাহরণ দিয়ে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন